ধুঁকে ধুঁকে চলছে হাবিপ্রবির স্থাপত্য বিভাগ
- হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৫ PM , আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৫ PM
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) স্থাপত্য বিভাগে ৮ জন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন ৫ জন। নেই পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, ডিজাইন স্টুডিও। সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ সেশনজট। প্রশাসন সমস্যা সমাধানে শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছে, বায়স্তবায়ন করেনি। এতে ধুঁকে ধুঁকে চলছে বিভাগটি।
বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপত্য বিভাগে সাতটি ব্যাচের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০। বিশ্বব্যাপী উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কমপক্ষে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বিভাগটিতে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন, যার অনুপাত ১:৭০।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত সময়ে দুটি বিজ্ঞপ্তিতে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রশাসনের ধীরগতির কারণে শুধু একজন শিক্ষক যোগদান করেন। শিক্ষক নিয়োগ করতে প্রশাসনের প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যায়। ফলে নিয়োগ প্রার্থীরা অন্যত্র চলে যান। ফলে শূন্যই থেকে যায় পদগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘১০ বছরে আমাদের মাত্র তিনটা ব্যাচ বের হয়েছে ১৪, ১৫ ও ১৬ ব্যাচ। আপনারা জানেন, আমাদের ডিগ্রি ৫ বছরের সেখানে ৬ বছর লাগলেও মানা যায় কিন্তু লাগছে ৮ বছর। ১৪ ব্যাচের সময় লেগেছে সাড়ে সাত বছর, ১৫ ব্যাচের আট বছর, ১৬ ব্যাচেরও এ রকমই সময় লেগেছে। আমরা ১৮ ব্যাচের আমাদের ব্যাচমেটগুলো সবাই বের হয়ে গেছে আর আমাদের এখনো ৫ লেভেল ১ সেমিষ্টার চলছে। আমার বাবা একজন কলেজের পিয়ন, আমি ১৮ সালে এসে ভর্তি হয়। নিজে টিউশনি করে, কষ্ট করে কোনোমতে নিজের পড়ালেখার খরচ এত দিন চালাচ্ছি। আমাদের ডিগ্রি টি এমনিতেও অনেক ব্যয় বহুল। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের জন্য আট বছর পড়াশোনার খরচ চালানো প্রায় অসম্ভব। দীর্ঘ সেশনজটের ভয়াবহতায় মানসিক চাপ নিতে না পেরে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন হাল ছেড়েও দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: অনির্বাচিত আখ্যা দিয়ে হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতিকে প্রত্যাখ্যান বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক সমাজের
আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের ডিপার্টমেন্টের ৮ জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে ৩ জনই শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। ৫ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে সাতটি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম। সামনে আরও একটা ব্যাচের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। ৫ জন শিক্ষকই তাদের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছেন। আমাদের প্রশ্ন হলো, যেখানে শিক্ষকসংখ্যা কম, সেখানে শিক্ষা ছুটি কেন দিতে হবে? আমাদের কি সময়ের দাম নাই?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সব সময় অবহেলিত ডিপার্টমেন্ট যেন আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান এর সময়কালে আমরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে গেলে আমাদের তাচ্ছিল্য করেছে। সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ এরকমও আমাদের বলেছে যে বেশি কথা বললে ডিপার্টমেন্টই বন্ধ করে দেব।’
সেশনজটের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শুধু শিক্ষক সমস্যায় না ক্লাসরুম এবং সরঞ্জাম সংকটেও পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যান্য ডিগ্রির থেকে আমাদের টেবিল চেয়ার ল্যাব রুম সব কিছুই আলাদা। আমাদের ডিগ্রির ১0 বছর হয়ে গেলেও এখনো আমাদের পড়াশোনা প্র্যাকটিক্যাল ল্যাবের জন্য আসবাবপত্র, ল্যাব টেকনিশিয়ানও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নবনির্মিত দশতলা ভবন নির্মাণের আগে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম স্যার আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিল ১০তলা বিল্ডিং হবে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের জন্য সেখানে আমরা পর্যাপ্ত স্পেস পাব আমাদের সব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গিয়েছে। ১০তলা ভবন চালু হয়েছে কিন্তু আমাদের জন্য না। আমাদের ও স্পেস দিয়েছে নাম মাত্র।’
এ বিষয়ে আর্কিটেকচার বিভাগের চেয়ারম্যান স. ম. নাঈম হোসেন মিথুন বলেন, ‘স্থাপত্য বিভাগের ডিগ্রি পাঁচ বছরের এবং ১৯৬ ক্রেডিট। আমাদের বিভাগে ৮ জন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে ৩ জন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। আমাদের বর্তমানে ৭টি ব্যাচ চলমান। ক্লাস ও ডিজাইন স্টুডিও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রায় ৩৮ জন শিক্ষক প্রয়োজন। একটা ব্যাচের ডিজিটাল স্টুডিওর জন্য দুজন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের রয়েছে মাত্র ৫ জন শিক্ষক। তাছাড়া আমাদের ক্লাসরুম ও ডিজাইন স্টুডিও টিএসসি, ওয়াজেদ ভবন এবং একাডেমিক ভবন ২-এ বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে। এ জন্য শিক্ষকরা চাইলেও দুইটা ব্যাচের ডিজাইন স্টুডিও সমান্তরালভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। যদি আমরা একটা ভবনে থাকতে পারতাম তবে সেশনজট অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে বারবার একাডেমিক ভবন-২ সংস্কাররের জন্য বলেছি। বিগত প্রশাসনের সময় আমরা শুধু ডিজাইন স্টুডিও করার জন্য দুইটা রুমের ভেতরর দেয়াল ভেঙে রুমগুলো বড় করার আবেদন করা হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান অনুমোদন দিলেও প্রশাসনিক জটিলতায় সেটিও থমকে আছে। এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগে প্রশাসনের ধীর গতি তো রয়েছেই।’
আরও পড়ুন: হাবিপ্রবিতে ক্যাম্পাসে আসলেই ছাত্রলীগ নেতাদের জুতার মালা ঝুলিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
এ সময় দিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষক সংকট ও শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে জানান। একই সঙ্গে একাডেমিক ভবন-২ সংস্কারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মফিজউল ইসলাম বলেন, ‘স্থাপত্য বিভাগের সেশনজটের পেছনে শিক্ষক সংকট মূখ্য কারণ। প্রশাসনের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ধীর গতির কারণে বিগত দুইটা বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক যোগদান করেননি। তবে আমরা গেষ্ট টিচার এর মাধ্যমে তত্ত্বীয় বিষয়গুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। ক্লাসরুম ও ডিজাইন স্টুডিও সংকট দ্রুততম সময়ে কেটে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-২-এর কিছু সংস্কার কাজ হয়ে গেলে এই সংকট কেটে যাবে’