ফুসফুসের সমস্যায় আকুপ্রেশারের ভূমিকা

ফুসফুসের সমস্যায় আকুপ্রেশার
ফুসফুসের সমস্যায় আকুপ্রেশার  © সংগৃহীত

ফুসফুস হল শ্বাসতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শ্বাসতন্ত্রের প্রধান কাজ হলো বাতাস থেকে অক্সিজেন শোষণ করে রক্তে প্রবাহিত করা এবং রক্ত থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে বাতাসে নিঃসরণ করা। এই গ্যাসের আদান-প্রদান হয় বিশেষায়িত অত্যন্ত পাতলা দেয়ালের তৈরি লক্ষাধিক ছোট ছোট বায়ু থলির মাধ্যমে, যাদের নাম অ্যালভিওলাই। ফুসফুস শুধু শ্বাসপ্রশ্বাসের কাজই করে না, এটি রক্তে ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে।

শিরায় জমে থাকা ক্ষতিকর ছোট রক্তকণিকাগুলো অপসারণ করতেও ফুসফুস সাহায্য করে। এছাড়াও, ফুসফুস নরম একটি স্তর দিয়ে হৃদযন্ত্রকে ঘিরে রেখে তার সুরক্ষা প্রদান করে। এটি মানুষের ভেন্টিলেটরের মতো কাজ করে, যা জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করে, দূষিত রক্ত পরিষ্কার করে ও শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখে।

ফুসফুসের রোগ ও সমস্যা ও আকুপ্রেশারের ভূমিকা
আজকের আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি আকুপ্রেশার একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে পরিচিত, যা নিয়মিত করলে ওষুধ ছাড়াই ফুসফুসের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আকুপ্রেশার পয়েন্টগুলো সহজেই শেখা যায়, যার মাধ্যমে নিজেও নিজে এই থেরাপি প্রয়োগ করা সম্ভব। নিয়মিত আকুপ্রেশার ফুসফুস সতেজ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

ফুসফুসের সাধারণ সমস্যা যেমন ব্রঙ্কাইটিস, কাশি, হাঁপানি, রক্তকাশি, শ্বাসকষ্ট, ডিফথেরিয়া, বুকে ব্যথা সহ নানা ধরনের অসুখের পাশাপাশি ফুসফুসের ক্যানসারও মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

অ্যাজমা এবং সিওপিডি
অ্যাজমা বা হাঁপানি দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, যা বংশগত হলেও ধূমপান, অ্যালার্জি ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে বেশি হয়। একবার হলে পুরোপুরি নিরাময় হয় না, তবে চিকিৎসা ও নিয়ম মেনে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবাহ কমিয়ে দেয়, ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। এই রোগে আক্রান্ত অনেকেই মানসিক কষ্ট ও উদ্বেগে ভোগেন।

শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও যক্ষ্মা
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রধানত উচ্চ ও নিম্ন শ্বসনতন্ত্রের রোগ হিসেবে ভাগ করা হয়। টনসিলাইটিস, ল্যারিনজাইটিস, সাইনোসাইটিস, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি ইত্যাদি সাধারণ রোগের মধ্যে পড়ে।

বাংলাদেশে যক্ষ্মা ফুসফুসের অন্যতম প্রধান রোগ। যক্ষ্মা খুবই ছোঁয়াচে, এক রোগী সহজেই অন্যদেরও আক্রান্ত করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যক্ষ্মা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে।

কোভিড পরবর্তী ফুসফুসের জটিলতা
কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়া অনেক রোগীর ফুসফুসে পালমোনারি ফাইব্রোসিস হয়ে থাকে, যার ফলে ফুসফুসের ক্ষমতা কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

আকুপ্রেশারের নিয়ম ও কিছু ঘরোয়া উপায়
আকুপ্রেশার শুরুতে দুই হাতে তালু ভালো করে ঘষতে হয় যতক্ষণ না হাত গরম হয়। এরপর আঙুলের ডগায় ও হাতের তালুর নির্দিষ্ট পয়েন্টে চাপ দিয়ে আকুপ্রেশার করতে হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে এই থেরাপি করা উচিত। নিয়মিত আকুপ্রেশার এক মাসের মধ্যেই উপকার দেবে।

খাদ্যতালিকায় হলুদ, আদা ও পুদিনার চা শ্বাসতন্ত্রের জন্য বিশেষ উপকারী। হলুদে থাকা কারকিউমিন ফুসফুস পরিষ্কার করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আদার প্রদাহরোধী উপাদান ঠান্ডা ও কাশির সমস্যা কমায়, আর পুদিনার চা শ্লেষ্মা ও গলাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ফুসফুসের যত্নে পরামর্শ
শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যক্রমকে শক্তিশালী রাখতে ধূমপান, ধোঁয়া ও ধুলিকণা থেকে দূরে থাকতে হবে। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম যেমন যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম নিয়মিত করা প্রয়োজন। ঠান্ডা খাবার পরিহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শ্বাস হচ্ছে মানুষের আয়ুর কাউন্টডাউন, তাই শ্বাস কম হলেও জীবন ভালোভাবে চলতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ