দুই দশক পর বাড়ছে এমপিওভুক্তদের উৎসব ভাতা, বাদ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষকরা

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক  © সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির পর এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর একটি প্রস্তাব তৈরি করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, শিক্ষকরা পাবেন মূল বেতনের ৫০ শতাংশ এবং কর্মচারীরা পাবেন ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা। বর্তমানে এই হার যথাক্রমে ২৫ ও ৫০ শতাংশ।

এই প্রস্তাবটি ঈদুল আজহার আগেই অনুমোদন পেলে এবারের ঈদেই তারা বাড়তি ভাতার সুযোগ পাবেন। ২০০৪ সালে প্রথমবার এই ভাতা চালু হওয়ার পর থেকে আজ অবধি বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। যদিও শিক্ষক সংগঠনগুলো শুরু থেকেই শতভাগ উৎসব ভাতার দাবি করে আসছিল।

বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। তাদের জন্য এক ঈদে অতিরিক্ত ২৪০ কোটি টাকা এবং বছরে ৪৮০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যে অর্থ উদ্বৃত্ত রয়েছে, সেখান থেকেই এই খরচ মেটানো হবে বলে জানানো হয়েছে।

তবে এই উদ্যোগের আওতায় আসেনি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার মাদ্রাসা ও ২ হাজার ২২২টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য কোনো প্রস্তাব এখনো তৈরি হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শাখা জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি।

এই বৈষম্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষক নেতারা। তারা বলছেন, সব সময়ই স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকরা সমান সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এসেছেন। এবার উৎসব ভাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সেই নিয়ম লঙ্ঘন করা হলে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শতভাগ উৎসব ভাতার দাবিতে লাগাতার কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষকরা। তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। তবে শিক্ষক নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ১৫ মে’র মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে তারা আবার রাজপথে নামবেন।

এই প্রস্তাব অনুমোদন পেলে আগামী বাজেটেও এই বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে বাদ পড়া মাদ্রাসা ও কারিগরি খাতের শিক্ষকরা নিজেদের অবহেলিত মনে করছেন এবং সমান সুবিধা না পেলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসবভাতা আংশিক বাড়ানো হলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করব না। তবে আগামী বাজেট থেকে যেন শতভাগ উৎসবভাতা, সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা দেওয়া হয় সে দাবি থাকবে। আর ১৫ মের মধ্যে এমপিওভুক্ত উৎসবভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে আমরা ফের রাজপথে নামব। আমরা ঈদুল আজহা থেকেই বর্ধিত হারে উৎসব ভাতা পেতে চাই।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ শাখার উপপরিচালক কে এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় এখনও মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও শাখার উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, আমরাও কোন নির্দেশনা পাইনি। তাই কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসবভাতা বাড়ানোর কোন প্রস্তাব প্রস্তুত করিনি।


সর্বশেষ সংবাদ