ডিসিসিআই'র ফোকাস গ্রুপ আলোচনা
সনদ প্রদানে জটিলতা ও ইকোসিস্টেম না থাকাই হালাল শিল্প উন্নয়নে মূল বাধা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৬ PM , আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৪ PM
বিশ্ববাজারে হালাল পণ্যের চাহিদা বাড়লেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে হালাল পণ্যের সনদ প্রদানে জটিলতা ও ইকোসিস্টেম না থাকাই এই শিল্প উন্নয়নে মূল বাধা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে “বাংলাদেশের হালাল শিল্পখাতের উন্নয়ন; সমস্যা ও সম্ভাবনা” শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বিষয়টি উঠে এসেছে।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে হালাল পণের বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের হলেও বাংলাদেশের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারেরও কম, একটি কার্যকর হালাল ইকোসিস্টেমের অনুপস্থিতির পাশাপাশি দেশে হালাল পণ্যের এ্যাক্রিডিটেড সার্টিফিকেট প্রদানে স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ না থাকার কারণে এ খাতের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক বেবী রাণী কর্মকার, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউটের (বিএসটিআই) উপ-পরিচালক (হালাল সার্টিফিকেশন) এসএম আবু সাইদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মোঃ আবু সালেহ পাটোয়ারী, বেঙ্গল মিটের হেড অব সাপ্লাইচেইন এজিএম সায়েদুল হক ভূইয়্যা, মেটামরফোসিস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিক এম আলম এবং প্যারাগন গ্রুপের সহকারী ম্যানেজার (এক্সপোর্ট) মোঃ আবুল কালাম আজাদ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলোজির (আইইউবিএটি) মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিএসটিআই দুটো প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্যের সনদ প্রদান করে। অনেকে ক্ষেত্রে এই বিষয়টিই জটিলতা তৈরি করছে। পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা, দেশের ব্র্যান্ডিং ইমেজে পিছিয়ে থাকা, এ খাতে এসএমইদের অনুপস্থিতি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দেশের হালাল পণ্যের ইতিবাচক ইমেজের অভাব, সমন্বিত নীতিমালার অনুপস্থিতি, দক্ষ জনবলের স্বল্পতার পাশাপাশি কাঠামোগত সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থা না থাকার বিষয়সমূহ এখাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে বলে, তিনি উল্লেখ করেন।
প্যারাগন গ্রুপের সহকারী ম্যানাজার (এক্সপোর্ট) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক হালাল পণ্যের ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রদান ও পণ্য উৎপাদন কমপ্লায়েন্স অডিটের মাধ্যমে মান নিশ্চিত করতে হবে।
বেঙ্গল মিটের হেড অব সাপ্লাইচেইন এজিএম সায়েদুল হক ভূইয়্যা বলেন, হালাল পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং ব্লকচেইনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পশুর জীবন বৃত্তান্তের তথ্য সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবী, পাশাপাশি দেশে হালাল সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিকভাবে এ্যাক্রিডিটেড হতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মোঃ আবু সালেহ পাটোয়ারী জানান, বাংলাদেশে হালাল সার্টিফিকেট প্রদান সরকারের একক কোন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নেই, তাই সংশ্লিষ্ট বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সনদ প্রদান করা হচ্ছে। তবে হালাল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে, বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নজরদারী বাড়ানো জরুরি বলেও মত দেন তিনি।
ইপিবি’র বেবী রাণী কর্মকার জানান, হালালের বৈশ্বিকবাজার প্রতিবছর প্রায় ১২.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্ভাবনাময় এখাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
বিডা’র মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক জানান, এলডিসি পরবর্তী সময়ে রপ্তানি সম্প্রসারণে সম্ভাবনায় হালাল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। হালাল খাতের উন্নয়নে একটি বিশেষ অর্থনৈতক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। তিনি বলেন, হালাল খাতের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা পিছিয়ে রয়েছি, তবে সবার সমন্বিত উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এখাতে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই পরিচালক এনামুল হক পাটোয়ারী, সাবেক ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ্ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সরকারি-বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।