নানা আয়োজনে চলছে ‘নবান্ন উৎসব’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০১:১৩ PM , আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০১:১৩ PM
অবিচ্ছেদ্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ‘নবান্ন’ আর বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উত্পাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উত্সব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। নবান্ন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি।
অগ্রহায়ণ শব্দের অর্থ বর্ষ শুরুর মাস। আর অগ্রহায়ণের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশে নবান্ন যাপনের দিন হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রাচীনতম উৎসবগুলোর একটি নবান্ন উৎসব। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী অগ্রহায়ণ অষ্টম মাস হিসেবে বিবেচিত হলেও হেমন্ত ঋতুর দ্বিতীয় এ মাসের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশের নবান্ন।
এক সময় নতুন বছর শুরু হতো অগ্রহায়ণ মাস দিয়ে, তাই এ মাসের নাম হয়েছে অগ্রহায়ণ। এ মাসের প্রথম দিনে উদযাপিত নবান্নই বাঙালির ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। সাধারণত, অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পরে এই উৎসব হয়। ঋতুবৈচিত্র্যে হেমন্ত আসে শীতের আগে। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাস নিয়েই হেমন্ত ঋতু। নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি জাতি-ধর্ম-বর্ণকে উপেক্ষা করে নবান্নকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে। সামাজিক প্রথা, রীতি ও কৃত্যের পরিক্রমায় স্থানবিশেষে মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে।
বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী অগ্রহায়ণ অষ্টম মাস হিসেবে বিবেচিত হলেও হেমন্ত ঋতুর দ্বিতীয় এ মাসের প্রথম দিনটিই বাঙালী জাতি নবান্ন হিসাবে পালন করে। বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব উদযাপনের জন্য মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে নতুন চালের পিঠা ও পায়েস রান্না করে ধুমধামের সঙ্গে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। গ্রামের বধূরা অপেক্ষা করেন বাপের বাড়িতে নাইওরে গিয়ে নবান্নের জন্য। পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কি আর নতুন চালের ভাতের সুগন্ধে ভরে ওঠে মন। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। এ সময়ে কোনো বাড়িতে দেখা যায় ঢেঁকিতে চাল কোটা হচ্ছে পিঠার জন্য, কোনো বাড়িতে তৈরি হচ্ছে পায়েস।
আজ সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে যন্ত্রসংগীতের মধ্য দিয়ে মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসব-১৪২৮ শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসবের এর শুভ সূচনা হলো। সেই সঙ্গে পিঠা পুলির মৌ মৌ সুগন্ধে গ্রামীণ সুখানুভুতি অনুভব করল উপস্থিত দর্শকরা।
শিশুদলের মধ্যে সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তিতে অংশ নেয় স্বরবৃত্ত, মন্দিরা শিশু পাঠশালা, স্বপ্নবীনা শিল্পকলা বিদ্যালয়, মৈত্রী শিশুদল, রঙ্গপীঠ শিশুদল, নৃত্যমঞ্চ। এ ছাড়া একক সংগীত পরিবেশন করেন বরেন্যে শিল্পী ফাতেমাতুজ জোহরা, শাহীন সামান, আবুবকর সিদ্দীকী, বুলবুল মহলানবীশ, মহাদেব ঘোষ, মহিউদ্দিন ময়না, অনীমা রায়, সঞ্জয় কবিরাজ, আরিফ রহমান, নবনীতা যায়ীদ চৌধুরী, শ্রাবণী গুহ, ডা. মাহজবীন শাওলী, সুরাইয়া পারভীন, মারুফ হোসেন, দেবপ্রসাদ দা, অনিমেষ বাউলসহ অনেকে। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আহকাম উল্লাহ, রূপা চক্রবর্তী, রেজিনাওয়ালী লিনা, শাহাদাত হোসেন নিপু, মাসকুরে সাত্তার কল্লোল, বেলায়েত হোসেন, ফয়জুল আলম পাপ্পু, নায়লা তারান্নুম কাকলি, আহসান তমাল, আজিজুল বাসার মাসুম, রূপশ্রী চক্রবর্তী। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি সঙ্গীতা ইমাম।
পল্লীকবি জসীম উদ্দীন হেমন্তে মাঠ ভরা ফসলের সম্ভারে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন-
‘আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান,
সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি-কোটার গান।
ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়,
কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায়।’
দিনবদলের পালায় গ্রামের মানুষের কাছে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে নবান্নের আনন্দ। আগে নতুন ধান গোলায় ওঠার সময়ে যেভাবে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত, তা যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পিঠা-পুলি, পায়েশের সেই আয়োজন আর তেমন চোখে পড়ে না। সময় পরিবর্তনের হাওয়ায় সংস্কৃতি পাল্টে যাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন। এখন নাগরিক সংস্কৃতির আগ্রাসনে গ্রামীণ সংস্কৃতি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
নবান্ন উৎসবের মতো গ্রামবাংলার অন্যান্য ঐতিহ্যও হারিয়ে যেতে বসেছে। আসলে এখন পারিবারিক বন্ধনটা আর আগের মতো নেই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি আত্মিক টান কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সংস্কৃতিতে। পিঠা-পুলি খাওয়ার ঐতিহ্যও হারিয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি পাল্টে যাওয়ার কারণে এখন আর নবান্ন উৎসব আগের মতো দেখা যায় না। এবার করোনা কালে নবান্নের উৎসব এখন মেকি আনুষ্ঠানিতকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ।