এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বৈদেশিক সাহায্য প্রবাহ হ্রাসের শঙ্কা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৮ PM
বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা কৌশলগত বিনিয়োগ তহবিল সরবরাহের ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। এছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বৈদেশিক সাহায্য প্রবাহ হ্রাসেরও শঙ্কা রয়েছে। তাই কর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ তথা পরিপূর্ণ অটোমেশন, সুকুক এবং ডায়াস্পোরা বন্ডের মতো উদ্ভাবনী উপায়গুলো বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতের গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
রোববর রাজধানীর একটি হোটেলে আইইউবি, বিআইআইএসএস ও সিএমই-এর গবেষকদের প্রণীত 'বাংলাদেশের জন্য উদ্ভাবনী নীতি এজেন্ডা' শীর্ষক নীতিপত্র প্রকাশ করা হয়। এতে এসব পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোগত অর্থায়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) সম্প্রসারণেরও ওপর জোর দেয়া হয়।
গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশ তার উন্নয়ন যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক দশক ধরে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের শক্তিশালী অবস্থান, রেমিট্যান্স প্রবাহ, ধারাবাহিক সম্মানজনক প্রবৃদ্ধি এবং ধীরে ধীরে নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছে। অবশ্য এই অগ্রগতির সাথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও আসছে, যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় দুর্বলতা এবং উন্নয়নে অর্থায়নের ঘাটতি।
গবেষণাপত্রটি যৌথভাবে প্রণয়ন করেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার কবীর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর এবং ইউনিভার্সিটিস প্রাসেতিয়া মুলিয়ার অনুষদ সদস্য এবং সেন্টার ফর মার্কেট এডুকেশনের সিইও ড. কারমেলো ফেরলিটো।
তারা বলেন, উদ্ভাবনকে সংকীর্ণভাবে উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হিসাবে বোঝা উচিত নয় বরং এতে নতুন শাসন পদ্ধতি, অর্থায়ন মডেল, নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং স্বাস্থ্যসেবা কৌশলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক শাসনব্যবস্থা, সবক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে অন্তর্ভুক্ত করে সহনশীলতা তৈরি করতে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে এবং কাঠামোগত সীমাবদ্ধতাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
মূলত মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ হ্রাস এবং বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালের ৬ শতাংশ থেকে ২০২৪-২৫ সালে ৩.৯৮ শতাংশে নেমে এসেছে। পোশাক এবং রেমিট্যান্সের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা অর্থনীতিকে বৈশ্বিক চাহিদা, অটোমেশন এবং পরিবর্তনশীল অভিবাসন নীতির পরিবর্তনের মুখোমুখি করে। ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (শিল্প ৪.০) গ্রহণ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির রূপান্তর, উচ্চমূল্যের ম্যানুফ্যাকচারিং এবং পরিষেবাগুলিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, যোগ করেন গবেষকরা।
গবেষণায় পোশাক এবং ম্যানুফ্যাকচারিং, কৃষি,পরিষেবা ও দক্ষতা উন্নয়নসব খাতগুলোতে উদ্ভাবন-কেন্দ্রিক সংস্কারের গুরুত্বের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
এতে সতর্ক করা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের ধরনে পরিবর্তন, নিকটবর্তী দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম, স্থানান্তরের অনুশীলন ইএসজি এবং কমপ্লায়েন্স কঠোর করার কারণে বাংলাদেশের তুলনামূলক সুবিধাগুলো হ্রাস পেতে পারে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং বাণিজ্য আলোচনায় সক্রিয়ভাবে জড়িত না হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরে দেশটি রপ্তানি প্রতিযোগিতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। টেকসই প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য সবুজ বন্ড এবং মিশ্র পুঁজির মতো উদ্ভাবনী অর্থায়ন উপায়গুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
গবেষণার মূল বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে সফল হলেও তা ভিশন ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য অপর্যাপ্ত। বাণিজ্য ও শিল্প থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা এবং কর আদায় পর্যন্ত প্রতিটি নীতিগত ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দক্ষতা বৃদ্ধি করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে উৎসাহিত করে এবং বিশ্বের উত্তম অনুশীলনগুলোকে একীভূত করে একটি অভিযোজনমূক ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের একটি স্থিতিশীল পথ নিশ্চিত করতে পারে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে নিজেকে একটি প্রতিযোগিতামূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারে।