ভাইরাল হওয়া ‘আমরা ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান’ ভিডিওটি ২০১৭ সালের

প্রথম দুটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে নতুন করে আপলোড করা হয়। তৃতীয়টি ২০১৭ সালে আপলোড করা হয়।
প্রথম দুটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে নতুন করে আপলোড করা হয়। তৃতীয়টি ২০১৭ সালে আপলোড করা হয়।  © সংগৃহীত

ব্যক্তিগত গাড়িতে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে এক বাসচালকের সঙ্গে ক্ষমতার দাপট দেখালেন একজন ‘শিক্ষক’। এমনকি নিজেকে ‘ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান’ দাবি করে তার পা ধরাতে বাধ্য করলেন তিনি। গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফেসবুকে বেশকিছু আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে এই ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর তাহলে ওই শিক্ষক কি গড়ার কারিগর? সন্ত্রাস গড়ার? তার থেকে কী শিখবে শিক্ষার্থীরা? সেতো শিক্ষক? তাহলে আবার মাস্তান হলেন কীভাবে?

৪৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, “মুখে দাড়িওয়ালা পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী এক ব্যক্তির শার্টের কলার ধরে নাজেহাল করছেন কালো পাঞ্জাবি পরিহিত এক ব্যক্তি। এসময় তিনি ওই লোকের শার্টের কলার ধরে এদিক সেদিক টেনে টেনে বলেন, ‌‌‘পুলিশ ডেকে তোকে মাইরা থানায় দিব, এখন আমি, ঢাকা ভার্সিটির গাড়ি এটা। ....শিক্ষক বসে আছে গাড়িতে, শিক্ষক, আমিও শিক্ষক। কোনো রাস্তার মাস্তান না আমি। এলাকার মাস্তান আমরা। ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান। বুঝতে পারছোস। তুই গাড়িতে লাগাইছস। স্বীকার কর তুই লাগাইছিস। পায়ে ধইরা মাফ চা।”

পুরো সময় ধরে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিটি নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেও তাতে কান দেননি ওই ‌‘শিক্ষক’। এক পর্যায়ে সেই বৃদ্ধ পা ধরে মাফ চাইলেন, তিনি (শিক্ষক) বললেন, ‌‘যা এবার যা, সাবধানে গাড়ি চালাইবি। বুঝেশুনে গাড়ি চালাইবি।’ এরপর ওই ‘শিক্ষক’ নিজের গাড়িতে করে স্থান ত্যাগ করেন।

ভিডিওটি ২০১৭ সালের এবং ঢাবির শিক্ষক দাবি করা সেই ব্যক্তি ‘ঢাবির নন’

ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ঘটনাটি ২০১৭ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি কোন এক সময়ের। তবে ঘটনা রাজধানীর কোন একটি সড়কের। সেই সময় ক্ষমতার দাপট দেখানো ব্যক্তিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক নন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেছিলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি ঢাবির শিক্ষক নন।

তাছাড়া তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেছিলেন, এসব বিষয়ে সঠিক তথ্য না জেনে তাদেরকে ঢাবির শিক্ষক পরিচয় দিয়ে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।

সেই সময়ে গাড়িচালক ওই ব্যক্তিকে নাজেহালের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝড় ওঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাবির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হওয়া ওই ব্যক্তির শাস্তিও দাবি করেছিলেন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে শিক্ষকের নাম ব্যবহার করে অপকর্মে লিপ্ত হওয়া ওই ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

চ্যানেল আই অনলাইনের অনুসন্ধানে সে সময় জানা গিয়েছিল, নিজেকে ‘ঢাবির শিক্ষক’ দাবি করা রিয়াদ তানসেন নামের ওই ব্যক্তি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। ১৭ জুন চ্যানেল আই অনলাইনে রাস্তায় মাস্তানি করা ব্যক্তি ঢাবির শিক্ষক নয়’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

এর আগে ১৬ জুন জাগো নিউজে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিকে পা ধরাতে বাধ্য করলেন ‘ঢাবি শিক্ষক’! শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “গাড়িতে ধাক্কা দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর সড়কে এক বাসচালকের সঙ্গে ক্ষমতার দাপট দেখালেন একজন শিক্ষক। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী বাসচালককে তার (শিক্ষকের) পা ধরাতে বাধ্য করলেন। যিনি নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দাবি করেছেন। এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ‌‘শিক্ষক’ এর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তিনি ঢাবির শিক্ষক কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।”

১৭ জুন ডেইলি বাংলাদেশে “পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিকে পা ধরাতে বাধ্য করলেন ‘ঢাবি শিক্ষক’!” শিরোনামে প্রকাশিত হয় আরেকটি প্রতিবেদন। পরবর্তীতে ১৮ জুন পূর্বপশ্চিমে ‘সেই মাস্তান ঢাবি শিক্ষক নন’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিগত গাড়ি ধাক্কা দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর সড়কে এক বাসচালকের সঙ্গে ক্ষমতার দাপট দেখানো ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক নন। 

ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে সেই সময় ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছিল-


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence