সরিষার তেলে যত উপকার

শীতকাল আসলেই বেড়ে যায় সরিষার তেলের কদর। গোসলের পর অনেকেই সারা গায়ে মাখেন এ তেল। আবার ভর্তাজাতীয় খাবারে সরিষার তেলের বিকল্প নেই। বিশেষ কিছু খাবারকে সুস্বাদু করতেও সরিষার তেল ব্যবহার হয়ে থাকে। সবাই সরিষার তেল ব্যবহার করলেও এর গুণাগুণ বা উপকারিকা-অপকারিতা নিয়ে কেউেই তেমন ভাবেন না। আসুন জেনে নেই এই ভোজ্যতেলের গুণাগুণ।

সরিষার তেলে ১৯২৭ ক্যালরি থাকে। এক কাপ তেলে চর্বি থাকে ২১৮ গ্রাম। এর গুণ যেমন রান্নার ক্ষেত্রে রয়েছে, তেমনি প্রতিদিনের অনেক ছোটখাটো সমস্যায় এর প্রয়োগ আছে। সরিষার তেলে আছে প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান, যা আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এর মধ্যে আছে প্রোটিন, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ওমেগা, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পরিমাণমতো ভিটামিন এ।

ফলে বুঝতেই পারছেন, সরিষার তেল ত্বক ভালো রাখার জন্য কতটা দরকারি। ত্বকের ব্রণ হোক বা ট্যান পড়া, সব ক্ষেত্রেই সরিষার তেল কাজে দেবে। অল্প পরিমাণে সরিষার তেল হাতে নিয়ে ভালো করে মালিশ করুন আপনার ট্যান পড়া জায়গায়। তারপর তুলা পানিতে ভিজিয়ে আস্তে আস্তে মুছে নিন। কিছুদিনের মধ্যেই চোখে পড়ার মতো উপকার দেখতে পাবেন।

সরিষা তেলের পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন ও মিনারেল চুলের অকালপক্বতা রোধ করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সরিষার তেল মালিশ করুন চুল এবং মাথার তালুতে। এটি আপনার চুল পাকা রোধ করবে।

এছাড়া, সরিষা তেলে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন আছে। এটি নিয়মিত মাথার তালুতে মালিশ করার ফলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এই তেল আয়রন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উৎস, যা চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

অনেকে মুখের কালো দাগ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। ব্রণ কমে গেলেও দাগ থেকে যায় কারও কারও। এসবেরও সহজ সমাধান আছে। দুই চামচ সরিষার তেল নিয়ে তার মধ্যে এক চামচ নারকেল তেল মেশান। এর মধ্যে এক চামচ লেবুর রস আর দুই চামচ টক দই দিয়ে একটা প্যাক বানিয়ে মুখে মাখুন। মিনিট দশেক পর ধুয়ে ফেলুন। শুধু দাগ যাবে না, সঙ্গে মুখের জেল্লা বাড়বে।

আমাদের চেনা পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা আর্থ্রাইটিস রোগে ভুগছেন। ব্যথায় অনেকেই জর্জরিত। পেইনকিলার নিয়ে দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন। এর থেকে নিরাময়ের জন্য একবার অতি পরিচিত এই তেলের ওপর বিশ্বাস করে দেখতে পারেন। সরিষার তেল আর আদা—এই দুটিতেই এমন উপাদান থাকে, যা প্রদাহজনিত উৎসেচকের ক্রিয়ার গতি কমিয়ে তোলে। ফলে ব্যথার থেকে আরাম পাওয়া যায়। জয়েন্টের ব্যথার হাত থেকে নিরাময় পেতে সরিষার তেলে পরিমাণমতো কর্পূর মেশান। তেল গরম করে ঠান্ডা হতে দিন। এবার সেই তেল দিয়ে মালিশ করুন। আরাম পাবেন।

ক্ষুধার ওপর সুস্বাস্থ্য অনেকটা নির্ভর করে। পাকস্থলীর পাচক রস উদ্দীপিত করার মাধ্যমে ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সরিষার তেল। যাঁদের ক্ষুধার সমস্যা আছে, তাঁরা রান্নায় সরিষায় তেল ব্যবহার করতে পারেন।

যাঁদের হার্টের সমস্যা আছে, তাঁদের আজকাল ডাক্তাররা তেল খেতে বারণ করেন। অনেকে বিকল্প হিসেবে নারকেল, সয়াবিন বা জলপাই তেল দিয়ে রান্না করেন। তবে পরিমিত পরিমাণে খেলে সরিষার তেল এগুলো থেকে অনেকটাই ভালো। এতে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। ফলে আপনার কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে তোলে।

সরিষার তেল আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়, তার দিকে নজর রাখে। ফলে শরীর ঠিক থাকে এবং আমাদের শরীরের সারা দিনের ক্লান্তি ভরা পেশিগুলো উজ্জীবিত এবং সবল রাখে। একই সঙ্গে এই তেল শুধু আমাদের কোলেস্টেরল কমায় না, সঙ্গে লোহিত রক্তকণিকার গঠনে ভূমিকা রাখে।

ছোটখাটো ঠান্ডা আমাদের সবারই লাগে। তার জন্য আমরা কেউ ডাক্তারের কাছে যাই না। সরিষার তেল ঠান্ডা লাগার কষ্ট থেকে বাঁচায়। দুই হাতে তেল নিয়ে ভালো করে বুকে মালিশ করুন। আরাম তো পাবেন, সঙ্গে বুকের জমা কফ বেরোতে বা কমতে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে বন্ধ নাক খোলার জন্য এক বাটি পানিতে কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল ফেলুন। এবার পানি একটু গরম করে ভাপ নিন। দেখবেন বন্ধ নাক খুলে গেছে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বুকে বা পায়ের তলায় সরিষার তেল দিয়ে এই মালিশ খুবই কার্যকর। মাড়ির বিভিন্ন রোগ দূর করতে লবণ ও সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়।

সরিষার তেল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ। ত্বকের ওপর এই তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দূর হয়। এরা ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে। পোকামাকড় সরিষার তেল সহ্য করতে পারে না। এই তেল ব্যবহার করে পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence