প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার লাভে বিএসসিএল, স্যাটেলাইট ব্যবসায় নতুন মাইলফলক

বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ইমাদুর রহমান
বিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ইমাদুর রহমান  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা দেশের স্যাটেলাইট খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর আগে টানা কয়েক বছর বিভিন্ন কাঠামোগত, প্রযুক্তিগত ও বাজার–সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান ও কম আয়ের মুখে ছিল।

গত ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৪–২৫ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে বিএসসিএলের রেভিনিউ ৯.২৪% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৭.০৭ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৭১.২৪ কোটি টাকা। রেভিনিউর সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথ বিক্রি থেকে।

দেশের টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও, ডিটিএইচ সেবা, সামরিক বাহিনী, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাত বিএসসিএলের প্রধান গ্রাহক। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে স্যাটেলাইট ক্যাপাসিটি রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টির বেশি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আলোচ্য বছরে কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা; যেখানে আগের বছর কোম্পানিটি ২০.৪৫ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। 

২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিএসসিএল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন পরিচালিত হয়। ২০১৮ সালে দেশের প্রথম ভূ-স্থির স্যাটেলাইট ‘বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণের পর প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণমাত্রার বাণিজ্যিক সেবা প্রদান শুরু করে। বর্তমানে এর ব্যবসা স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইডথ বিক্রি, ট্রান্সপন্ডার ভাড়া, সম্প্রচার ও যোগাযোগ সেবা, স্যাটেলাইটভিত্তিক ব্রডব্যান্ড এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যান্ডউইথ রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ইমাদুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন, কস্ট ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং কৌশলে পরিবর্তন আনেন। তিনি বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যবহৃত ক্যাপাসিটি বিক্রির উদ্যোগ, গ্রাহক সেবা উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে বিএসসিএলের আয় কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে।

প্রচলিত ব্রডকাস্ট সেবার বাইরে এখন বিএসসিএল স্যাটেলাইট–ভিত্তিক ডাটা কানেক্টিভিটি, মেরিটাইম ও অ্যাভিয়েশন কানেক্টিভিটি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার জন্য কাস্টমাইজড সলিউশন এবং দুর্যোগকালে জরুরি যোগাযোগ সেবার বাজারেও প্রবেশ করেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস আরও বৈচিত্র্যময় হচ্ছে।

স্যাটেলাইট শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রমও চালু করেছে বিএসসিএল।

বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট—বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-২—বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এটি বাস্তবায়িত হলে আবহাওয়া পূর্বাভাস, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জাতীয় নিরাপত্তা ও রিমোট সেন্সিংসহ বিভিন্ন খাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএসসিএলের লাভে ফেরার ঘটনা সরকারি সেক্টরের জন্য ইতিবাচক বার্তা। প্রাথমিক দুর্বলতা কাটিয়ে দক্ষ নেতৃত্ব, বাজার সম্প্রসারণ, কৌশলগত বিনিয়োগ এবং সেবা উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির লাভজনক অবস্থানে ফিরে আসা দেশের স্যাটেলাইট শিল্পকে আগামী দিনে আরও শক্তিশালী করবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence