এবার চরম অনিশ্চয়তায় ২০ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থী

  © ফাইল ফটো

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই আরও একটি এসএসসি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসছে। অথচ পরীক্ষা কোন আঙ্গিকে হবে বা কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো ছকই তৈরি হয়নি, আলোচনাও নেই। তবে ইতোমধ্যে পিইসি-জেএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষা নিয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আগামী এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কী হবে তা চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। তাদের বিষয়ে কোনো আগাম পরিকল্পনাও নেই।

জানা গেছে, আগামী এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রি-টেস্ট পরীক্ষার সময় ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। নির্বাচনী পরীক্ষার সময়ও কাছাকাছি। অথচ দশম শ্রেণিতে তারা তিন-চার সপ্তাহ ক্লাস করতে পেরেছেন। এর পরপরই সব স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে কিংবা আরও পরে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলে ফলাফল কী হবে তা নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েছেন।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। টেস্ট পরীক্ষা হয় অক্টোবরে। নভেম্বরে ফরম পূরণ করতে হয়। নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের হিসাব থেকে তাদের মোট সংখ্যার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। সে হিসাবে এবার এসএসসি ও সমমানে সাড়ে ২০ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে করোনার কারণে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানান, ভর্তি পরীক্ষা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ নিয়মিত নানা আনুষ্ঠানিকতায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পার হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তাদের ক্লাসের সংখ্যা বাড়ে, মার্চে পূর্ণাঙ্গ ক্লাস শুরু হয়

তবে করোনার কারণে মার্চেই স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে নতুন সিলেবাস অনুযায়ী কোনো সাবজেক্টেরই এক-দুটির বেশি অধ্যায় শেষ হয়নি। অথচ সেপ্টেম্বরে অনলাইনে প্রি-টেস্ট পরীক্ষা হবে বলে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকরা। এটি তাদের কাছে চরম উদ্বেগের হয়ে দেখা  দিয়েছেন বলে জানান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অক্টোবরে স্বাভাবিকভাবে এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা হয়ে থাকে। এতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রশ্নের ধরনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা পেয়ে থাকে। অথচ করোনার কারণে টেস্ট পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ কম। এছাড়া বোর্ড পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

পরীক্ষার্থীদের মতে, শুরু থেকেই তারা নিয়মিত ক্লাস করতে পারেনি এবং প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষাও ঠিকমতো দিতে পারছেন না। এক্ষেত্রে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত এবং তা আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া জরুরি। তা না হলে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস দেখে লেখাপড়া করে শেষে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দিলে তাদের কোনো উপকারে আসবে না।

রাজধানীর একেটি স্কুলের শিক্ষার্থী আবু সায়েম বলেন, তার যেসব সহপাঠী ঢাকায় আছে, তারা প্রায় সবাই অনলাইনে কোচিং করছে। অথচ যারা গ্রামে অবস্থান করছে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তার কয়েকজন সহপাঠী প্রায়ই ফোনে বিজ্ঞানের বিভিন্ন সাবজেক্টের অধ্যায়গুলো বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সে-ও সহযোগিতা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সবকিছু ঠিকভাবে বুঝতে পারছে না। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় তারা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই থেকে অনলাইনে পাঠদান শুরু হলেও অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত যোগ দিতে পারেনি। বিদ্যুৎ সমস্যা, ইন্টারনেটসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া করোনার মধ্যে অভিভাবক চাকরি হারানোয় শিক্ষার্থীদের অনেককে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। ফলে অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি তারা।

অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও অনেকের নেই। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর কাছে অনলাইন ক্লাস বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। অনলাইনে ক্লাস করতে উচ্চগতির ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ থাকা প্রয়োজন। অথচ অধিকাংশ মধ্যবিক্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তা নেই।

কোনো পরিবারে একটি স্মাটফোন বা ল্যাপটপ থাকলেও সদস্য বেশি হওয়ায় সবাই তা ব্যবহার করতে পারছে না। এ অবস্থায় অনলাইনে প্রিটেস্ট পরীক্ষার কথা আসায় উদ্বিগ্ন ওইসব শিক্ষার্থী। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে।

তারা বলছে, লোডশেডিং ও আকস্মিক ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া অহরহই ঘটছে। এ অবস্থায় পরীক্ষা চলাকালীন সংকট দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হবে। অথচ যারা ওই সময় পরীক্ষা দিতে পারবে না তাদের বিষয়ে কী করা হবে তা স্কুল শিক্ষকরা স্পষ্ট করছেন না।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও শিক্ষার্থীরা যেহেতু নিয়মিত ক্লাস ও কোচিং করতে পেরেছে, সেক্ষেত্রে পরীক্ষা ২-৪ মাস আগে-পরে হলেও সমস্যা হবে না। তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা কোনো সুযোগ পায়নি। তাই বিকল্প পথে তাদের মেধা যাচাই করা কঠিন। অথচ এই ফলাফলের ভিত্তিতেই তারা ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা ইতোমধ্যে বাতিলের জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে অনুমোদনের পর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। অন্যদিকে এইচএসসি পরীক্ষার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা না হলেও পরিস্থিতির আলো কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।


সর্বশেষ সংবাদ