ওপেনএআই থেকে কতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার

ওপেনএআই
ওপেনএআই  © সংগৃহীত

আমরা যেভাবে জীবন-যাপন করি, তা নাটকীয়ভাবে পাল্টে দেয়ার দারুণ ক্ষমতা আছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার- সেটি ভালো বা মন্দ উভয় অর্থেই। কিন্তু পৃথিবীতে ক্ষমতা যাদের হাতে, তারা ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যে বিরাট উন্নতি হতে যাচ্ছে সেটির জন্য কতটা প্রস্তুত, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বিশেষজ্ঞদের।

ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিশাল প্রভাব থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই প্রভাব ইতিবাচক না-কি নেতিবাচক; তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত প্রযুক্তিটির ভবিষ্যৎ ঝুঁকি নিয়ে পর্যাপ্ত চিন্তা করা। খবর বিবিসির।     

২০১৯ সালে ওপেন এআই নামের রিসার্চ গ্রুপ জিপিটি-২ নামের একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম তৈরি করে। প্রোগ্রামটি তখনই খুব সহজে নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থবহ অনুচ্ছেদ তৈরি করতে পারতো। একইসাথে বিস্তারিত নির্দেশনা ছাড়াই কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণ করতে পারতো। 

প্রোগ্রামটির এত চমকপ্রদ হওয়া সত্ত্বেও ওপেনএআই এর পক্ষ থেকে সেটি তখন উন্মুক্ত করা হয়নি। কেননা প্রতিষ্ঠানটি মনে করেছিল, ঐ অবস্থায় প্রোগ্রামটি বাজারে ছাড়া হলে সেটি ব্যবহার করে মানুষের ক্ষতি করা যেতে পারে, ছড়ানো হতে পারে গুজব ও প্রোপাগান্ডা। 

এমনকি তৎকালীন সময়ে প্রকাশিত এক প্রেস রিলিজে ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, "প্রোগ্রামটি খুবই বিপজ্জনক।" 

আরও পড়ুন: পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, লোমহর্ষক বর্ণনা ...

তবে পরবর্তী তিন বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা পূর্বের তুলনার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালে ওপেনএআই জিপিটি-২ এর সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে নতুন ভার্সন জিপিটি-৩ চ্যাটবট তৈরি করে এবং একই বছরের নভেম্বর মাসে সেটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে। 

জিপিটি-৩ এ ওপেনএআইয়ের প্রোগ্রাম খুবই কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মুক্তির পর চ্যাটবটটির দক্ষতা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা ও আর্টিকেলেও এর সক্ষমতা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।    

কবিতা থেকে শুরু গল্প রচনা, পদার্থবিজ্ঞানের দুর্বোধ্য কোয়ান্টাম তত্ত্বের সহজ ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে শেক্সপিয়ারের ধাঁচে নাটক লিখে ফেলা; ইত্যাদি অকল্পনীয় সব কাজ কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে করে ফেলতে পারে চ্যাটজিপিটি। অন্যদিকে ডাল-ই নামক অন্য এআই মডেলগুলো নির্দেশনা অনুযায়ী চোখ ধাঁধানো গ্রাফিক্সের সব কাজ করে ফেলছে। 

যদিও অনেক বিতর্ক আছে, তবে মোটাদাগে বলা যায় যে, এআইয়ের মাধ্যমে যন্ত্র সৃজনশীল কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। চলতি মাসে আবার জিপিটি-৩ এর উত্তরসূরি হিসেবে আরও শক্তিশালীরূপে প্রকাশ পেয়েছে জিপিটি-৪। নতুন এ ভার্সনটিতে প্ল্যাটফর্মটির নেতিবাচক ব্যাবহারের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রথম পশ্চিমা দেশ হিসেবে চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করছে ইতালি

চলতি মাসে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত 'সাউথ বাই দ্য সাউথওয়েস্ট ইনটেরেকটিভ কনফারেন্স' এ এআইয়ের সামর্থ্য ও ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। প্রযুক্তি খাতের অন্যতম বিখ্যাত কনফারেন্সটিতে ইতোমধ্যেই এআইয়ের ক্লায়েন্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা মাইক্রোসফট ও মেরিল লিঞ্চের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিল। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক পলিসি দপ্তরের ডিরেক্টর আরাতি প্রভাকর জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভবনার কথা ভেবে তিনি উচ্ছ্বসিত। কিন্তু প্রযুক্তিটির বেশ কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। 

কনফারেন্সে আরাতি প্রভাকর বলেন, "আমরা প্রচণ্ড শক্তিশালী প্রযুক্তি হিসেবে এআইয়ের উত্থান দেখছি। বর্তমানে প্রযুক্তিটির পরিবর্তনশীল পর্যায় চলছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নতুন শক্তিশালী প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলে সেটির ভালো ও খারাপ দুই ধরণের ব্যবহারই হতে পারে।"

অন্যদিকে আরাতি প্রভাকরের তুলনার আরেকটু স্পষ্ট ভাষায় নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন সীডএআই এর প্রতিষ্ঠাতা অস্টিন কারসন। তিনি বলেন, "এআই প্রযুক্তির কারণে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আপনারা পুরোপুরি আতঙ্কিত হয়ে যাবেন। আমার এই কথা ভুল প্রমাণিত হলে জরিমানা হিসেবে আমি আপনাদের রাতের খাবার কিনে দেব!" 

তবে ঢালাওভাবে কথা না বলে বরং আগামী দশ বছরে এআই প্রযুক্তি দুটি ভিন্ন ধারার একটিতে যেতে পারে বলে কনফারেন্সে মত দিয়েছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বিজনেস প্রফেসর এমি ওয়েব।  

ইতিবাচকভাবে চিন্তা করলে এআইয়ের রয়েছে বিরাট সম্ভবনা। তবে সেক্ষেত্রে এআইয়ের উন্নতিতে সিস্টেম ডিজাইনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও তথ্যের ইনপুটের ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রাইভেসিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর ফলে একদিকে প্রতিদিনের কাজ যেমন সহজতর হবে; তেমনি মানুষ হবে উপকৃত।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে রিচ বাড়ানোর উপায় জেনে নিন

অন্যদিকে এমি ওয়েব জানান, এআইয়ের কারণে সৃষ্টি হতে পারে নানা জটিলতা। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাবে তথ্যের প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ হওয়া, নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির কাছে ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীভূত হওয়া অন্যতম। এছাড়াও এআই মানুষের প্রয়োজনকে ভুলভাবে বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারে।  

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েব বলেন, "এআই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে ঠিক কোনদিকে যাবে সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে তাদের ওপর। এসব প্রতিষ্ঠাগুলো কি কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা রাখছে? ল্যাংগুয়েজ মডেল তৈরি করতে যেয়ে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কি পলিসি মানছে?"

ওয়েব মনে করেন যে, ভবিষ্যতে এআইয়ের ইতিবাচক ভূমিকা পালনের সম্ভবনা মাত্র ২০ ভাগ। একইসাথে প্রতিটি দেশের ও প্রতিষ্ঠানের উচিত প্রযুক্তিটির অপব্যবহার রোধে দ্রুত আইন ও নীতিমালা তৈরি করা।   

এ প্রসঙ্গে ফিউচার টুডে ইন্সটিটিউটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেলানি সুবিন বলেন, "এআই প্রযুক্তির রক্ষণাবেক্ষণে যে নীতিমালা দরকার, সেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেই। ব্যাপারটি উদ্বেগজনক। এটি নিয়ে কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে এআইয়ের উন্নতির ফলে মানুষ আসলে কী ভাবছে, সেটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আন্দাজ করা যেতে পারে।"


সর্বশেষ সংবাদ