ডলার সংকট
জটিলতায় বিদেশে উচ্চশিক্ষা, পথ দেখাচ্ছে দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:১৫ PM , আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৫ PM
দেশে সদ্য সমাপ্ত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন পরীক্ষার্থী এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। দেশের প্রচলিত শিক্ষাস্তরে উচ্চশিক্ষার জন্য এসব শিক্ষার্থীর পরবর্তী গন্তব্য হবে দেশ-বিদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উচ্চশিক্ষালয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবেন। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যাবেন তাদের বড় একটি অংশ। কিন্তু দেশে চলমান ডলার সংকটের কারণে এবার অনেকটাই অনিশ্চয়তায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান ডলার সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডলার নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা চাইলেও উচ্চশিক্ষার জন্য ডলার কিনতে পারছেন না। এক্ষেত্রে তারা সমাধান হিসেবে দেখছেন দেশের সামনের সারিতে থাকা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষালয়গুলোকে। তারা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় মুদ্রায় আন্তর্জাতিক শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ গ্রহণই হতে পারে বিকল্প সমাধান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং মালয়েশিয়ার প্রথম বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয় ইউনিভার্সিটি কলেজ সেদায়া ইন্টারন্যাশনালের (ইউসিএসআই) বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস।
সংকটে ফিকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা
দেশের বাইরে পড়তে চাইলে বৈধ লেনদেনের জন্য দেশীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ‘ফাইল খোলা’ বাধ্যতামূলক। কিন্তু ফাইল খোলা প্রায় বন্ধই রেখেছে অধিকাংশ ব্যাংক। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার এমনকি সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসি পেয়েও বিদেশে যেতে পারছেন দেশের অনেক শিক্ষার্থী। সূত্রের তথ্য, বাংলাদেশে ২০২১ সালের শেষদিক থেকে শিক্ষার্থী ছাড়াও ডলার সংকটের কারণে বিপাকে পড়েন ডলারের উপর নির্ভরশীল সংশ্লিষ্টরা। ফলে বর্তমানে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা শুরুতে বেশি দামে ডলার কিনে যেতে পারলেও এখন অনেকটা অলিখিতভাবেই বন্ধ রয়েছে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যাংক প্রোফাইল খোলা বা সংশ্লিষ্ট সেবা।
কথা হয় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো নোমান হাসানের সঙ্গে। নিউ ইয়র্কে অধ্যায়নরত এই শিক্ষার্থী জানান, ভিসার পর আই-টুয়েন্টি (অ্যাডমিশনের প্রমাণপত্র) পাওয়ার পরও তা বাতিল হয়েছিল শুধু ডলার সংকটে ‘স্টুডেন্ট ফাইল’ না খোলার কারণে। অবশেষে বেসরকারি একটি ব্যাংকের সহযোগিতায় সেটি খুলতে পেরেছিলেন তিনি। একই কথা জানান মাহমুদুর রহমান এক ইউরোপগামী শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডলার সংকটের কবলে পড়ে মন অনেকটাই ভেঙে গিয়েছিল। পরে উচ্চতর পর্যায় থেকে ফোন করিয়ে বিকল্প পন্থায় ফাইল খুলেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে যেতে ইচ্ছুক অনেকেই ব্যর্থ হয়েছে।’
বাংলাদেশ থেকে বাইরে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। এখন ব্যাংকগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিষেবা দিতে পারছে না। সমস্যার সমাধানে সরকারের উদ্যোগ নেয়া দরকার—মো. ইকবাল হোসেন, সিনিয়র অ্যাডমিশন অফিসার (আন্তর্জাতিক), বিইএসআই স্টাডি কনসালটেন্সি।
ডলার সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে জানিয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সামিউল আলম মুন্না জানিয়েছেন, আমাদের ভর্তির সময় ডলারের দাম ছিল ৯৮ টাকা। এখন ১১৬ টাকা ব্যাংক রেট নির্ধারিত হলেও খোলাবাজারে প্রায় ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকা টিউশন ফি বেশি দিতে হবে; ডলারের দাম বাড়লে এটি আরও বাড়বে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিদেশে পড়াশোনা এবং সংশ্লিষ্ট খাতের অর্থ পরিশোধে দেশের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য বৈধ কোনো সমাধান দিতে পারছেন না খাত সংশ্লিষ্টরা। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই আইনের তোয়াক্কা না করে হুন্ডি কিংবা ভিন্ন কোনো উপায়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন-সুযোগ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
সাম্প্রতিককালে বিদেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের এমবিএ’র শিক্ষার্থী আফ্রিদ সারওয়ার খানের সঙ্গে কথা বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। তিনি জানান, তার যে-সব বন্ধুরা (ব্যাচমেট) দেশের বাইরে পড়াশোনার জন্য গিয়েছে ডলার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তাদের অনেকেই বিভিন্ন জটিলতায় পড়েছেন। এছাড়াও তাদের অনেকে অফার লেটার পাওয়ার পর এখনও সেমিস্টারই শুরু করতে পারেনি।
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করছেন শিক্ষার্থীরা। ফাইল ছবি
দেশে থেকেই আন্তর্জাতিক শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন জানিয়ে এ শিক্ষার্থী বলেন, এখানে আমি স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ টাকায় পেমেন্ট করতে পারছি। আমি দেশে পরিবারের সাথে থাকলেও শিক্ষাসেবা পাচ্ছি মালয়েশিয়ার মূল ক্যাম্পাসের মতোই। এখানে শিক্ষক, স্টাফসহ অনেকেই মালয়েশিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল সেবাই আন্তর্জাতিক মানের। বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা মানের উচ্চশিক্ষা দেশেই ইউসিএসআই বা অন্য আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভব বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।
দেশের প্রথম বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসে পড়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের এ শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী আধুনিক ক্লাসরুমে আমাদের অতি যত্নের সাথে পাঠদান করান। এর পাশাপাশি আমাদের হাতে-কলমে বিভিন্ন বিষয়গুলো শেখাতে ক্যাম্পাসে রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন বিশেষায়িত কম্পিউটার ল্যাব, ফ্যাশন ডিজাইন ল্যাব, গ্রাফিক্স এন্ড মাল্টিমিডিয়া ল্যাব এবং ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব।
ক্লাসের ফাঁকে চিত্তবিনোদনের জন্য আমাদের এখানে ‘স্পোর্টস জোন’ এ বন্ধু-বান্ধবের সাথে উপভোগ্য সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এছাড়াও এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে দেশ-বিদেশের সেরা সব বই, জার্নাল ও প্রকাশনায় ভরপুর লাইব্রেরি। আমরা ক্লাসের লেকচার তৈরির জন্য প্রয়োজনে লাইব্রেরির সাহায্য নিতে পারি। এছাড়াও মালয়েশিয়ান মূল ক্যাম্পাস ও বিশ্বের শীর্ষ ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধার পাশাপাশি আমাদের জন্য মূল ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের সাথে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ ও সরাসরি মূল ক্যাম্পাসে অধ্যয়নের সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও জানান এই শিক্ষার্থী।
জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি-লেভেল স্টুডেন্টস’ প্রতিবেদন মতে, বিগত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে ডলার সংকট হয়েছে জানিয়ে জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা আলী হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের প্রায় সব ব্যাংকেই ডলার সংকট রয়েছে। ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডলার না থাকায় বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল খোলা বা তাদের টিউশন ফি পরিশোধে জটিলতা হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচায়ন নীতি রয়েছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলছেন, ব্যাংকে ডলার না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একই ধরনের বক্তব্য জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি-লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বিগত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী। উন্নত দেশগুলোর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সম্পূর্ণ বা আংশিক স্কলারশিপসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। যদিও সাম্প্রতিক জটিলতায় পড়ে সেই গতিতে বেশ ভাটা পড়েছে।
রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই। ফাইল ছবি
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বাইরে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিইএসআই স্টাডি কনসালটেন্সির সিনিয়র অ্যাডমিশন অফিসার (আন্তর্জাতিক) মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, এখন ব্যাংকগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিষেবা দিতে পারছে না। সমস্যার সমাধানে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান বাড়ানোর মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও বাংলাদেশে আনতে আগ্রহী করতে সরকারের কাজ করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
পথ দেখাচ্ছে তিন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য বলছে, উচ্চশিক্ষায় দেশে বর্তমানে ৫৮ টি পাবলিক বা সরকারি, ১১২ টি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি দেশে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সেবাদান করছে তিনটি আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষালয়। এর মধ্যে মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী সংগঠন ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পরিচালিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) এবং নারীদের জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় শিক্ষার্থী।
আমরা এখানে যে প্রোগ্রামগুলো অফার করছি; তা মালয়েশিয়ার মূল ক্যাম্পাসের মতোই। কেউ যদি তার কোর্সের দুই বছর এখানে এবং অবশিষ্ট দুই বছর মালয়েশিয়ায় করতে চায়; তারা তা করতে পারে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় মুদ্রায় আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে ইউসিএসআই’র বাংলাদেশের শাখা ক্যাম্পাসে—চ্যান জো জিম, প্রভোস্ট, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে থেকেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাসেবা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে মালয়েশিয়ার প্রথম বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয় ইউনিভার্সিটি কলেজ সেদায়া ইন্টারন্যাশনালের (ইউসিএসআই) বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসে। সদ্য বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করা উচ্চশিক্ষালয়টিতে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ রয়েছে দেশীয় মুদ্রায় আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের।
আইইউটি
মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী সংগঠন ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পরিচালিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা অংশ নিয়ে নিজের মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারলেই সুযোগ মিলবে ভর্তির। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই উচ্চশিক্ষালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পান মেধার ভিত্তিতে শতভাগ পর্যন্ত স্কলারশিপ নিয়েও। এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনার সুযোগ পান স্থানীয় বিনিময় মুদ্রায় ফি’সহ অন্যান্য খরচাদি পরিশোধের মাধ্যমেও।
বর্তমানে দেশের অধিকাংশ ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খোলা যাচ্ছে না জানিয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সামিউল আলম মুন্না বলছেন, ডলার সংকটের নানান জটিলতার ফলে বাংলাদেশের বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা ভিসা পেলেও দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। চলমান ডলার সংকট সমাধান এবং স্থানীয় মুদ্রার ক্ষমতায়নের পাশাপাশি স্থানীয় আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের জন্য সমাধান হতে পারে বলে জানান এই শিক্ষার্থী।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির নান্দনিক পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস। ফাইল ছবি
দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে চলমান জটিলতায় শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহম্মদ রফিকুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলছেন, আমাদের এখানে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় মুদ্রায় তাদের শিক্ষার ব্যয় পরিশোধ করতে পারছেন। আমাদের যে-সব শিক্ষার্থী দেশের বাইরে থেকে আসেন তাদের ডলারে পেমেন্ট করতে হয়। যেহেতু দেশে ডলারের একটি সংকট রয়েছে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা দেশের আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থানীয় মুদ্রায় পড়াশোনা করতে পারেন এবং আইইউটি শিক্ষার্থীদের জন্য সে সুযোগ রেখেছে।
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস
গত বছরের শেষদিকে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করা ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস দেশে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে চলতি বছরের মে’তে। বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালিকায় থাকা মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রেখেছে এশিয়ায় ৬১তম ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিংয়ে ১৪তম শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। ফলে দেশে চলমান ডলার সংকটের এ ক্রান্তিকালে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাগ্রহণের অন্যতম সুযোগ হতে পারে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় থাকা উচ্চশিক্ষালয়টিতে।
ইউসিএসআই বাংলাদেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চায় জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ ব্রাঞ্চের প্রভোস্ট চ্যান জো জিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আমরা এখানে সর্বোচ্চ মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছি। ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসকে নিয়েই ভালো অবস্থান ধরে রাখতে হবে। সেজন্য আমরা শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা ও বাস্তবমুখী শিক্ষায় বেশি জোর দিচ্ছি। এতে এখানকার শিক্ষার্থীরা আরও বেশি জীবনমুখী হতে পারছে এবং বাস্তব জীবনে বা কর্মক্ষেত্রে খুব সহজে প্রবেশ করতে পারবে।
তিনি বলেন, আমাদের মূল ক্যাম্পাসে মোট ১৫৬টি প্রোগ্রাম রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ের চাহিদার ওপর নির্ভর করে এখানেও প্রোগ্রামের সংখ্যা বৃদ্ধি করবো। আমরা এখানে সবগুলো প্রোগ্রাম চালু করতে চাই। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসে সিএসসি, বিবিএ, এমবিএ, একাউন্টিং এন্ড ফাইন্যান্স, ফাইন্যান্সিয়াল ইকোনোমিক্স, ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট, হসপিটালিটি এডমিনিসট্রেশন, ম্যাস কমিউনিকেশনসহ আমাদের ২১টি স্নাতক এবং ৩টি স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট ২৪টি প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখানে মেধার ভিত্তিতে ২০ শতাংশ থেকে শতভাগ স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছেন।
চ্যান জো জিম, প্রভোস্ট, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস। ফাইল ছবি
শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমরা ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এডভাইসর বোর্ডে বিশ্বের নামীদামী শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের যুক্ত করেছি। এর পাশাপাশি আমাদের শিক্ষক পরিষদে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছেন মালয়েশিয়ান মূল ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকজন দক্ষ অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ। তাদের সমৃদ্ধ শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের একাডেমিক কার্যক্রমে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে দৃঢ় বিশ্বাসের কথা জানান চ্যান জো জিম।
বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে ডলার সংকট রয়েছে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব ব্যাংকেই ডলার সংকট রয়েছে। ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডলার না থাকায় বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল খোলা বা তাদের টিউশন ফি পরিশোধে জটিলতা হচ্ছে—আলী হোসাইন, কর্মকর্তা, জনতা ব্যাংক পিএলসি।
আমরা এখানে যে প্রোগ্রামগুলো অফার করছি; তা মালয়েশিয়ান মূল ক্যাম্পাসের মতোই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে তৈরি করা হয়েছে। কেউ যদি তার কোর্সের দুই বছর এখানে এবং অবশিষ্ট দুই বছর মালয়েশিয়ায় করতে চায়; তারা তা করতে পারে। সর্বোপরি বর্তমানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা স্থানীয় মুদ্রায় দেশেই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে ইউসিএসআই’র বাংলাদেশের ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসে—যুক্ত করেন চ্যান জো জিম।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন
এশিয়া অঞ্চলের নারীদের শিক্ষা, নেতৃত্ব উন্নয়ন ও বিকাশে অবদান রাখতে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় আরেকটি আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ)। উচ্চশিক্ষালয়টি কাজ করছে অসাধারণ শিক্ষার সম্ভাবনা, সাহসী মনোভাব এবং সকল প্রকার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে গিয়ে সমাজ বিনির্মাণে নারীদের নিয়ে।
পিছিয়ে পড়া নারীদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মেধাবী সুবিধাবঞ্চিত, আদিবাসী ও উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর নারীদের জন্য বিনা খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রাখে। এছাড়াও এখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে স্থানীয় মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থায় বিনিময়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার। উচ্চশক্ষালয়টিতে স্নাতক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় লিবারেল আর্টসকে।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নারী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন। ফাইল ছবি
ফলে এখানকার নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ থাকে বায়ো-ইনফরমেটিক্স, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, পাবলিক হেলথ, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের উচ্চশিক্ষায় নিজেদের দীক্ষিত করার মাধ্যমে সমাজের খোলস কাঠামো পরিবর্তনে নিজেদের প্রভাব বিস্তার এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বব্যাপী কাজ করার।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে উচ্চশিক্ষালয়টির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উচ্চশিক্ষায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন একটি সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসেবে কাজ করছে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং এ অঞ্চলের নারীদের নেতৃত্ব বিকাশে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি কাজ করছে। এখানে আমরা নারীদের মধ্যে যারা উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন তাদের বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকি। ফলে নারী শিক্ষার বিকাশ এবং অঞ্চলের নারীদের ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন।