এক বছর ধরে বেঁচে থেকেও মৃত মুন্নী
- বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ মে ২০২০, ০৯:৪৯ PM , আপডেট: ২১ মে ২০২০, ০৯:৪৯ PM
ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি ভীষণ মনোযোগী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মরিয়ম সুলতানা মুন্নী। স্বপ্ন ছিলো ভালো চাকরি করে স্বাবলম্বী হবেন এবং পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন। কিন্তু নার্সের ভুল ইনজেকশন মুন্নীকে তার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে দেয়নি।
২০১৯ সালের ২১ মে ভুল ইনজেকশনে জ্ঞান হারানোর পর এক বছর ধরে বিছানাতেই বন্দী হয়ে আছে মুন্নীর জীবন। চোখ খুলে তাকাতে পারলেও ইনজেকশনের প্রভাবে কথা বলা এবং চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী।
মুন্নীর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তার ভাই হাসিবুল রুবেল বলেন, ‘এক বছর পার হয়ে গেলেও মুন্নী এখনো সুস্থ হয়ে ওঠেনি। পাইপের মাধ্যমে খাবার প্রদান করা হয়। চোখে খুলে তাকালেও পরিবারের কাউকেই চিনতে পারে না, কোনো কথা বলতে পারে না, চলাফেরা করতে পারে না।’
মুন্নীর চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রোগের চিকিৎসা হয়, কিন্তু এটাতো মানুষের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা। পৃথিবীর কোথাও এই সমস্যার কোনো ওষুধ নেই। তাই আপাতত: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শুধু খিচুনি বন্ধের ওষুধ দেয়া হচ্ছে।’
মুন্নীর বিষয়ে তার সহপাঠী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনজুমান আরা আঁখি বলেন, ‘ভুলটা ছিলো নার্সের। কিন্তু আজ ভুক্তভোগী শুধুমাত্র মুন্নী। এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক যে, এই ঘটনায় জড়িত সবার জীবন স্বাভাবিক থাকলেও মুন্নী আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘মুন্নী সুস্থ হয়ে উঠুক, এই ঘটনায় জড়িতরা সবাই শাস্তি পাক। এমন ঘটনার আার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
এদিকে এ ঘটনায় মুন্নীর চাচা জাকির হোসেন বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ থানায় চিকিৎসক তপন কুমার মন্ডলসহ দুই নার্স শাহনাজ ও কুহেলিকাকে আসামি করে হত্যাচেষ্টার মামলা করলেও এখনো মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ মে রাতে পিত্তথলিজনিত সমস্যার কারণে ডাক্তার তপন কুমার মন্ডলের অধীনে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন মুন্নী। কিন্তু ২১ মে সকালে হাসপাতালের ফিমেল ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ রোগীর ফাইল না দেখে গ্যাসট্রাইটিসের ইনজেকশন সারজেলের পরিবর্তে অ্যানেস্থেসিয়ার (অজ্ঞান কারার) ইনজেকশন সারভেক মুন্নীর শরীরে পুশ করেন।
এই ইনজেকশন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মুন্নী। পরাবর্তীতে এ ঘটনায় অভিযুক্ত নার্স শাহানাজ এবং কুহেলিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর।