জীবনের জয়গান প্রতিযোগিতায় আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন সৈয়দ জামিল
- মিরহাজুল ইসলাম শিবলী, প্রদায়ক
- প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৯, ০৫:১৭ PM , আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৩৩ PM
দ্যা ডেইলি স্টার স্ট্যান্ডার্ড-চার্টাড সেলিব্রিটিং লাইফ বা জীবনের জয়গান প্রতিযোগিতার ১২তম আসরে আজীবন সন্মাননা পাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সৈয়দ জামিল আহমেদ। আগামী ২৫ অক্টোবর এই পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। মঞ্চ নাটকে বিশেষ অবদান রাখায় সৈয়দ জামিল আহমেদ এই সম্মাননা পাচ্ছেন।
এছাড়াও এবছর এই সম্মাননা পাচ্ছেন চলচ্চিত্রে সারাহ্ বেগম করবী এবং সংগীতে সৈয়দ আব্দুল হাদি। ২০০৮ সাল থেকে এই আয়োজন করে আসছে ডেইলি স্টার ও স্ট্যান্ডার্ড-চার্টার্ড ব্যাংক।
বাংলাদেশের থিয়েটার জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি সৈয়দ জামিল আহমেদ ১৯৫৫ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সৈয়দ জামিল আহমেদ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারে যোগদানের মাধ্যমে থিয়েটার জগতে প্রবেশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র অবস্থায় ১৯৭৫ সালে তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) বৃত্তি নিয়ে ঢাবি ছেড়ে নয়া দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাতে ভর্তি হন। ১৯৭৮ সালে তিনি ডিপ্লোমা ইন ড্রামাটিক আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারউইক থেকে থিয়েটারে এমএ এবং ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
সৈয়দ জামিল আহমেদ ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
নির্দেশক হিসাবে তার সুনাম বিশ্বজুড়ে। তিনি দেশে বিদেশে অসংখ্য নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয় লোকনাটক কমলা রানীর সাগরদীঘি, বেহুলার ভাসান, সংভংচংয়ের মতো প্রযোজনা যা দর্শককে আকৃষ্ট করেছিল দারুণভাবে।
কিন্তু এ ধরনের কাজের অপ্রতুলতা মঞ্চনাটক থেকে দর্শকবিমুখতা তৈরি হয়েছে। ২০১০ সালে তিনি পুনরায় এনএসডিতে নির্দেশনা দেন ম্যাকবেথ নাটক এবং ২০১২ সালে কলকাতায় শ্যামার উড়াল। সেলিম আলদীনের রচিত চাকা নাটকটি ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করে ডেনি প্যাট্রেজের সঙ্গে যৌথভাবে নির্দেশনা দেন আমেরিকায় এবং এটি তাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন। তিনি সর্বশেষ এবছর জাতীয় নাট্যশালার মঞ্চে শহীদুল্লাহ্ জহিরের উপন্যাস অবলম্বনে নাটক জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা নির্দেশনা দিয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।
জামিল আহমেদের বদৌলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রভাব পড়েছে নাটকের অন্য শাখাগুলোতে যেমন আলোক পরিকল্পনার আধুনিকায়নে তিনি শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। জামিল আহমেদের আলোক পরিকল্পনায় এবং শিল্প নির্দেশনায় প্রযোজিত হয়েছে অচলায়তন, রক্তকরবী, চিত্রাঙ্গদা, ফণীমনসা, কীর্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, ইনস্পেক্টর জেনারেল, ইডিপাস, গিনিপিগ, বিসর্জন, বিষাদ সিন্ধু, সাতঘাটের কানাকড়ি, এই দেশে এই বেশে।
তার রচনার মধ্যে রয়েছে - ‘হাজার বছর: বাংলাদেশের নাটক ও নাট্যকলা’, ৭০টি লোকনাট্যরীতি নিয়ে গ্রন্থ ‘অচিনপাখি ইনফিনিটি: ইনডিজেনাস থিয়েটার অব বাংলাদেশ’ এবং উন্নয়ন নাট্য নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী গ্রন্থ তৃতীয় বিশ্বের বিকল্প নাট্যধারা: উন্নয়ন নাট্য: তত্ত্ব ও প্রয়োগ, ‘ইন প্রেইজ অব নিরঞ্জন: ইসলাম, থিয়েটার এ্যান্ড বাংলাদেশ’, বাংলা ভাষায় অপর দুটি গ্রন্থ-উত্তর ভারতীয় মুদ্রণ সংস্থা এন্ডারসন কর্তৃক প্রকাশিত ‘রিডিং এগেইনস্ট দ্য অরিয়েন্টালিস্ট গ্রেইন: পারফরমেন্স এ্যান্ড পলিটিক্স এনটুইনড উইথ অ্যা বুদ্ধিস্ট স্টেইন’ শীর্ষক সর্বশেষ বইটিতে সৈয়দ জামিল আহমেদ নাট্যকলার এ বঙ্গীয় কথন থেকে বের হয়ে সমগ্র এশিয়া নাট্যকলা অধ্যয়নের এক বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে গেছেন। তাঁর এই বইটি মূলত এশিয়ার ৮টি পারফরমেন্স ঘিরে নির্মিত হয়েছে।
নেপালের ‘চর্যানৃত্য’ ও ‘ইন্দ্রযাত্রা’, সিকিমের ‘পাঙতো ছাম’, তিব্বতের ‘ল্হামো’, ভুটানের ‘পারো সেচু’, শ্রীলঙ্কার ‘দেবল মাড়ুয়া’, বার্মার (মিয়ানমার) ‘ইয়ক থে’ এবং বাংলাদেশের ‘বুদ্ধ কীর্তন’। এছাড়া তার প্রচুর নাট্যগবেষণা আন্তর্জাতিক জার্নালে ছাপা হয়েছে।