প্রথমবার ঢাকায় আসার সুযোগ পেল জাতিসংঘের গুমবিষয়ক কমিটি

জাতিসংঘ
জাতিসংঘ   © লোগো

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সফরে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ। রোববার (১৫ জুন) চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন গ্রুপের ভাইস চেয়ার গ্রাজিনা বারানোস্কা এবং সদস্য আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ। দীর্ঘ এক দশক পর এই সফর বাস্তবায়ন হওয়ায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ নতুন করে দৃশ্যমান হয়েছে।

জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলেন্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স—ডব্লিউজিইআইডি ২০১৩ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রথম চিঠি দেয়। তবে দীর্ঘ সময় ধরে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তা উপেক্ষা করে যায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল সফরের অনুমতি চাওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।

শেষমেশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে তারা জাতিসংঘের গুমবিষয়ক সনদে স্বাক্ষর করে এবং প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আসার অনুমতি দেয়। ফলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ডব্লিউজিইআইডি এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে পা রাখল।

সফরকালে প্রতিনিধি দলটি আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র সচিব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গুমবিষয়ক কমিশনের সদস্য এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো পর্যন্ত এ সফর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

ঢাকায় জাতিসংঘ অফিসের এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, সফরের উদ্দেশ্য সরাসরি গুমের ঘটনা তদন্ত নয়; বরং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং তার ভিত্তিতে সুপারিশ প্রস্তুত করা। জানা গেছে, প্রতিনিধি দলের ঢাকা ত্যাগের দিন নির্ধারিত রয়েছে ১৮ জুন।

উল্লেখ্য, গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ গত বছর ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’-এর আগমুহূর্তে ৭৬তম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনো ৭০টি গুমের ঘটনা অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে, যদিও আগে ৮৮ জনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ১০ জন মুক্ত অবস্থায় এবং পাঁচজন আটক রয়েছেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় গুমবিরোধী সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে কেবল শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। ভারত যদিও স্বাক্ষর করেছে, তবে সেটিকে এখনও অভ্যন্তরীণ আইনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেনি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যোগদান এক নতুন দৃষ্টান্ত।


সর্বশেষ সংবাদ