অর্ধেকের বেশি গণিত শিক্ষকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষাই নেই

ক্লাসে শিক্ষক
ক্লাসে শিক্ষক  © সংগৃহীত

মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬৪ হাজার গণিত শিক্ষকের ৫৫ শতাংশই উচ্চশিক্ষা জীবনে গণিত পড়েননি। গণিত শিক্ষকদের ৮৭ শতাংশের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেই। এমনকি ৭ হাজার গণিত শিক্ষক সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াই উচ্চমাধ্যমিক পাস করে শিক্ষার্থীদের গণিত পড়াচ্ছেন। আর ৩ হাজার ৪০৬ জন গণিত শিক্ষক ডিগ্রি বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে গণিত না পড়েই এ বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। ২২ শতাংশের বেশি গণিত শিক্ষকের উচ্চশিক্ষাই নেই। বাংলাদেশ শিক্ষা-তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের গণিত বিষয়ে দুর্বলতা থেকেই যাচ্ছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্টরা এ দূর্বলতার জন্য শিক্ষকদের দক্ষতার অভাবকে দুষছেন। এমন বাস্তবতায় আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) সারাদেশে তৃতীয়বারের মত সরকারিভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত হচ্ছে। 

দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে সংগ্রহ করা তথ্য নিয়ে‘শিক্ষা পরিসংখ্যান’ প্রকাশ করে ব্যানবেইস। ওই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় গণিত শিক্ষকের সংখ্যা ৬৪ হাজার ১৪৭ জন। তাদের মধ্যে গণিতে স্নাতক (অনার্স) ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৩৬। অর্থাৎ মোট শিক্ষকের মাত্র ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ গণিতে স্নাতক (অনার্স) ডিগ্রিধারী। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আছেন ৪ হাজার ৬৪৩ জন, যা মোট শিক্ষকের ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। 

আরও পড়ুন : শিক্ষকরা জাতির প্রয়োজন না মেটাতে পারলে জাতীয়করণে লাভ নেই: ফখরুল

গণিত শিক্ষকদের অর্ধেকের বেশির গণিত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেই। তাদের ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ৭ হাজার ৯৪৭ জন উচ্চমাধ্যমিকে গণিত বিষয় থাকলেও স্নাতক পর্যায়ের গণিত পরেননি। ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ১০ হাজার ৩৭৭ জন গণিত শিক্ষক বিষয়টি না পড়েই ডিগ্রি (পাস) করেছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গণিতের শিক্ষকদের মধ্যে বিষয়টিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আছেন মাত্র ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ গণিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ছাড়াই শিক্ষার্থীদের বিষয়টি শেখাচ্ছেন ৮৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষক।

ব্যানবেইস বলছে, ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ১২ হাজার ৯ জন গণিত শিক্ষক পদার্থ, রসায়ন ও গণিত-এ তিন বিষয়ের সমন্বয়ে বিএসসি করে এ বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ বা ৭ হাজার ৭৪৩ জন গণিত শিক্ষক অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গণিত পরে বিএসসি করেছেন। 

গণিত শিক্ষকদের অর্ধেকের বেশির গণিত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেই। তাদের ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ৭ হাজার ৯৪৭ জন উচ্চমাধ্যমিকে গণিত বিষয় থাকলেও স্নাতক পর্যায়ের গণিত পরেননি। ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ১০ হাজার ৩৭৭ জন গণিত শিক্ষক বিষয়টি না পড়েই ডিগ্রি (পাস) করেছেন। 

আরও পড়ুন : ইএফটিতে বেতন পাবেন মাদ্রাসা শিক্ষকরাও

২২ দশমিক ১২ শতাংশ বা ১৪ হাজার ১৮৬ জন গণিত শিক্ষকের উচ্চশিক্ষাই নেই। তাদের অর্ধেক গণিতসহ ও বাকি অর্ধেক গণিত না পড়েই উচ্চমাধ্যমিক পাস। আর ৩ হাজার ৪০৬ জন বা ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষক উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি কোন স্তরেই গণিত পড়েননি। 

২২ দশমিক ১২ শতাংশ বা ১৪ হাজার ১৮৬ জন গণিত শিক্ষকের উচ্চশিক্ষাই নেই। তাদের অর্ধেক গণিতসহ ও বাকি অর্ধেক গণিত না পড়েই উচ্চমাধ্যমিক পাস। আর ৩ হাজার ৪০৬ জন বা ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষক উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি কোন স্তরেই গণিত পড়েননি। 

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা ঘাটতিতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হালিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বাস্তব চিত্র যদি এমনটা হয় তাহলে খুব বিপদের কথা। কোন শিক্ষক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে শিক্ষকতায় আসলে তার পড়ানোর পদ্ধতি একরকম হবে, আর কোন শিক্ষক ওই বিষয় না পড়ে শিক্ষকতায় আসলে তার শিখন শেখানো পদ্ধতি এক রকম হবে। 

আরও পড়ুন : দেশের এক-চতুর্থাংশ ইংরেজি শিক্ষকেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেই

তিনি আরও বলেন, আসলে আমরা যদি নৌকা চালাতেই না জানি শুধু নৌকায় চড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে কাউকে নৌকা চালানো শেখাতে যাই, তবে সে নৌকা বাতাসের তোড়ে একবার এদিক পরের বার অন্যদিকে যেতে থাকে, এটাই বাস্তবতা। আসলে আগামী প্রজন্মের কথা চিন্ত করে গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন খুব জরুরি। 


সর্বশেষ সংবাদ