এইচএসসি নিয়ে কী থাকছে শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে
- শিউলী রহমান
- প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৩০ AM , আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০, ১০:০১ AM
করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ছয় মাস আগে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থগিত হয়ে গেছে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও। এরমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও এক দফা বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর করা হয়েছে। তবে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এ অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে চাপে রয়েছে সরকারও। সেজন্য আজ এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত জানাতে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়েছে। আজ বুধবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন। তবে পরীক্ষার রুটির প্রকাশ করা হবে কিনা তা পরিষ্কার নয়।
যদিও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শুরুতে জানিয়েছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অন্তত ১৫ দিন পর পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলে মন্ত্রী জানান, পরীক্ষার আগে অন্তত চার সপ্তাহ সময় পাবেন পরীক্ষার্থীরা। সর্বশেষ আজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপনাদের সময় জানিয়ে দেব। যখন সময় হবে, তখন বিস্তারিত জানানো হবে। আজ (মঙ্গলবার) জানাতে পারব না। কাল হয়তো আপনাদের সঙ্গে কথা বলব।’ অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে তিনি সুনির্দিষ্ট কী বিষয় নিয়ে কথা বলবেন তা এখনও পরিষ্কার নয়।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বশীলটা এইচএসচি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে ইতোমধ্যে তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু তথ্য জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শরু করতে চায় সরকার। প্রস্তুতিও এগিয়েছে অনেকখানি। এছাড়া বিষয় কমানোর যে গুঞ্জন চলছিল তাও নাকচ করে দিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন, এই পরীক্ষা আয়োজনে দুটি বিকল্প সামনে রাখা হয়েছে। প্রথমত, প্রতি বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর কমানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যাবহারিক না থাকা বিষয়গুলোতে পূর্ণ মান ৫০ শতাংশ করে কমানোর চিন্তা আছে। ব্যাবহারিকসহ বিষয়গুলোয় ব্যাবহারিক নম্বর ঠিক রেখে এমসিকিউ ও সৃজনশীল নম্বর ৫০ শতাংশ কমানো হবে। অন্য প্রস্তাবে এমসিকিউ কিংবা সৃজনশীল অংশের যেকোনো একটি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে।
এ ক্ষেত্রেও ব্যাবহারিকের নম্বর ঠিক রেখে নম্বর সমন্বয় করা হতে পারে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট কলেজকে ব্যাবহারিক নেয়ার অনুমতি দেয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বোর্ডগুলো। তবে বিষয় কমানোর কথা নাকচ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বিষয় নিয়েই বিস্তারিত কথা বলতে পারেন শিক্ষামন্ত্রী।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রেখে রুটিন তৈরিতে নতুনত্ব আনার পরিকল্পনা রয়েছে। দৈনিক একটির বেশি পরীক্ষা না রাখা ও প্রত্যেক দিনই পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। পরীক্ষার পর কেন্দ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এই উদ্যোগ। তবে ধর্মীয় ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরীক্ষা থাকবে না।
একটি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরীক্ষার কেন্দ্র ও সিটপ্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতি বেঞ্চে একজন করে ‘জেড’ আকারে বসানো হবে পরীক্ষার্থীদের। এজন্য কেন্দ্র সংখ্যা ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেন্দ্রে গড়ে থাকবে ৬৫০ জন করে। এর আলোকে প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।
আরেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, করোনার আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানো শেষ করে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। শুধু মাদরাসা বোর্ডের প্রশ্নপত্র প্রেসে সংরক্ষিত ছিল। সেগুলোও পাঠানো শেষ হয়েছে। এই প্রশ্নেই পরীক্ষা নেয়া হবে। আর কোন পরিবর্তন হলে কেন্দ্র সচিবকে জানিয়ে দেয়া হবে।
গত ১ এপ্রিল চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এবার ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর জন্য প্রায় দুই হাজার ৫০০ কেন্দ্রে প্রস্তুত করেছিল ১১টি শিক্ষা বোর্ড। তবে করোনার কারণে এখন প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রায় পাঁচ হাজার কেন্দ্র প্রয়োজন হবে।