ই-কমার্স খাতে গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে সরকার কী করছে

অনলাইন কেনাকাটা
অনলাইন কেনাকাটা  © প্রতীকী ছবি

দেশে গত কয়েক বছর ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর গোটা খাতটি এখন ভুগছে আস্থার সংকটে।

সম্প্রতি খুব অল্প সময়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতসহ গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে।

শুরুতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে 'অস্বাভাবিক' সব অফার দেয়। পরে দেখা যায় যে অগ্রিম অর্থ নিলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তারা সময়মত পণ্য সরবরাহ করছে না।

ভোক্তাদের অভিযোগ, পণ্যের টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে তারা পণ্য পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য সরবরাহকারী বা মার্চেন্টরা বলছেন, দিনের পর দিন তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না।

দীর্ঘ সময় ধরে এ অর্থ আটকে থাকছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। কয়েক মাস পর "পণ্য স্টকে নেই" বলে গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহক বা মার্চেন্টদের সাথে কোন যোগাযোগই রাখছে না ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো

প্রতারণার ফাঁদ
এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব অল্প সময়ে লাখ লাখ গ্রাহক হয়ে যাওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন নানা আকর্ষণীয় অফার। শুরুর দিকে এক ধরনের ডিসকাউন্ট/সাইক্লোন অফার চালু করে ২০%-১৫০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক দেয়া হবে বলে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ ১০০% অফারে কোন পণ্য কেনা মানে গ্রাহক মূল টাকাও ফেরত পাবেন, আবার পণ্যও পাবেন। এমন অবিশ্বাস্য অফার পেয়ে লাখ লাখ গ্রাহক ওই ই-কমার্স সাইটগুলোতে পণ্য অর্ডার করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন।

শুরুতে তারা কিছু গ্রাহকের কাছে পণ্য সরবরাহ করলেও কয়েকদিনের মাথায় বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়েও যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ, সেইসঙ্গে মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগের পাহাড় জমতে থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতটি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

নির্দেশনা আছে কাগজে কলমে
দেশের ই-কমার্স খাতে আস্থার জায়গা ধরে রাখতে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনায় নীতিমালা ও নির্দেশিকা জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এসব নির্দেশনা কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে এর কতোটা প্রয়োগ হচ্ছে তা নিয়ে নজরদারির যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। নতুন নির্দেশিকায় প্রধানত পণ্য সরবরাহ ও রিফান্ড দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও ক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে।

ভিন্ন শহরে অবস্থান করলে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য স্টকে না থাকলে সেটার কোন পেমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না। আগাম পরিশোধ করা টাকা পণ্য সরবরাহের পরই বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

ক্রেতার অগ্রিম মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্যটি ডেলিভারি-ম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে তা টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে জানাবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি-ম্যান পণ্যটি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবে।

এতে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য বা সেবা ডেলিভারি-ম্যানের কাছে হস্তান্তর করার মতো অবস্থায় না থাকলে ই-কমার্স কোম্পানি পণ্য মূল্যের ১০ শতাংশের বেশি অর্থ অগ্রিম নিতে পারবে না।

তবে নীতিমালা ভঙ্গ করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় ,যেমন কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করা। কিন্তু নীতিমালা ভঙ্গ করলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

এমন অবস্থায় ই-কমার্সে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এসব নীতিমালার আলোকে শিগগিরই আইন প্রণয়ন করার কথা জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক এবং ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান।

মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ
নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, ক্রেতাদের আস্থা ফেরাতে ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানালেও দায়ীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

একের পর এক চিঠি/ নোটিশ দিয়ে এবং দফায় দফায় বৈঠক করে নানাভাবেই এই প্রক্রিয়াকে বিলম্ব করা হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাফিজুর রহমান।

তার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে ই-কমার্স সাইটে আগের চাইতে অনেক সুস্থ অবস্থা বিরাজ করছে। এখন আর প্রতারণার কোন অভিযোগ আসছে না। তবে যাদের টাকা ও পণ্য আটকে আছে সেগুলো উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি ডিসিপ্লিনের মধ্যে আনতে, যেন তারা প্রত্যেকের পাওনা আগে পরিশোধ করে। এবং কিভাবে সমস্যার সমাধান করবে সে বিষয়ে তাদের মতামত ও পরিকল্পনার কথা আমরা শুনছি।

যেসব প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের পণ্য দিচ্ছে না বা মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধ করছে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

“আমরা গ্রাহকদের বলবো তারা যেন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ দায়ের করেন বা ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করেন। আর যেসব মার্চেন্ট আছেন তারা যেন ব্যবসায়িক চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে প্রচলিত আইনে আদালতে মামলা দায়ের করেন”।

আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন
দেশে এর আগেও এমন অবিশ্বাস্য অফার দেখিয়ে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আগেভাগেই কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, তারা ধারণা করতে পারেননি যে এর মাধ্যমে দুর্নীতি, প্রতারণা, অস্বচ্ছতার আশ্রয় নেয়া হবে।

শুরুর দিকে বিষয়টা সেভাবে সামনে আসেনি। তাই কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তিনি জানান। তখন ভাবা হয়েছিল, ব্যবসার শুরুতেই যদি কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তাহলে ব্যবসার প্রসার থেমে যেতে পারে।

তবে ঘটনাটি ডালপালা গজানোর আগেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
হাফিজুর রহমান বলেন, একটা সময়ে কিছু প্রতিষ্ঠান তেল, গাছ বা কল্পিত বস্তু বিক্রি করে মানুষজনের থেকে টাকা নিয়েছিল। আর এবারে পণ্য বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপনে ফাঁসানো হয়েছে। প্রতারণার কিছুটা সামঞ্জস্যতা ছিল। কিন্তু সেটা শুরুতে আঁচ করা যায়নি।

প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শুরুতে একদমই কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি- এমন অভিযোগে দ্বিমত পোষণ করে তিনি জানান, ২০২০ সালের জুলাই মাসে তারা একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একজন গ্রাহকের অভিযোগ তদন্ত করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতারণার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ৭টি জায়গায় চিঠি দিয়ে জানানো হয় যেন তারা পুনরায় তদন্ত করে ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু তখন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি পুনরায় খতিয়ে দেখার জন্য পাঠানো হলে প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয় ও সম্পদে মারাত্মক অসামঞ্জস্যতার বিষয়টি সামনে আসে। ‘নতুন প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর আমরা সিরিয়াস অ্যাকশনে যাই,’ বলেন হাফিজুর রহমান।

এছাড়া ব্যবসার ক্ষেত্রে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেট তৈরি করতে ডিসকাউন্ট অফার দেয়ার অধিকার আছে।

‌এর বিরুদ্ধে ই-কমার্স বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় কোন শর্ত দেয়া হয়নি। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ইচ্ছেমত অফার দিতে পারে। কিন্তু সেই ডিসকাউন্ট কোম্পানির নিজের অর্থে দিতে হবে বলে তিনি জানান।

কিন্তু দেখা গেছে দুই একটা কোম্পানি ক্রেতার অর্থ নিয়ে এগুলো করেছে যা অন্যায়, এবং এ কারণেই এতো ঝামেলা হয়েছে বলে মনে করেন হাফিজুর রহমান।

সরকার কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে
ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ওঠার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত মাসে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা পদ্ধতি জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সেটাও জানতে চাওয়া হয়।

এরই মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের মোট সম্পদ ও দেনার পরিমাণ সেইসঙ্গে কতজন গ্রাহকের কি পরিমাণ টাকা আটকে আছে সে বিষয়ে জানিয়েছে।

দোসরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসা পদ্ধতি এবং কিভাবে তারা তাদের দেনা পরিশোধ করবে, সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও (সিআইডি) কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। সেটার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরেও প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে।

বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের কার্ডের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কেনার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। পণ্য সরবরাহকারী বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও এখন এসব কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে।

এরই মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আস্থার সংকট কাটাতে কী করছে ই-ক্যাব
এই খাত সংশ্লিষ্টরাও স্বীকার করছেন, দেশে ই-কমার্স এখন আস্থার সংকটে ভুগছে। এ বিষয়ে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর সমিতি ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, ই-কমার্সে ভোক্তা ও মার্চেন্টদের আস্থা ফেরাতে এবং ই-ক্যাবের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে তারা কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

তারা শুরু থেকেই সংগঠনের সদস্যদের ই-কমার্স খাতের নীতিমালাটি মেনে ব্যবসা পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তাদের কাছে যেসব অভিযোগ এসেছে, সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আলোচনার মধ্যে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এর মধ্যে ভোক্তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন সেগুলোর মধ্যে ই-ক্যাব সদস্যভুক্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, চারটি প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। নয়টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে দ্বিতীয় দফা তদন্ত চলছে।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেটা খুব বেশি হলে সদস্য পদ বাতিল বা স্থগিত করা। এরচেয়ে বেশি কিছু করা এখতিয়ার ই-ক্যাবের নেই বলে তিনি জানান।

ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের কাছে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেখানে ই-ক্যাবভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ দেয়া হয়েছে যেন তারা দ্রুত সব সমস্যার সমাধান করেন।

এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক অফার দিচ্ছে সেটির একটি তালিকা ইতোমধ্যে প্রতিযোগিতা কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কোন প্রতারণা করা হচ্ছে কিনা কমিশন সেটা খতিয়ে দেখছে বলে তিনি জানান।

সরকারের করণীয় কী
ই-কমার্সে ভোক্তার আস্থা সবচেয়ে বড় শর্ত। কিন্তু এমন অঘটন ঘটলে মানুষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারাবে যা এই শিল্পকে ক্ষতির মুখে ফেলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।

এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় যে নীতিমালা ও নির্দেশিকা জারি করেছে সেটা যদি মেনে চলা যায় তাহলে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা যাবে ও আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু এই নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পক্ষে তিনি নন।

তার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে আটকে যাওয়া টাকা বা পণ্য উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যাবে।

এক্ষেত্রে সরকারকে আলাদা একটি সেল বা কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, যাদের দায়িত্ব হবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করা এবং সেগুলোতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে আনা।

একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রেতা বাড়াতে নানা ধরণের ডিসকাউন্ট অফার দিতে পারেন, কিন্তু এটা ব্যবসায়ী কৌশল নাকি প্রতারণা সেটা মনিটর করার দায়িত্ব হবে ওই কমিটির।

এছাড়া মানুষ যেন সহজেই ডিজিটাল কমার্স সেল বা ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন সেজন্য একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে।।

এছাড়া ই-কমার্সের ভোক্তা, মার্চেন্ট সব পর্যায়ে পরিষ্কার ধারণা দেয়ার পাশাপাশি করনীয়/বর্জনীয় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সৈয়দ আলমাস কবীর।

তিনি বলেন, “ভোক্তারা অনলাইনে অফারের ফাঁদে না পড়ে যেন যাচাই করে দেখেন, প্রতিষ্ঠানটির রিভিউ পড়েন, শর্তগুলো দেখে নেন, আর মার্চেন্টদের বোঝাতে হবে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা করা অগ্রাধিকার দেয়া কেন জরুরি। প্রতিশ্রুতি রক্ষা, সেইসঙ্গে স্বচ্ছ রিফান্ড ও রিটার্ন নীতি থাকলে ব্যবসার প্রসার এমনিতেই বাড়বে।”

এদিকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজনেস মডেল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মি.কবির। তার মতে এসব মডেল বাস্তবসম্মত নয়। তবে দেরিতে হলেও বিষয়টি যেহেতু নজরে এসেছে, তাই এখনও পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে তিনি আশা করছেন।

দেশে ই-কমার্সের প্রসার
দেশে ই-কমার্স সাইটের যাত্রা এক দশক আগে শুরু হলেও এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা প্রায় ২০১৫ সালের দিকে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও দেশব্যাপী লকডাউনের সময়ে বিভিন্ন ই-কমার্স ও ফেসবুকভিত্তিক এফ-কমার্স সাইটগুলো হয়ে ওঠে মানুষের কেনাকাটার অন্যতম ব্যবস্থা।

সাধারণ মানুষ চাল-ডাল থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক পণ্য, গাড়ি, মোটরসাইকেল কিনতেও এই কমার্স সাইটগুলোর ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছেন। আর সেই বাজার ধরতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ছোটখাটো দোকানপাটও চালু করেছে অনলাইন ব্যবসা। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে অল্প সময়েই বিস্তার লাভ করে এই ই-কমার্স ব্যবসা।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর তথ্য মতে, সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আনুমানিক ২৫০০ ই-কমার্স সাইট রয়েছে। ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে দেড় লাখের বেশি। এসব প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন লক্ষাধিক পণ্যের অর্ডার ও ডেলিভারি হচ্ছে।

সে হিসেবে ই-কমার্স খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বর্তমানে প্রায় ৭৫%। খাতটির আকার ৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল নাগাদ এ খাতের আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুরুতে এই ই-কমার্সের বিস্তার শহরকেন্দ্রিক থাকলেও, কয়েক বছরের মাথায় সারা দেশের মানুষ এই সেবা পাচ্ছে।

নিরাপদ অর্থ লেনদেনে নতুন পদ্ধতি আসছে
ক্রেতাদের পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও আস্থা রাখতে পারছে না কোন কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের উপর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিরাপদ পরিশোধ ব্যবস্থার জন্য শিগগিরই একটি 'এসক্রো সার্ভিস' করা হবে। এটা একটা মধ্যস্বস্তভোগী সংস্থার মতো।

এসক্রো সার্ভিস চালু হলে ক্রেতারা আগাম টাকা পরিশোধ করলেও পণ্য সরবরাহ না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না।

এছাড়া সময়মত পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে সাতদিনের মধ্যে মূল্য ফেরত দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence