অনুমোদন নেই অর্ধেকের বেশি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের 

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড  © সম্পাদিত

সরকারি হিসেবে দেশে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩৯। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডগুলোর অনুমোদনে পাঠ্যক্রম ও অন্যান্য শিক্ষা এবং সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএমএসএবি) বলছে, দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫০ এর বেশি। অর্থাৎ সরকার ও সংশ্লিষ্ট তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই চলছে দেশের অর্ধেকের বেশি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষালয়। বর্তমানে দেশের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা ও আইন না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না শিক্ষা বোর্ডগুলো।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর কমিটি থেকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পরিচালনা সংক্রান্ত একটি আইন ও নীতিমালার করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা হয়নি। ফলে এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের ৫ জুন নির্দেশিত ১৯৬২ সালের রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুলস অর্ডিন্যান্সের ক্ষমতা বলে বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নীতিমালা-২০১৭ মোতাবেক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুমোদনে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) থেকে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করে তা সর্বশেষ ২০২২ সালে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা থাকলেও তা পাঠানো হয়নি।

দেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ও নীতিমালা না থাকায় সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। এতে টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি, ভর্তি ফিসহ নানা ফি ও খরচাদি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে ঠিক করে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত অনেক ফি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে থাকে যা অপ্রয়োজনীয়।

এছাড়াও বিভিন্ন খাতে গৃহীত এসব ফি শিক্ষার্থীদের পেছনে কতটুকু খরচ করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাদের। তবে, দেশে এসব নামীদামি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বিস্তার ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে কতটুকু ভূমিকা রাখছে—এমন প্রশ্নে কোনো আশার আলো দেখছেন না শিক্ষাবিদ ও দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা ও আইন না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না শিক্ষা বোর্ডগুলো। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর কমিটি থেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনা সংক্রান্ত একটি নীতিমালার করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও দেশে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের ৫ জুন নির্দেশিত ১৯৬২ সালের রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুলস অর্ডিন্যান্সের ক্ষমতা বলে বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নীতিমালার অনুমোদনে চলছে ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান। যদিও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা করে তা ২০২২ সালে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা ছিল। তবে তা এখনো পাঠানো হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ব্যয়বহুল ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তিসহ ন্যূনতম এক বছর পড়াশোনা করতে খরচ হয় সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে শুরু করে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে নানাখাতে আরও বিভিন্ন ধরনের অর্থ খরচ করতে হয় অভিভাবকদের।

দেশে আধুনিক, সময়োপযোগী এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদানের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ এবং তার বিপরীতে প্রাপ্ত সেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন ছিল শিক্ষাবিদ এবং দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।

তবে সাম্প্রতিককালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা চেষ্টা করছে খরচের সঙ্গে মানের সমন্বয় করে সেবা দিতে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো ব্যবস্থা বা কাঠামোয় দাঁড় করাতে পারছে না সরকার। ফলে অনুমোদন ছাড়াই চলছে অর্ধেকেরও বেশি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত দু’টিসহ ১৩৯টি। এর মধ্যে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেলের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ এবং ৯২। এ ছাড়াও জুনিয়র স্কুল রয়েছে ১৫টি।

দেশে সর্বশেষ গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল ও হেইলিবারি ভালুকা নামে আরও দুটি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পায়; যারা বছরের শেষ দিকে পাঠদান শুরু করার কথা রয়েছে। তবে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ইএমএসএবি) মতে, দেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা ৩৫০ এর উপরে। যারা নিয়মিত তাদের শিক্ষাক্রম পরিচালনা করছে।

দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত দু’টিসহ ১৩৯টি। এর মধ্যে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেলের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ এবং ৯২। এ ছাড়াও জুনিয়র স্কুল রয়েছে ১৫টি।

ব্যানবেইসের প্রতিবেদন বলছে, বিগত বছরের তুলনায় ২ হাজার ৬৩১ জন শিক্ষার্থী বেড়ে দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭১ হাজার ৪৫৬ জন। আর এসব শিক্ষার্থীকে পাঠদানের দায়িত্বে রয়েছেন ৯ হাজার ৬৬৬ জন শিক্ষাগুরু। এছাড়াও দেশে এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান।

দেশে বর্তমানে ব্রিটিশ কারিকুলামভিত্তিক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ‘অর্ডিনারি লেভেল’, সংক্ষেপে ‘ও’ লেভেল এবং পরবর্তী নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ‘অ্যাডভান্স’ লেভেল, সংক্ষেপে ‘এ’ লেভেল হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তী শিক্ষা-স্তরে এ-১ ও এ-২ শ্রেণিভুক্ত। এর পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হয় যুক্তরাজ্যের স্কুল-কলেজের আদলে। এছাড়াও দেশে ইংরেজি মাধ্যমের পাশাপাশি ‘ইংলিশ ভার্সন’ নামেও শিক্ষাদান হয় মাতৃভাষা ছাপিয়ে। 

রাজধানীর কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের ফি তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে বছরে প্লে গ্রুপ কিংবা কেজি ওয়ান অথবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করতে খরচ করতে হয় সর্বনিম্ন ২ হাজার ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার ডলারের সমান বাংলাদেশি মুদ্রা।

অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, স্কলাসটিকা, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা, কানাডিয়ান ট্রিলিয়াম স্কুল ঢাকা, আঁগা খান স্কুল, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা, ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকা, ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মাস্টারমাইন্ড এবং গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনালসহ দেশের শীর্ষ কয়েকটি বিলেতি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি, টিউশনসহ সংশ্লিষ্ট খাতে এ অর্থ নেয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।

এর মধ্যে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করতে বছরে ১৪ লাখ থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন শেষ করতে বছরে গুনতে হয় ৪০ লাখেরও বেশি অর্থ। প্রায় কাছাকাছি সমান অর্থ খরচ করতে হয় ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা, সদ্য প্রতিষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ বোর্ডিং স্কুল হেইলিবারি ভালুকাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও বছরে ৩০ লাখ টাকার কম খরচ করতে হয় নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

তবে এর মধ্যে তার্কিশ হোপসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপসহ নানা সুবিধা নিয়ে সাধ্যের মধ্যে পড়াশোনা করার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। আর সদ্য প্রতিষ্ঠিত গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করতে খরচ করতে হবে সর্বনিম্ন ২ লাখ ১৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা।

স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করতে বছরে ১৪ লাখ থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন শেষ করতে বছরে গুনতে হয় ৪০ লাখেরও বেশি অর্থ। এছাড়াও বছরে ৩০ লাখ টাকার কম খরচ করতে হয় নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

দেশের ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোয় কোনো নীতিমালা ও নজরদারির না থাকার ফলে তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ভর্তি ও টিউশন ফি হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ভর্তি ফি’র নামে কয়েক লাখ টাকা নেওয়ার পাশাপাশি টিউশন ফি হিসেবে মাস বা বছরান্তে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।

এ ছাড়াও কোচিং সেন্টার, বই ও স্টেশনারিসহ বেশ কয়েক ধরনের খরচ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। তবে অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, বছরান্তে নতুন করে ভর্তি ফি নিয়ে। তাদের মতে, একজন শিক্ষার্থী একটি প্রতিষ্ঠানে একবার ভর্তি হওয়ার বছর শেষে বা নতুন শ্রেণিতে আবারও ভর্তি হওয়া এবং তার অতিরিক্ত ফি গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে।

প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান করছে। এ সেবার বিপরীতেই তাদের বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এখানে শিক্ষা, সহশিক্ষাসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় জড়িত থাকে। এছাড়াও বর্তমানে প্রযুক্তি, নৈতিকতা এবং সফটস্কিলসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়—দাবি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর।

আরো পড়ুন: আইন ও নীতিমালা ছাড়াই চলছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা 

দেশের প্রচলিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি আইন ও নীতিমালা থাকা আবশ্যক জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান জানান, যদি তাদের এখনই আইন ও নীতিমালার আওতায় আনা না যায়, তাহলে এটি দেশের শিক্ষা মাধ্যমে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করবে। সেজন্য আমাদের এ নিয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং সরকারকে এ নিয়ে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।

প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান করছে। এ সেবার বিপরীতেই তাদের বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এখানে শিক্ষা, সহশিক্ষাসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় জড়িত থাকে। এছাড়াও বর্তমানে প্রযুক্তি, নৈতিকতা এবং সফটস্কিলসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়—দাবি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি ও শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, আমি কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষে না। আমি পরিকল্পিত, নীতিভিত্তিক এবং যুগোপযোগী শিক্ষার পক্ষে, যা আমাদের সন্তানদের কর্মসংস্থানের দিকে নিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের মাটি-মানুষের পক্ষের অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে। সেজন্য আমাদের নীতিনির্ধারকদের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

এদেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো চাইলেই বন্ধ করে দিতে পারব না জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা কাঠামোয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর ভূমিকা বিচার করে দেখতে হবে। এখানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর জন্য আইন ও নীতিমালা না থাকা হতাশার। এখন সময় এসেছে আমাদের এ বিষয়গুলো নিয়ে আবারও জাতীয় স্বার্থগুলো বিচার করে দেখার।

অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান মনে করেন, দেশে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার নামে বিপুল অর্থ খরচ দেশে শিক্ষা বৈষম্য তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, এখন যার হাতে টাকা আছে তিনি ইংরেজি মাধ্যমে তার সন্তানদের পড়ানোর জন্য অর্থ খরচ করছেন বা ব্যবসার শিকার হচ্ছেন। অবশ্য ব্যবসার শিকার হচ্ছেন বলা যাবে না—তারা তো জেনেই সেখানে যাচ্ছেন। এতে দেশে শিক্ষা বৈষম্য বাড়ছে; এটি চলা উচিৎ না।

দেশে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, এর সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত আছে। এ নিয়ে আমরা শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় বলেছিলাম। কিন্তু, আমরা কোনো নীতিমালা বা আইন করতে পারিনি। এটি কেন হয়নি বা সরকার করেনি—তা আমি বলতে পারব না। এ সংক্রান্ত আইন বা নীতিমালা থাকা উচিৎ। বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন বা কোনো নীতিমালার বাইরে চলা উচিৎ না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তানদের ভর্তি না করার আহবান জানিয়ে বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন না থাকলে আমরা আমাদের কোনো কার্যক্রমে তাদের অন্তর্ভুক্ত করি না। এখন কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন না থাকলে আমাদের তো কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নেই যে, শিক্ষা বোর্ড তাদের ধরে এনে নিবন্ধন নিতে বাধ্য করবে।

প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে আমরা তাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে অনুমোদন দিয়ে থাকি। কাউকে তো আমরা চাইলেই নিবন্ধনের জন্য বাধ্য করতে পারি না। দেশে এ সংক্রান্ত কোনো আইন নেই, যোগ করেন অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence