মানসিক রোগ নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা: চিকিৎসকরা কী বলেন?

মানসিক রোগ
মানসিক রোগ  © এআই দিয়ে তৈরি

দেশে এখনো মানসিক রোগ সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর না করলে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

অনেকেই এখনো মনে করেন, মানসিক রোগ মৃত আত্মা বা শয়তানের প্রভাব থেকে হয় এবং তা ঝাড়ফুঁক, তাবিজ বা মন্ত্রের মাধ্যমে সারানো যায়। অথচ বাস্তবে মানসিক রোগ জৈবিক, মানসিক ও পরিবেশগত নানা উপাদানের সংমিশ্রণে হয়ে থাকে এবং এর চিকিৎসাও বৈজ্ঞানিকভাবে ওষুধ, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে করা সম্ভব।

একটি ভুল ধারণা হলো—মানসিক রোগ বলে কিছু নেই বা এটি দুর্বল ব্যক্তিত্ব কিংবা চারিত্রিক দোষের ফল। অথচ বাস্তবে মানসিক রোগ অন্যান্য শারীরিক রোগের মতোই বাস্তব, যার পেছনে মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা, পারিবারিক ইতিহাস, মানসিক আঘাত ও নানা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা কাজ করে।

আরেকটি প্রচলিত ধারণা হলো, মানসিক রোগ কেবল দরিদ্র বা দুর্বল শ্রেণির মানুষের হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স, লিঙ্গ, আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে যে কারও মাঝেই এই রোগ দেখা দিতে পারে। এমনকি শিশুদের মধ্যেও মানসিক রোগের লক্ষণ দেখা দেয় এবং প্রায় অর্ধেক রোগের শুরু ঘটে ১৪ বছর বয়সের আগেই। শিশুরা যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায়, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অনেক স্বাস্থ্যকর হতে পারে।

এ ছাড়া অনেকেই মনে করেন, মানসিক রোগীরা সব সময় আক্রমণাত্মক বা অকর্মক্ষম হন, যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেন এবং অনেকক্ষেত্রে উচ্চ কর্মদক্ষতাও দেখান। মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কাজ করতে পারেন, মানসিক চাপও নিতে পারেন, যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পান।

আরও একটি বড় ভুল ধারণা হলো, মানসিক রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বা একবার ওষুধ শুরু করলে তা সারাজীবন চালাতে হয়। অথচ রোগের ধরন অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসা যথেষ্ট, আবার কিছু গুরুতর রোগে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। সবক্ষেত্রেই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

পরিবার ও কাছের মানুষদের সহানুভূতি ও সহযোগিতা রোগীর দ্রুত সেরে ওঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক তথ্য দেওয়া, সাহস ও সমর্থন জোগানো, রোগীকে অসম্মানজনক শব্দ বা আচরণ থেকে রক্ষা করা—এসব কিছুই মানসিক রোগ মোকাবিলায় কার্যকর।

পেশাদার সাইকোথেরাপিস্ট বা সাইকোলজিস্টের ভূমিকা বন্ধুবান্ধবের কথার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর, কারণ তাঁরা রোগের গভীরে গিয়ে গঠনমূলক সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে পারেন। আবার অনেকেই মনে করেন, কেবল ওষুধেই মানসিক রোগের চিকিৎসা হয়, অথচ অনেক রোগেই শুধু সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং-ই যথেষ্ট।

সবশেষে, মানসিক রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়—এমন ধারণাও অমূলক। বরং ইতিবাচক পরিবেশ, সামাজিক সমর্থন ও শিশুদের ভালোবাসাপূর্ণ শৈশব মানসিক রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক রোগের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে পেশাদারদের সাহায্য নেওয়া উচিত। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে মানসিক রোগীও স্বাভাবিক, সুন্দর ও কর্মক্ষম জীবন যাপন করতে পারেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence