অসচেতনতায় বাড়ছে কোষ্ঠকাঠিন্য, জেনে নিন প্রতিরোধের উপায়
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ০৬:৪৪ PM , আপডেট: ২৪ মে ২০২৫, ০৭:৫২ PM
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অস্বস্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্যসমস্যা, যা অনেকের দৈনন্দিন জীবনে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা টয়লেটে বসে থাকেন, কিন্তু পেট পরিষ্কার হয় না। যারা এ সমস্যায় ভোগেন, তাদের কাছে এটি এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, যদি মলত্যাগ সপ্তাহে তিনবারের কম হয়, অথবা মলের পরিমাণ খুব কম ও অস্বাভাবিকভাবে শক্ত বা শুকনো হয়, কিংবা দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পরেও মলত্যাগ সম্ভব না হয়, তাহলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই সমস্যার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে প্রথমেই প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং সচেতন জীবনযাপন।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি ও তরল পানীয় গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। গোটা শস্য, শাকসবজি এবং ফলমূল—বিশেষত বেল ও পেঁপের মতো ফল—দেহে প্রাকৃতিকভাবে মলত্যাগ সহজ করতে সাহায্য করে।
শুধু খাবারই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও নজর দেওয়া জরুরি। দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়তে পারে। তাই যতটা সম্ভব চাপমুক্ত জীবনযাপন করা এবং মল চেপে না রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়ামও উপকারে আসে।
অনেকে ঘরোয়া সমাধান হিসেবে ইসবগুলের ভুসি, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর ব্যবহার করে থাকেন, যা অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে থাকে। তবে সবকিছুর পরও যদি সমস্যা থেকেই যায়, তাহলে পর্যালোচনা করে দেখা উচিত, আপনি কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করছেন কি না। কারণ, কিছু ওষুধ যেমন—আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক, আয়রন বা ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট—কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ হতে পারে।
এছাড়াও খাদ্য তালিকা থেকে কফি, পিৎজা, ফাস্ট ফুড, পাস্তা, চকলেট, ভাজাপোড়া খাবার, লাল মাংস, চিপস এবং বেকারি পণ্য যেমন কেক বা পেস্ট্রি কমিয়ে আনাই শ্রেয়। আয়রন ক্যাপসুল এবং কাঁচাকলার অতিরিক্ত সেবন থেকেও বিরত থাকা ভালো।
যদি এসব পরিবর্তনের পরেও উপশম না আসে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা যেতে পারে, তবে তা নিয়মিত বা মাত্রাতিরিক্ত সেবন করা উচিত নয়। এতে মলদ্বারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য যদি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে, তবে তা থেকে পাইলস, ফিস্টুলা, অ্যানাল ফিশার, প্রস্রাবের জটিলতা, মলদ্বার বাইরে চলে আসা (রেক্টাল প্রোলাপস), অন্ত্রের অবরোধ, পেটব্যথা, অরুচি ও ক্ষুধামান্দ্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অবহেলা না করে নির্ধারিত কিছু শারীরিক পরীক্ষা করা উচিত। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক সময় থাইরয়েডজনিত রোগ, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি, পার্কিনসনস ডিজিজ, মলাশয়ের ক্যানসার বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের মতো গুরুতর রোগের উপসর্গও হতে পারে।
অবশেষে, মনে রাখতে হবে—স্বাস্থ্যবান জীবন শুরু হয় পেট ভালো থাকলে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যকে অবহেলা না করে, প্রয়োজনমতো খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ও মানসিক যত্ন এবং চিকিৎসা গ্রহণের মধ্য দিয়েই এ সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব।