বাংলাদেশে করোনার নমুনা পরীক্ষার হার কম যে কারণে?

  © বিবিসি

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হবার ৪২ দিন পর দেখা যাচ্ছে, দেশে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও, এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ হাজারের মত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।আর পরীক্ষা করা হচ্ছে ২১টি কেন্দ্রে, কিন্তু হটস্পট ঘোষণা করা হয়েছে এমন অনেক জায়গাতেও পরীক্ষা কেন্দ্র নেই।

জ্বর, সর্দি-কাশিসহ নানা উপসর্গ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের দেয়া টেলিফোন হটলাইন নম্বরে এ পর্যন্ত ২৯ লাখের বেশি কল এসেছে। এর বাইরে মোবাইল ও ইন্টারনেটে ১৩ লাখ ১১ হাজার মানুষ যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও নমুনা পরীক্ষার হার অত্যন্ত কম।

বাংলাদেশে শুরু থেকে কেবলমাত্র আইইডিসিআরে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হত।সমালোচনার মুখে মাত্র এপ্রিল মাসেই আইইডিসিআরের বাইরে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। এই মূহুর্তে মাত্র ২১টি কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বুধবার আরো তিনটি কেন্দ্র চালু হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর দাবি করছে, আগের তুলনায় নমুনা পরীক্ষার অনেক গুন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেটি যে এখনো যথেষ্ট নয়, তা স্বীকার করে নিয়ে অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, চেষ্টা করা হচ্ছে নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বিবিসিকে বলেছেন, এপ্রিল মাসের প্রথম দিনে ২৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল, আর গত ২৪ ঘণ্টায় মোট দুই হাজার ৯৭৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

কিন্তু হটলাইন নম্বর চালুর পর লাখ লাখ ফোন কল পাবার পরেও নমুনা পরীক্ষার হার এত কম কেন, সে প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক তাহমিনা বলছেন, সতর্কতার সাথে নমুনা পরীক্ষা করা যাবে এমন পরীক্ষাগারের স্বল্পতার কারণেই মূলত অল্প কিছু জায়গায় পরীক্ষা হচ্ছে।

‘বায়োসেফটি এবং বায়োসিকিউরিটি বজায় রেখে নমুনা পরীক্ষা করা যাবে, একই সঙ্গে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে না, এবং পরীক্ষার ফল নিখুঁত হবে, এমন অনেকগুলো বিষয় নিশ্চিত করে পলিমেরেজ চেইন রিয়্যাকশন মানে পিসিআর পরীক্ষা করতে হয়। পিসিআরের মত সফস্টিকেটেড পরীক্ষার জন্য যে ল্যাব লাগে সেটা বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে নিশ্চিত করা খুবই কঠিন একটি ব্যাপার।’

‘তাছাড়া এরকম একটি পরীক্ষা যেখানে সেখানে করলে পরীক্ষার ফল ভুল হতে পারে, যারা পরীক্ষা করছে তারা সংক্রমিত হতে পারে এবং যারা নমুনা সংগ্রহ করছেন, তারাও আক্রান্ত হতে পারেন---এমন আশংকা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ানোর আগে আমাদের সতর্ক হতে হয়।’

বাংলাদেশের মত কম সম্পদশালী একটি দেশে দ্রুত পরীক্ষাগার বাড়ানোকে তিনি কঠিন বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, তারপরেও সরকার চেষ্টা করছে। তবে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় হটস্পট ঘোষণা করা হয়েছে এমন অনেক জায়গাতেই এখনো কোন পরীক্ষা কেন্দ্র নেই। যেমন নারায়ণগঞ্জকে হটস্পট ঘোষণার পর আট তারিখ থেকে সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর লকডাউন শুরু হয়। কিন্তু এখনো সেখানে কোন করোনাভাইরাস পরীক্ষার কেন্দ্র নেই।

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হবার খবর জানা যায়। তারো আগে থেকে আইইডিসিআর নিয়মিত করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। তার পাশাপাশি কয়েকটি হটলাইন নম্বর দিয়ে বলা হচ্ছিল করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ওই নম্বরগুলোতে ফোন করে সংস্থাটিকে জানাতে, যাতে অসুস্থ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে ফোন দিয়ে অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করাতে সফল হচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওঠে। ২১ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৯ হাজার ৫৭৮জনের। খবর: বিবিসি বাংলা।


সর্বশেষ সংবাদ