ঈদের আগেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবি বিটিএর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫০ PM , আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫০ PM

আসন্ন ঈদের আগেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। একইসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি জানানো হয়েছে বিটিএর পক্ষ থেকে।
আজ শনিবার (৮ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, ঈদের আগেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়াসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনটির সভাপতি শেখ কাওছার আহমেদ।
দাবি আদায়ে আগামী ১২ মার্চ (বুধবার) কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ও ১৬ মার্চ (রবিবার) সব জেলা ও বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক সংগঠনটির নেতারা। আর এতে দাবি পূরণ না হলে ঈদের পর ‘কঠোর কর্মসূচি’ পালনের হুমকি দিয়েছেন তারা।
বিটিএর পক্ষ থেকে জানানো দাবিগুলোর মধ্যে আছে, মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করাসহ শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূর করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দেওয়া, ইএফটির মাধ্যমে শিক্ষকদের এমপিও পরিশোধের সমস্যার দ্রুত সমাধান করা, সরকারি স্কুলের মত বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ষষ্ঠ গ্রেডে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকদের সপ্তম গ্রেড উন্নীত করাসহ টাইম স্কেল দেওয়া ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সার্বজনীন বদলি প্রথা চালু করা।
এছাড়াও রয়েছে, সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য পেনশন প্রথা চালু করা এবং পেনশন চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা পরিশোধ করা এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে এ দুই খাতে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন বন্ধ করা।
শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরগ্রহণের বয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মত ৬৫ বছরে উন্নীত করা। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে কমিশন গঠন এবং শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আনুপাতিক হারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়ন করা। ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।
দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে শেখ কাওছার আহমেদ বলেন,‘আগামী ১২ মার্চ সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবে বিটিএ। আগামী ১৬ মার্চ সকাল ১১টায় দেশের সকল জেলা ও বিভাগীয় সদরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপরেও যদি দাবি পূরণে সুনির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করা না হয় তাহলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে সারা দেশের হতাশ ও বিক্ষুব্ধ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।’
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদেরকে শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান এবং সরকারি নিয়মে বাড়িভাড়া ও মেডিকেল ভাতা প্রদানের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতীকী অনশন পালন করেন।
গত বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আগামী ঈদুল আযহা থেকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির বার্তা দেন, যে আশ্বাসকে স্বাগত জানিয়ে কর্মসূচি ঈদুল আযহা পর্যন্ত স্থগিত করে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট।
মূল দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস পাওয়ার পরও নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণার কারণ জানতে চাইলে বিটিএ সভাপতি শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, ‘বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় ঈদুল আযহা থেকে শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাতা কিছু বৃদ্ধির কথা বলেছেন, কিন্তু আমাদের দাবি ঈদুল ফিতর থেকেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া হোক। আর আমাদের মূল দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তাই নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকারও আমাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েছিল। শিক্ষকদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে তারা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে দুইটি কমিটি গঠনের কথা বললেও আমরা কোন সুফল পাইনি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাই আশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। আমরা চাই সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে লিখিত ঘোষণা।’