ছাত্র হলে চুয়েট শিক্ষকের মদপানের অভিযোগ

চুয়েট
চুয়েট  © ফাইল ফটো

গভীর রাতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রদের একটি হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মদপানের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৩০ মে) শহীদ তারেক হুদা হলে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম রুম্মান উদয়। তিনি চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রভাষক।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার চুয়েটের ৪৯তম ব্যাচের (শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯) শিক্ষা সমাপনী উৎসবের শেষ দিন উপলক্ষে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় বাস্কেটবল মাঠে কনসার্ট আয়োজন করা হয়৷ কনসার্ট চলাকালে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রভাষক শাফকাত আর রুম্মান শহীদ তারেক হুদা হলে রাত চারটা নাগাত মদ পান করতে যান। এর কিছু সময় পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রী ও চুয়েটের ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনা স্থলে পৌঁছায় এবং শিক্ষার্থীদের সামনে স্বামীকে মদপান করতে দেখেন।

এসময় তিনি উত্তেজিত হয়ে উপস্থিত সকলকে বকাঝকা করেন। এর কিছু সময় হলত্যাগ করে তারেক হুদা হল ও শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের মধ্যবর্তী স্থানে আহাজারি করতে থাকেন কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস। এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জান্নাতুল ফেরদৌসকে শান্ত করে রুম্মান উদয়কে ধরাধরি করে শিক্ষক ডরমিটরিতে পৌঁছিয়ে দেন। 

বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শিক্ষকের কাছে এমন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী চুয়েটের এক শিক্ষার্থী জানান, আমি কনসার্টের এক মুহূর্তে শহীদ তারেক হুদা হলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন ওই হলের ৩য় তলায় চেঁচামেচি শুনি। ছেলেদের কাছে থেকে শুনি যে শিক্ষক ও তার স্ত্রী গন্ডগোল করছে মাদক/মদ পানের বিষয়ে। এরই কিছু পরে ওনারা হল থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় ওই শিক্ষক ওনার স্ত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং চেঁচামেচি না করার অনুরোধ করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরেক শিক্ষার্থী জানান, প্রথমে হলের তিনতলায় চেঁচামেচি শুনি। দেখি মেয়েটা একজন শিক্ষার্থীকে বকাঝকা ও থাপ্পড় দিচ্ছে। আর রুম্মানকে বকাঝকা করছে এরপর নিচে এসে ওনার বাড়িতে কল দিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছিল।

তবে ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক ও তার স্ত্রী। ঘটনার রাতে ছাত্র হলে তিনি (কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস) উপস্থিত ছিলেন না জানিয়ে বলেন, আমি ওই রাতে ছাত্র হলে যায়নি। বিষয়টি নিয়ে গুজব ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। র‍্যাগ উৎসব নিয়ে ভিজিলেন্স টিমের সদস্য হিসেবে রুম্মান স্যার হয়তো ওই হলে গিয়েছেন, সে সময় অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন।  

মদপানের অভিযোগ ও ওই রাতের ঘটনার বিষয়ে শাফকাত আর রুম্মানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এই ঘটনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি গুজব। এভাবে গুজব ছড়িয়ে চুয়েটের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।

তবে ছাত্র হলটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তারা সেদিন রাতেই ঘটনা ঘটার সময়েই  হল প্রভোস্টকে তৎক্ষণাৎ অবহিত করেন।

এ বিষয়ে শহীদ তারেক হুদা হলের প্রভোস্ট ড. নিপু কুমার দাস বলেন, সেদিন রাতে (শুক্রবার) হল থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, একজন নারী হলে ঢুকে শোরগোল করছেন। সেখানে একজন শিক্ষক ও নাকি রয়েছেন। ওই নারী নাকি শিক্ষককে চেঁচামেচি করে বকাঝকা করছেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পারি ওই শিক্ষকের স্ত্রী তিনি। এসব শোনার পর ঘটনার আঁচ করতে পারি। এরপর ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নেতৃত্বাধীন পরিদর্শনকারী দলকে জানাই। 

বিষয়টি অবগত হয়েছেন এমন জানিয়ে  চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি মাত্র। অভিযুক্ত শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ড দুঃখজনক। সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে তদন্ত কমিটি করার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ