হতাশ ছিলেন ফারদিন, দিয়েছেন ৩০ বছরের বেশি না বাঁচার পরামর্শ

ফারদিন নূর পরশ
ফারদিন নূর পরশ  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধারের পর ধারণা করা হচ্ছিল তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তবে ৩৮ দিন তদন্তের পর ডিবি বলছে, প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দেখে মনে হচ্ছে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। হতাশা থেকে তিনি এটি করতে পারেন বলে ধারণা করছে ডিবি। তবে এ বিষয়ে এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি গোয়েন্দা সংস্থাটি।

এরমধ্যে ডিবির তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) ডিবি কার্যালয়ে আসেন বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী। প্রায় তিন ঘণ্টা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ শেষে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, ডিবির তদন্তে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। ডিবির কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত দেখে এগুলো প্রাসঙ্গিক বলে দাবি করেন তারা।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনাটি আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা তার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলেছি। বান্ধবী বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ব্যাখ্যা দিয়েছি। কিন্তু তার সঙ্গে কেউ ছিলেন না, তিনি একা একাই বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর একপাশে তিনি নামেন। কিন্তু তিনি চনপাড়ার দিকে যাননি, সেখানে কোনো ঘটনাও ঘটেনি। ঘটনার ৩৮ দিন তদন্ত শেষে এটিকে আমরা সুইসাইডাল ঘটনা বলেছি। এ বিষয়ে বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী এসে তিন ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা তার পরিবার, বন্ধু-আত্মীয়দের বলেছি, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, ফারদিন সেদিন রাতে বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যান। অথচ গত দুই বছরেও তিনি এসব এলাকায় যাননি। ফারদিন দুই বছরে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছেন, আমরা সবার কাছে খোঁজ-খবর নিয়েছি।

আরও পড়ুন: ফারদিনের মৃত্যুতে বুশরার দায় নেই, চার্জশিটে বলবে ডিবি

ফারদিন বিভিন্ন উপন্যাস পড়তেন উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বিভিন্ন সময় হতাশার কথা বলেছেন। এক বান্ধবীকে লিখেছেন— ‘৩০ বছরের বেশি কারো বাঁচার দরকার নাই’। আবার কাউকে লিখেছেন—‘যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ কষ্ট পাবে’। আরেকজনকে লিখেছেন—‘কোন একদিন শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমি আত্মহত্যা করেছি’। ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন শুক্রবারেই।

ডিবি প্রধান বলেন, ফারদিনের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। তাছাড়া ফারদিনের মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ধস্তাধস্তির আলামত নেই। তার মোবাইল-টাকা পকেটে ছিল। হাতে ঘড়ি ছিল, কোনকিছু খোয়া যায়নি। বুয়েটের ৪০ শিক্ষার্থীও এসব আলামত দেখে একমত পোষণ করেছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, ফারদিন ইন্ট্রোভার্ট ছিলেন। তার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল, কিন্তু কাউকে কিছু বলেননি। ফারদিন লিখেছেন, ৯৫ ভাগ মানুষের জীবন পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ। হয়তো পরিবার তাকে বাসায় থাকতে বলতেন, কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন না। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাই, এখানে মার্ডারের কোনো লক্ষণ নেই। যেসব ব্রিজে তিনি গিয়েছেন সেদিন রাতে এর আগে দুই বছরেও সেই সব এলাকায় যাননি।

গত ৪ নভেম্বর রাত থেকে নিখোঁজ হন বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ। এর তিনদিন পর ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

মরদেহ উদ্ধারের দুদিন পর ১০ নভেম্বর ফারদিনের বান্ধবী ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী আমাতুল্লাহ বুশরাসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে রামপুরা থানায় মামলা করেন ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা।

এ ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হয়। ঘটনার বিষয়ে র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আসতে দেখা যায়। আলোচনায় আসে মাদক কারবারিদের সঙ্গে ফারদিনের সম্পর্ক আর নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া এলাকা। তখন র‌্যাব দাবি করে, ফারদিনকে চনপাড়ায় খুন করেছে মাদক কারবারিরা। অন্যদিকে ডিবি পুলিশ সেসময় দাবি করে চনপাড়ায় যাননি ফারদিন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence