দরিদ্র দেশও পাবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন

  © ফাইল ফটো

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় পুরো বিশ্ব মুখিয়ে থাকলেও ঠিক কবে নাগাদ তা আসবে কেউ বলতে পারে না। এদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে বহু প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও, সাধারণ মানুষের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে আশার আলো দেখাচ্ছে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজভিত্তিক ব্রিটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ও বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে সহায়তাকারী তিনটি সংস্থার চুক্তি।

গত বৃহস্পতিবার অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও ব্যাপক পরিসরে পাওয়ার পরবর্তী ধাপে নিয়ে গেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। বিশ্বে করোনার টিকা সরবরাহের লক্ষ্যে গ্লোবাল অ্যাকশন ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি), কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন্স (সেপি) ও সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে (এসআইআই) অ্যাস্ট্রাজেনেকার চুক্তি হয়েছে। এর আওতায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত করোনার সম্ভাব্য টিকা অনুমোদন পেলেই অ্যাস্ট্রাজেনেকা ২০০ কোটি ডোজ উৎপাদন করবে। এর মধ্যে ১০০ কোটি সরবরাহ করা হবে বিশ্বের দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার আশা, আগামী আগস্ট মাস নাগাদ অক্সফোর্ডের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ‘ট্রায়াল’ (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) শেষ হলেই তা অনুমোদন পর্যায়ে যাবে। এরপর সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ সম্ভাব্য সেই ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু হতে পারে। তবে প্রথম দিকের ৪০ কোটি ভ্যাকসিন পাবে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের সেন্টার ফর ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের এপিডেমিওলস্টি ডক্টর দিলরুবা নাসরিন গত সপ্তাহে বলেছিলেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ১০০ কোটি ভ্যাকসিন দিতে হবে যুক্তরাজ্যকে। তিনি আরো বলেছিলেন, গ্যাভি পুরো বিশ্বকে একসঙ্গে ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

জানা গেছে, ওই চেষ্টার অগ্রগতি হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে গ্যাভি, সেপি ও এসআইআইর চুক্তি হয়েছে। বিনিয়োগকারী, উৎপাদনকারী, সরবরাহকার সবার দৃষ্টি বেশ কিছু ল্যাবরেটরির দিকে। নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারি থেকে বিশ্বকে রক্ষায় টিকা উদ্ভাবনে তোড়জোড় চলছে। আর এরই মধ্যে শীর্ষ ১০ প্রতিযোগীর মধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ‘ফেজ থ্রির’ (অনুমোদনের আগে তিনটি ধাপের শেষ ধাপ) খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।

জানা গেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিনটির নাম ‘এজেডডি১২২২’। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট ‘এজেডডি১২২২’ উদ্ভাবনে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য টিকা গ্রহণে আগ্রহী প্রায় ১০ হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির শরীরে বর্তমানে ‘এজেডডি১২২২’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, তাদের টিকা এখন পর্যন্ত ‘নিরাপদ ও সহিষ্ণু’ বলেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে সম্ভাব্য ১০টি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ‘ফেজ থ্রি’তে যাবার ব্যাপারে আশাবাদী। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, আগামী দেড় বছরের মধ্যে টিকা পাওয়ার চিন্তা বড্ড বাড়াবাড়ি। তবে অনেকে আবার বলছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ কয়েক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব হতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ