প্রায় সবার দাবি সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজারের বেশি, ৪ দিনে কমিশনে জমা পড়ল যেসব প্রস্তাব
- তৌহিদুর রহমান তুহি
- প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০১ PM , আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৩ PM
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে কর্মজীবীদের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতির প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা করছে পে কমিশন। গত সোমবার (২০ অক্টোবর) থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত এমন দেড় শতাধিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করে কমিশন। এসব সভায় নিজেদের পক্ষে বেতন কাঠামো প্রস্তাব এবং তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।
জানা গেছে, কমিশনের জমা পড়া প্রস্তাবনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন মূল বেতন বৃদ্ধি অন্যতম। কয়েক ডজন প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ সংগঠনই সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজারের বেশি প্রস্তাব করেছে। যৌক্তিকতা হিসেবে তারা বিভিন্ন যুক্তিও তুলে ধরেছে।
১১–২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম বলেছে, একজন নিম্ন গ্রেডভুক্ত কর্মচারীর পরিবারে গড়ে ছয়জন সদস্য থাকে। বর্তমান বাজারদরের প্রেক্ষিতে প্রতিজনের দৈনিক খাদ্য ব্যয় ১৭৫ টাকা হিসেবে হিসেব করলে, একটি পরিবারের মাসিক খাদ্য ও পথ্য ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। তাই সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩২ হাজার করতে হবে। বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি বলেছে, ছয়জনের খাবার ৪ হাজার টাকা করে ধরলেও মাসে ২৪ হাজার টাকা শুধু খাবার খরচ হয়। এছাড়া অন্যান্য খরচ মিলিয়ে অনেক টাকার প্রয়োজন। সে বিবেচনায় অন্তত ৩০ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মূল বেতন করতে হবে।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি এবং কারিগরি কর্মচারী সমিতি তিন সংগঠন ৪০ হাজার টাকা, সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ ৩৬ হাজার টাকা, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিডিপিএ), মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতি ৩৫ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মূল বেতন করার প্রস্তাব করেছে। তবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি সর্বনিম্ন বেতনের প্রস্তাব করেছে ২৫ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল আলম বলেন, প্রস্তাবনার ক্ষেত্রে আমরা দুইটি বিষয় মাথায় রেখেছি। প্রথমত নিচের গ্রেডের একজন কর্মচারীর ছয়জনের সদস্য নিয়ে জীবন চালাতে মিনিমাম একটা চাহিদা আছে। এক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা মূল বেতন হলে অন্যান্য ভাতা দিয়ে তার সর্বমোট বেতন ৪০ হাজার টাকা ছুঁয়ে যায়। তাই এটা সর্বনিম্ন বেতন হতে পারে।
সরকারের সক্ষমতা বিবেচনা করে ওই প্রস্তাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু অর্থ বিভাগে কর্মরত তাই আমরা অনুধাবন করি, শুধু প্রস্তাব দিলেই হবে না, সরকারের সক্ষমতাও বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া সর্বনিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর মূল বেতন ৩০ হাজারের বেশি করলে তার প্রভাব বাজারে পড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি চাকরিজীবী ও অন্যান্য কর্মজীবীরা বেকায়দায় পড়বেন। সবকিছু বিবেচনা করেই এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
তবে সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩৫ হাজার টাকা করা না হলে আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন অন্য সংগঠনগুলোর নেতারা। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবির বলেন, কর্মকর্তাদের শুধু গাড়ি খরচই ৫০ হাজার টাকা, তাহলে কর্মচারীদের বেতন কেন ৩৫ হাজার করা হবে না? এছাড়া পে কমিশনের এই স্কেল কমপক্ষে আগামী পাঁচ বছর চলবে, সেই বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। আর এসব বিষয় যদি বিবেচনা না করা হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।
এছাড়া ন্যূনতম মূল বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি সব সংগঠনই গ্রেড সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব করেছে। এক্ষেত্রে ১:৪ অনুপাত রেখে ১০ থেকে ১২টি গ্রেড করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা ভাতা বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ হাজার, ইনক্রিমেন্টের হার বাড়িয়ে ৭-১০ শতাংশ করা এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।