নিয়মিত এক শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই অংশ নেননি বুয়েটের পরীক্ষায়

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে তোলা।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে তোলা।  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রাখাসহ বেশকিছু দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করছেন উচ্চশিক্ষালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৩১ মার্চ) সকাল ৭টা থেকে শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি থাকলেও তারা এটি স্থগিত ঘোষণা করেছেন। দাবি বাস্তবায়নে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে আজকের পরীক্ষায় একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী ও একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থী ব্যতীত অংশ নেননি কোনো শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকাডেমিক সময়সূচি অনুযায়ী এখন উচ্চশিক্ষালয়টির শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার-ভিত্তিক চূড়ান্ত (ফাইনাল) পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বর্জনের কারণে এসব পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি উচ্চশিক্ষালয় কর্তৃপক্ষ। আজ বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থীদের কোর্সভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

বুয়েটে আজকের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়মিত শিক্ষার্থীর বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়মিত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাগর বিশ্বাস জয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অপরজন হলেন বুয়েটের অনিয়মিত শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বিটু। তিনি এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি অব্যাহতি পেলে আবারও ক্লাসে-পরীক্ষায় ফেরেন। তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এবং তার ব্যাচ ১৬।

আরও পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত, চলছে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমামুল হাসান ভূইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আজকে রুটিন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছিল। তবে আজ কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে কিনা—তা এখনই বলতে পারছি না। এছাড়াও কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন—এমন কোনো তথ্যও জানাতে পারেননি তিনি।

এর আগে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল ৭টায় তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এদিন তারা দাবি বাস্তবায়নে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

রবিবার সকালে বুয়েটের আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা জানান, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত থাকলে দাবি আদায়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সেটাও তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের সার্বিক অবস্থান জানান দিতে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। এদিন দুপুরের পরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

রবিবার শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষা থাকলেও বর্জনে সাড়া দিয়ে এদিন আসেননি তারা। ছবি: ফাইল ফটো।

২০১৯ সালের অক্টোবরে আবরার ফাহাদ হত্যার পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। তবে গত বছর বুয়েট শিক্ষার্থীদের পদ দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলে বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা তৈরি হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পুরোনো বিজ্ঞপ্তিটি আবার ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়।

গত বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালায়।

এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে গতকাল বিকেলে শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি বুয়েট প্রশাসনকে লিখিত আকারে জানান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বুধবার মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে “বহিরাগতদের” প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন।

আরও পড়ুন: ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

ইমতিয়াজকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, হলের সিট বাতিলসহ তার সহযোগীদেরও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারেরও দাবি শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দিচ্ছে তার ব্যাখ্যাও চেয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। এসব দাবি আদায়ে শনি ও রবিবারের (৩০ ও ৩১ মার্চ) পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

 

সর্বশেষ সংবাদ