গরমে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয়

জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে রোগীরা
জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে রোগীরা  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গরমের তীব্রতায় জ্বর, সর্দি-কাশি ও গা-ব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। এই সংক্রমণের পেছনে অ্যাডেনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ বিভিন্ন ভাইরাস দায়ী যা মূলত হাঁচি, কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়। ভাইরাসযুক্ত ড্রপলেট বাতাসে ভাসমান থেকে সহজেই অন্যদের সংক্রমিত করে থাকে। তাই এই সময়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, সিজনাল ফল বেশি খাওয়া এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। 

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ডা. পিয়াস পাল বলেন, এই ধরনের জ্বর সাধারণত ভাইরাসজনিত হয়ে থাকে। এ সময় আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, গা-ব্যথা, সর্দি ও দুর্বলতা দেখা দেয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সংক্রমণের পেছনে বিভিন্ন ভাইরাস কাজ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যাডেনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভাইরাস। এসব ভাইরাস সাধারণত হাঁচি-কাশি বা সংস্পর্শের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: ভারতের প্রেসক্রিপশনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ: সাদিক কায়েম

কয়েকজন চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে বলেন, এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পানি পান করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তারা বলছেন, সাধারণত মৌসুমি পরিবর্তনের সময়—যেমন বর্ষা শুরু, শীত শুরু বা শীত শেষে—এ ধরনের ভাইরাসের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। 

যাদের বেশি হয়
সাধারণত শিশু ও বয়স্কদের এই ভাইরাসজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। যদিও যুবকরা এতে আক্রান্ত হন। তবে তুলনামূলকভাবে শিশু ও বয়স্কদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি দেখা যায়।

যেভাবে ছড়ায়
এই ভাইরাসগুলো মূলত কমিউনিটির মধ্যে ছড়ায়। হাঁচি, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাস কিংবা নাক-মুখ থেকে বের হওয়া ড্রপলেটের মাধ্যমে এটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস—যেমন টেবিল, চেয়ার, কলম বা পানির মগে ভাইরাসটি লেগে থাকতে পারে। অন্য কেউ তা স্পর্শ করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়
সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন কলম, পানির মগ, টেবিল, মোবাইল ফোন ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি পোশাক-পরিচ্ছেদও পরিষ্কার রাখা উচিত যাতে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা কমে।

আরও পড়ুন: ‘পদত্যাগ করাতে হাসিনার পা ধরেছিলেন রেহানা’

আক্রান্ত ব্যক্তির করণীয়
সাধারণত ভাইরাসজনিত এই জ্বর ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে  জ্বরই প্রধান উপসর্গ হিসেবে থাকে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল দেওয়া হয়ে থাকে। এই সময় বিশ্রাম নেওয়া ও সিজনাল বা মৌসুমি ফল বেশি করে খাওয়া জরুরি। কারণ এসব ফলে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি।

ডা. পিয়াস পাল বলেন, সংক্রমণ এড়াতে হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা আক্রান্ত তারা যদি মুখে মাস্ক ব্যবহার করেন, তাহলে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।এছাড়াও চোখ, মুখ ও নাকে অপ্রয়োজনে হাত না দেওয়া উচিত। কারণ এসব অঙ্গ দিয়ে ভাইরাস সহজে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধে পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। একই সঙ্গে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়ক।


সর্বশেষ সংবাদ