সহজে আর পাওয়া যাবে না জিপিএ-৫!
- শিউলী রহমান
- প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২০, ১১:২০ AM , আপডেট: ০২ মার্চ ২০২০, ১২:০৫ PM
পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল নির্ধারণে পরিবর্তন আসছে। এখন থেকে আর সহজেই পাওয়া যাবে না জিপিএ-৫ (এ প্লাস)। কারণ জিপিএ-৫ পেতে হলে পরীক্ষার্থীকে ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পেতে হবে। ফলে সর্বোচ্চ এই গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ বা জিপিএ-৫ পাওয়া কঠিন হবে বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল নতুন গ্রেডে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা থেকে নতুন নিয়মে ফল প্রকাশ করা হবে।
এ নিয়ে ফলের সর্বোচ্চ সূচক হবে জিপিএ-৪, বর্তমানে জিপিএ-৫। নতুন গ্রেডে নম্বরের শ্রেণিব্যাপ্তি হবে আটটি। বর্তমানে শ্রেণি আছে সাতটি। শিক্ষা বোর্ডগুলো নতুন গ্রেড ঠিক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন নিয়মে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ এবং কোচিং ও প্রাইভেটে নির্ভরতাও বাড়বে। কোনো কোনো শিক্ষাবিদ মনে করেন, ওপরের দিকে স্তর একাধিক হওয়াই ভালো। এতে যারা খুব ভালো , তারাই সেটা অর্জন করবে।
বর্তমানে ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে নম্বর পেলে জিপিএ-৫ বলা হয়।লেটার গ্রেডে বলা হয় ‘এ’ প্লাস। নতুন গ্রেডে প্রতি স্তরের জন্য নম্বরের পার্থক্য ১০ নম্বর। এতে সর্বোচ্চ সূচক পাওয়ার জন্য ৯০ থেকে ১০০ পেতে হবে। আর ৩৩ থেকে ৩৯ পেলে ‘ডি’ গ্রেড বা পয়েন্ট-১ বলা হবে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও বিদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা এবং জিপিএ-৫ নিয়ে উন্মাদনা কমানোর লক্ষ্যে জিপিএ বা স্কেল ৪ ধরে নতুন গ্রেডে ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেরই পরীক্ষা-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন গ্রেড জিপিএ-৫-কে জিপিএ-৪ করা ছাড়া কোনো পরিবর্তন নেই। এতে ফলাফলে কোনো গুণগত পরিবর্তন আসবে না। উত্তরপত্র মূল্যায়নব্যবস্থা উন্নত করতে শিক্ষকদের যোগ্য করে তোলা জরুরি বলেও মত তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য করার কথা বলা হলেও নম্বর বিভাজনে মিল রাখা হয়নি। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে নম্বর পেলে সিজিপিএ-৪ বলা হয়। কিন্তু বোর্ডের নতুন গ্রেডে জন্য ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পেলে সেটিকে জিপিএ-৪ বলা হবে। ফলে জিপিএ-৫-এর জন্য মাতামাতি হতো, এখন জিপিএ-৪ পাওয়ার জন্য বেশি মাতামাতি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
নতুন গ্রেডের পক্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কায়কোবাদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নম্বরের শ্রেণিব্যাপ্তি বেশি হওয়া ভালো। শিক্ষার্থীদের সামনে চ্যালেঞ্জ থাকায় যারা খুব ভালো, তারাই সর্বোচ্চ গ্রেড পাবে। তবে শিক্ষার মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় উপকমিটি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, বিচার-বিশ্লেষণ করেই নিয়মটি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। তবে সার্বিকভাবে এটি ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে ফলাফলে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে গ্রেড পদ্ধতি চালু করা হয়। ২০০৩ সালে সর্বোচ্চ ৫ সূচকের ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করা হয়।
এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের ফলের মতো আগামী বছর থেকে প্রমিতকরণ করে ফল প্রকাশ করা হবে। এর মাধ্যমে বোর্ড, বিভিন্ন বিষয়, এমনকি আগের বছরের ফলের মধ্যে একধরনের সামঞ্জস্য রক্ষা করা হবে।