সেনাপ্রধানের ইমামতি করা প্রসঙ্গে বন্ধু রুশদের স্ট্যাটাস

জামাতে ইমামতি করছেন সেনাপ্রধান
জামাতে ইমামতি করছেন সেনাপ্রধান  © সংগৃহীত

বঙ্গভবনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নামাজ পড়ানোর ছবি প্রকাশ হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। তবে কেউ কেউ সমালোচনাও করেছেন। তাদের এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন সেনাপ্রধানের বন্ধু বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক আবু রুশদ মো. শহিদুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) নিজের ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার নামাজে ইমামতি করছেন এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেনাপ্রধান ইমামতি করেন? উনি কি সেনাপ্রধান হওয়ার পর এটা শুরু করেছেন? প্রশ্ন অনেকের। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও তীর্যক মন্তব্য করছেন অনেকে!’

‘জেনারেল ওয়াকার বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে আমার কোর্স মেটই শুধু ছিলেন না, তিনি আমার রুমমেটও ছিলেন। বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর কোম্পানিতে আমরা একই প্লাটুনে প্রশিক্ষণের দুই বছর কাটিয়েছি ১৯৮৪-৮৫ সালে। আবার তৃতীয় টার্মে দুইজন একই প্লাটুন কমান্ড করেছি।’

স্মৃতিচারণা করে আবু রুশদ মো. শহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ কেমন, তা নিয়ে বেশির ভাগ মানুষের কোনো ধারণা নেই। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মে বাপ-দাদার নাম ভুলে যাওয়ার অবস্থা হয়। একটু ঘুমানোর সময় বের করা এর মধ্যে স্বর্গীয় সুখের মতো অনুভূতি তৈরি করে। আমরা সবাই কোনোভাবে ঘুমাতে পারলে বাঁচি। শীতের রাতে পানি, কাদায় মাখামাখি হয়ে যখন রুমে আসতাম, তখন গোসলটা করে সোজা বিছানায়।’

‘এর মধ্যেও তদানীন্তন (ক্রমান্বয়ে) জেন্টলম্যান ক্যাডেট-ল্যান্স করপোরাল-কোম্পানি কোয়ার্টার মাস্টার সার্জেন্ট ওয়াকার গোসল করে, ওজু করে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যেত। কাজা নামাজসহ সব আদায় করে ঘুমাতে যেত।‌ আমিসহ আমাদের কোর্সের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ ক্যাডেট ওইভাবে নামাজ আদায় করতে পারিনি। আমাকে কত যে হেদায়েতের চেষ্টা জে ওয়াকার করেছেন! আই প্রেফারড স্লিপ! হি প্রেফারড প্রেয়ার!’

তিনি বলেন, ‘আরেকজন এমন ছিল কর্নেল নুরুল। উনিও ফাইনাল টার্মে আমার রুমমেট ছিলেন যখন দুইজনই আমরা আন্ডার অফিসার ছিলাম।’ 

‘ওই তরুণ-যুবক বয়সে জেনারেল ওয়াকারকে কাছে থেকে যতটুকু দেখেছি, তাতে তিনি ছিলেন অতি নরম মনের একজন মানুষ। এ নিয়ে আমরা উনাকে খেপাতাম। জুনিয়রদের যেখানে আমি কঠোর,কঠিন, মিলিটারি বুলশিট করতাম উঠতে বসতে যাতে অবধারিতভাবে স্ল্যাং থাকত, সেখানে জেনারেল ওয়াকার একটা স্ল্যাং ইউজ করতো না!’

সেনাপ্রধানের অতীত নিয়ে বন্ধু আবু রুশদ বলেন, ‘নবী-রাসুল ছাড়া সব মানুষের মধ্যে পাপ, দোষ-ত্রুটি আছে। জেনারেল ওয়াকার তার ব্যতিক্রম নন। তাকে নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা আছে, থাকবে। এ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু ব্যক্তি ওয়াকারের ইমামতি দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই! উনি যৌবনের ধারালো সময়েও ইমামতি করতেন! আমি কোর্স মেট, রুমমেট হিসাবে অন্তত উনার এই দিকটা নিয়ে দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি। খুব কষ্ট লাগে তার এই ইমামতি দেখেও কিছু অতি হাইপার অতি নিম্নমানের কথাবার্তা বলছেন দেখে!’

‘আমার বন্ধু জেনারেল ওয়াকারকে নিয়ে অনেক কথা লেখার থাকলেও তিনি সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে ব্যক্তিগত কোনো প্রসঙ্গ কখনো পাবলিকলি সামনে নিয়ে আসিনি। একদিনও তার কাছে যাইনি।‌ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে এই যা। ৫ অগাস্টের পর রক্তের দাগ না শুকাতেই বন্যার স্রোতের মতো তদবির নিয়ে এসেছেন অনেকে। একটা তদবিরও করিনি। জেনারেল ওয়াকার আমাদের সকলকে তদবির না করার অনুরোধ করেছেন।’

‘এই ইমামতি প্রসঙ্গেও লিখতাম না। কিন্তু ওই যে ছ্যাঁচড়ার দল! সবকিছুতেই রাজনীতি খোঁজা অভব্যের দল! একেকজন কতো বড় বড় স্ট্র্যাটেজিক বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে! খালেদা জিয়ার চাইতে বড় রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে! তাদের বেহেশত কনফার্ম হয়ে গেছে এমন ভাব চলে এসেছে! এসব দেখে দেখে আমি ক্লান্ত। আল্লাহ‌ যে সবের বিচার করবেন তা এখন এই সবজান্তা শমসেররা নিজেরাই করছেন! তারাই সব! সীমা ছাড়ানো অসভ্যতা বটে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সমালোচনা করেন ভালো। সমালোচনার অধিকার সবার আছে। আমরা যখন গণতন্ত্র চাই তখন সমালোচনা থাকবেই‌, কিন্তু সেটা তো সভ্য ভাবেও করা যায়‌। শালীনভাবেও করা যায়। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই, আছে অকল্পনীয় অসভ্যতা, চরম বেয়াদবি, অশালীন ভাষা প্রয়োগ। জানি না এখন পরিবারে, মাদ্রাসায়,স্কুলে এসব শিখানো হয় কিনা?’
 
আবু রুশদ বলেন, ‘জেনারেল ওয়াকার নামাজ পড়ে আসছেন, বয়স অনুযায়ী সেটা তার ওপর ফরজ হওয়ার পর থেকে। এখনো পড়ছেন, ইমামতিও করছেন। আমি, আমরা বেশির ভাগ সেটা পারিনি। পার্থক্য এখানেই। আর নামাজ, রোজা, হজ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। আল্লাহর সাথে ফয়সালা। ধন্যবাদ।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence