জীবিত আমাকে একেবারে মেরে ফেলবে!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ মে ২০২০, ১০:৪৩ PM , আপডেট: ০৯ মে ২০২০, ১০:৪৩ PM
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন জেসিয়া মারা গেছেন! এই গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জেসিয়া ও তাঁর পরিবার। জেসিয়া বললেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি কোনো কিছুতেই খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখাই না। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ থেকে একটা গ্রুপ আমার খুঁত খোঁজার চেষ্টা করে। আমার হাসিতে সমস্যা, চলাফেরায় সমস্যা, বয়ফ্রেন্ডে সমস্যা, আরও কত কী! নানাভাবে বুলিং করে আসছে। ওসব আমি খুব একটা পাত্তা দিইনি। ভেবেছি, মজা করছে করুক, এটা তাদের নোংরা মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু তাই বলে মৃত্যু নিয়ে মজা করবে! জীবিত আমাকে একেবারে মেরে ফেলবে! এ কেমন মজা! এ কেমন মানসিকতা, তা–ও আবার পুরো পৃথিবীর এমন একটা সংকটের সময়ে!’
মৃত ব্যক্তির প্রোফাইলে থাকা ব্যক্তিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আইডি রিমেম্বারিং করে থাকে। কোনো আইডি ‘রিমেম্বারিং’ করা হলে নতুন করে আর কেউ সেই আইডিতে প্রবেশ করতে পারে না। একই সঙ্গে সেই আইডিটি আর হ্যাক করার কোনো সুযোগ থাকে না। আইডিটি সম্পূর্ণ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তবে আগে থেকে যাঁরা সেই আইডিতে বন্ধু হিসেবে ছিলেন, তাঁরা ওই আইডির তথ্য এবং ছবি দেখতে পারেন।
জেসিয়া বললেন, ‘শুক্রবার সকালে ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম, “রিমেম্বারিং জেসিয়া ইসলাম”! আমার মৃত্যুসংবাদ আমিই দেখছি! জানতে পেরেছি, কয়েকজন মিলে আমার আইডিতে রিপোর্ট করেছে। কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষেরও তো কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা সময় নিতে পারত। যাচাই–বাছাই করতে পারত! তা না করে লিখে দিল রিমেম্বারিং! মানলাম, অনেক দিক থেকে আমি ফানি হতে পারি। তাই বলে জীবিত আমাকে মেরে ফেলাটা আপনাদের কাছে মজার কিছু! সত্যিই কি তা–ই! আমি বাক্রুদ্ধ। কী বলব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’
শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে জেসিয়া দেখেন তাঁর কাছে শত শত ফোন ও এসএমএস। সবাই উদ্বিগ্ন। জেসিয়া জানান, ‘ফোন ধরতেই সবার একটাই জিজ্ঞাসা, আমি সত্যিই বেঁচে আছি কি? এর আগে অনেক কিছু আমার আবেগে আঘাত করেছে, তবে এবার তা করেনি, কী বলা উচিত বুঝতে পারিনি।’
জেসিয়ার মা রাজিয়া সুলতানা মেয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা জড়িত, তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন তিনি।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাহ্রি খাওয়া শেষে শুক্রবার রাতে জেসিয়া ও তাঁর মা দুজনেই ঘুমাতে যান। এরই মধ্যেই ফেসবুকে রটে যায় জেসিয়ার মারা গেছেন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষও তাঁর আইডিতে ‘রিমেম্বারিং’ লিখে দিয়েছে। এসব যখন ঘটছে, জেসিয়া তখনো ঘুমে। এদিকে পরিচিতজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, জেসিয়া মারা গেছে! কীভাবে কী! কেউ আবার শোকও প্রকাশ করেছেন। এদিকে ঘুম থেকে উঠে জেসিয়া নিজের মৃত্যুর খবরে নিজেই অবাক হয়েছেন। বাক্রুদ্ধ হয়েছেন। ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ ও ঘৃণা।
জেসিয়া আরও বলেন, ‘সবাইকে বলতে চাই, আমি দেখতে অসুন্দর হতে পারি, তবে সেটা আমি। মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা কথা বলি, আগপিছ কিছুই ভাবি না—মনে রাখবেন ওটাই আসলে আমি। আমি এতে হিসাব–নিকাশ করে চলি না। আমি আমার মুডে চলি। আপনাদের বলতে চাই, ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনো কিছু করতে আসবেন না। মনে রাখবেন, বুলিং কখনোই মজা হতে পারে না। এতে একটা পরিবার চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়, যা করার কোনো অধিকার আপনাদের নেই। এটা অনেক বড় ধরনের অপরাধ। কারও লাইফস্টাইল আপনার কিংবা আপনাদের ভালো না–ও লাগতে পারে, তাই বলে যা খুশি তা বলতে পারেন না।’
আগে বিভিন্ন পণ্যের স্থিরচিত্রের মডেল হিসেবে কাজ করলেও মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবার নজরে আসেন জেসিয়া ইসলাম। এরপর বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায়। সেরা ৪০-এ জায়গা করে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। তখন থেকে জেসিয়াকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। এসবে খুব একটা পাত্তা দিতেন না। জেসিয়ার কথায়ও তা পরিষ্কার।