বাড়ছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

আলোচনায় অংশ নেয়া অতিথিবৃন্দ
আলোচনায় অংশ নেয়া অতিথিবৃন্দ  © টিডিসি ফটো

দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের পরিধি বাড়ছে। ২০১১ সালে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালুর পর বর্তমানে প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ এ সেবা ব্যবহার করছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংসহ BEFTN, NPSB, BD-RTGS এর মতো আধুনিক পেমেন্ট সিস্টেম দেশের লেনদেনকে দ্রুত, নিরাপদ ও সহজ করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।

শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বারের মিলনায়তনে ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সেতুবন্ধন’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় এসব কথা উঠে এসেছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, নারী নেতৃত্বাধীন আমানত অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২০১১ সাল ছিল ৩৩ মিলিয়ন, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৫৫ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টও বেড়ে ৪ দশমিক ৪ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যা আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ ফিনান্সিয়াল কার্ড ব্যবহার করে। নিম্ন আর্থিক জ্ঞান, প্রযুক্তি ব্যবহারে দুর্বলতা, উচ্চ খরচ, সেবার সীমাবদ্ধতা, সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ও ভোক্তা সুরক্ষার অভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সমানভাবে হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামীণ নারী, অতিদরিদ্র ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠী সবচেয়ে পিছিয়ে আছে।’

আলোচনায় অংশ নিয়েঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি) মো. ইলিয়াস জিকু বলেন, আপনাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে, আমাদের আছে চ্যালেঞ্জ। প্রতারকদের অন্ধকার জগত অনেক সময় খুব একটা সামনে আসে না, এই ডার্ক অংশটা উঠে আসাটা খুব জরুরি। প্রতি অর্থবছরে কত টাকা প্রতারকদের হাতে যাচ্ছে, সে পরিসংখ্যান প্রকাশ হওয়াও জরুরি। তার কথায়, ডিজিটালি আপনি যা-ই করেন ফুটপ্রিন্ট থেকে যায়, যেটা আমরা ব্যবহার করি। মোবাইল ফাইনান্সিয়ার সার্ভিস ব্যবহারকারিরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী।

বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশ প্রতারক টাকা হাতিয়ে নেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকাশ খুলে প্রতারকরা সিম বন্ধ করে রাখছেন, অনেক ক্ষেত্রে এই সিমও অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। ফলে অভিযোগ পেয়ে আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখি, যার নামে সিম রেজিস্ট্রেশন করা তিনি কিছুই জানেন না। তিনি হয়তো প্রত্যন্ত এলাকায় থাকেন। আবার গ্রেপ্তার করা গেলেও কিছুদিন পর তারা জেল থেকে বেরিয়ে আসছেন। তাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, আসলে কোন অংশে কাজ করা জরুরি। সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে সমস্যা নিরসন করা।

মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসে একাউন্ট করার পর নিয়মিত সময় বিরতি দিয়ে রিনিউয়াল করার অপশন চালু করার পরামর্শ দিয়ে ইলিয়াস জিকু বলেন, একাউন্ট খোলার পর নিয়মিত রিনিউয়াল বা আপডেট করার নিয়ম চালু করলে, যার নামে একাউন্ট খোলা তিনিই ব্যবহার করছেন কিনা, তা সেটা নিশ্চিত করা যাবে। এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি অঙ্কের টাকা লেনদেনের সময় মোবাইলে কল করার বিধান চালু করলে লেনদেন অনেকাংশে নিরাপদ করা সম্ভব হবে। এছাড়া গ্রাহকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর, তারা যখন ব্যাংকিংয়ের সুবিধা দিচ্ছে তখন নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বও তাদের নিশ্চিত করতে হবে।

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, টাকা হাতে না রেখে সবক্ষেত্রে ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার বৃদ্ধি করা সম্ভব, তবে সবার আগে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। এছাড়া অভিযোগের ভিত্তিতে নেয়া পদক্ষেপগুলো মানুষকে জানাতে হবে। সমস্যা সমাধান দ্রুত করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকের মামলার কার্যক্রম শেষ হতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থিক অনিয়ম বা প্রতারণার বিচার করতে বিচারব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে এসব ক্ষেত্রে আলাদাভাবে কিমি. সময়ের মধ্যে বিচার করার ব্যবস্থা করতে হবে, তাহলে এ ধরনের অপরাধের মাত্রা কমবে।

বিটলস সাইবার সিকিউরিটি লিমিটেড কো ফাউন্ডার ও চীফ সাইবার অপারেশন অফিসার শাহী মির্জা বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামী এবং কম কনফিগারেশনের স্মার্টফোন  ব্যবহার করেন। একইসঙ্গে মোবাইল এপ্লিকেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গেমিং এপ্লিকেশন ও নানা ধরেনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে। ফলে সহজেই সেসব এপ্লিকেশন থেকে প্রতারকরা সুবিধা নিতে পারে। এজন্য এপ্লিকেশনর সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় যে সুবিধা রাখতে হবে। 

তিনি বলেন, উন্নত দেশে মানুষের নির্দিষ্ট আইডির বিপরীতে তার মানের স্কোরিং করা থাকে। তার মাধ্যমে ওই ব্যক্তির প্রতিদিনের বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে স্কোর দেয়া হয়। এতে বুঝা যায় কে কেমন? বাংলাদেশেও এমন প্রক্রিয়া চালু করলে সহজেই লোন দেয়া সম্ভব হবে।    

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম এবং রবি আজিয়াটা পিএলসির কমার্শিয়াল পার্টনারশিপস প্রধান সানজিত হোসাইন। এছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। 


সর্বশেষ সংবাদ