বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ বিল থেকে মুক্তি পেল হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট সংকটের কারণে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবতই ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাঁশেরহাট এলাকায় গড়ে ওঠা মেসগুলোতে থাকছেন। এমনিতে মেসে থাকতে নানান অসুবিধা থাকলেও হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট ছিল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নেয়া অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল।

অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর উপচার্যের হস্তক্ষেপে অবসান ঘটতে যাচ্ছে সেই সমস্যার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অক্টোবর মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা আবাসিক বিদ্যুৎ বিলের সুবিধা পাবে।  

শিক্ষার্থীদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপর আসে নতুন সিদ্ধান্ত- এখন থেকে আর বাণিজ্যিক নয়, আবাসিক নিয়মের রেটেই বিল দেবে শিক্ষার্থীরা।    

হাবিপ্রবির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বাঁশেরহাট এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক মেসে শিক্ষার্থীরা থাকেন। এসব মেসে আগে আবাসিক বাড়ি-ঘরের হিসেবে বিদ্যুত বিল দিতেন মেস মালিকরা। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ। এর কারণ পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ আবাসিক রেট থেকে সেসব মেস থেকে বাণিজ্যিক রেটে বিল নেয়া শুরু করে। তখন মেস মালিকরাও বেশি বিল নেওয়া শুরু করে। এর ফল হিসেবে শিক্ষার্থীদের গুণতে হচ্ছিল আবাসিক বিলের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি বিল।

এ নিয়ে একাধিকবার হাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও সুরাহা হয়নি উক্ত সমস্যার। এতে করে বিপাকে পরে হাবিপ্রবিতে পড়ুয়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের এই অন্যতম প্রধান সমস্যাটি একটি লাইভ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম কামরুজ্জামানের দৃষ্টিতে প্রথম আনে হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি। এরপর উপাচার্য এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের বাণিজ্যিক হারে ওই অতিরিক্ত বিল আর দিতে হবে না।   

এ বিষয়ে হাবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ বলেন, উপাচার্য মহোদয় শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা খুবই আন্তরিকতার সাথে আমলে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেসের বিদ্যুৎ বিল আবাসিকীকরণ কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

অধ্যাপক ইমরান পারভেজ বলেন, মেসের তথ্যাদি পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। এর অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে একটি ফর্মে মেসসমূহের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে হাবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ। আশা করা যাচ্ছে অক্টোবর মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা আবাসিক বিদ্যুৎ বিলের সুবিধা পাবে।

এ ব্যাপারে মেস মালিকবৃন্দকে দ্রুত সময়ের মাঝে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আবাসিক বিদ্যুৎ এর জন্য আবেদন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহকৃত তথ্য সংগ্রহের ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগে জমা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ইমরান পারভেজ।

তথ্য সংগ্রহ শেষে তা যাচাই-বাছাই করে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করা যাচ্ছে অতি অল্প সময়ের মাঝেই শিক্ষার্থীরা এ সমস্যা থেকে রেহাই পাবে।

বিদ্যুৎ বিল কমায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেসগুলোর মালিক সমিতিও। সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মামুনুর রশিদ বলেন, ২০১২ সাল থেকে আকস্মিকভাবে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের মেসগুলিকে বাণিজ্যিকীকরণ করে দেয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমরা মেস মালিকরাও বিব্রতকর অবস্থায় পরে যাই। বিভিন্ন সময় দফায় দফায় পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে আলোচনা করেও সমাধান হয়নি উক্ত সমস্যার। অবশেষে হাবিপ্রবি উপাচার্যের হস্তক্ষেপে উক্ত সমস্যার সমাধান হতে চলেছে।

এদিকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল থেকে রেহাই পাওয়ায় উপাচার্য সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ বিলের সমস্যার সমাধান হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে হাবিপ্রবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মোরসালিন মিয়া বলেন, বর্তমান উপাচার্য মহোদয় যে শিক্ষার্থীবান্ধন তিনি তা পুনরায় প্রমাণ করলেন। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ নয় বছর ধরে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের কাছে জিম্মি হয়ে ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায়।

একই সঙ্গে এই শিক্ষার্থী মেস মালিকদের ‘কন্টাক সিস্টেম’ বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি হাবিপ্রবি সংলগ্ন মেস মালিকদের সাথে বসে ‘কন্টাক সিস্টেম’ বাতিলের উদ্যোগ নেয় তাহলে আর কোনো সমস্যাই থাকবে না হাবিপ্রবি সংলগ্ন মেসে অবস্থানরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের। আশা করি এ ব্যাপারে প্রশাসন খুব শীগ্রই উদ্যোগ নেবে। 


সর্বশেষ সংবাদ