ছাত্রীদের ভিসিবিরোধী আন্দোলনে নিতে হল গেটে লাত্থি-ভাঙচুর ছাত্রলীগের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২১ PM , আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২১ PM
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের ভিসিবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বেগম সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা। এ খবর পেয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের একাংশ ওই হল গেটে এসে রীতিমতো তাণ্ডব শুরু করেন। বুধবার (৫ এপ্রিল) মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রীদের হল থেকে বের করতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী। হল গেটে একের পর এক লাত্থি ও আঘাত করতে দেখা যায় তাদের। এমনকি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিতে দেখা যায় তাদের।
এ সময় ছাত্রলীগের নাম পরিচয় ব্যবহার করে বেশ কয়েকজন ছাত্রকে ছাত্রীদের দিকে তেড়ে আসতে দেখা যায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হলে অবস্থানরত ছাত্রীরা। ছাত্রী হলের ফটকে হামলাকারীরা পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের অনুসারী বলে পরিচিত।
এর আগে স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে মানদণ্ড কমানোর দাবিতে মধ্যরাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তকে বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সংগঠনটির একাংশের এ আন্দোলনে হলের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করলে হলের গেটে এমন ভাঙচুর চালানো হয়।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী বেশ কয়েক জন ছাত্রী। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত আটটায় হলের গণরুমে ছাত্রলীগ নেত্রী ও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের অনুসারী সিনথি কানিজ ফারহানা, চৈতালি রাশ, তাফরিন মল্লিক ও রুপা আন্দোলনে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে।
বেশ কয়েকজন ছাত্রী যেতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই ৪ ছাত্রলীগ নেত্রী তাদের ভিডিও ধারণ করেন। ছাত্রীরা অভিযোগে আরও বলেন, অপ্রীতিকর অবস্থায় তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে অবরোধমুক্ত হলেন পবিপ্রবি উপাচার্য
এদিন রাত ছাড়াও ভর্তির মানদণ্ড নিয়ে ছাত্রলীগের এ আন্দোলনে আরও কয়েক দফা অবরুদ্ধ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সর্বশেষ গতকাল বুধবার রাত ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত বাসভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। একই দিন দুপুরে উপাচার্যসহ শিক্ষক সমিতির নেতাদের টিএসসি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক জানান, ছাত্রী হলে হামলাকারীদের সাথে ছাত্রলীগের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা এই ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। একই সাথে ছাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর বলেন, ছাত্রলীগের অগ্রজদের স্নাতকোত্তরে ভর্তির সুযোগ দিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা সমর্থন জানিয়েছেন। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে যোগ দিতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা এতে বাঁধা দেন। এ নিয়ে সাবেক ও বর্তমান নেতকর্মীদের সাথে বাকবিতাণ্ডা হয়।
তবে ছাত্রী হলে তাণ্ডব চালানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ কারও অপকর্মের দায় নেবে না।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু ছাত্রীদের লিখত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে শৃঙ্খলা বোর্ডের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।