লিস্ট নেই, হিসাব নেই—ধীরে ধীরে বাড়ছে পণ্যের দাম

রাজধানীর কাঁচাবাজার

রাজধানীর কাঁচাবাজার।
রাজধানীর কাঁচাবাজার।   © টিডিসি ফটো

রাজধানীর পলাশী বাজারে ঢুঁ মেরে দেখা গেল এক কোণে মাহমুদের সবজির দোকান—রঙবেরঙের শাকসবজিতে যেন এক টুকরো রঙিন ছবি আঁকা। কিন্তু সেই রঙিনতায় একরাশ উদ্বেগের ছায়া। বাজারে হরেক রকমের সবজি থাকলেও, প্রতিটি পণ্যের দাম যেন গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, কাকড়ল ১২০, চিচিংগা আর লতি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ও পটল ৭০ টাকা আর কাঁচা মরিচ—গরম ঝাঁজের মতোই তার দাম—১০০ টাকা। টমেটো পাওয়া যাচ্ছে ৪০ টাকায়, গাজর ৫০, শসা ৭০, পেঁয়াজ ৬৫ আর আলু ২৫ টাকায়। একটি লাউ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০ টাকা।

আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদক পলাশীসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার পরিদর্শনে গেলে এমন চিত্র দেখতে পায়। 

তবে এই বাজারে কোথাও নেই কোনো নির্ধারিত মূল্য তালিকা—ফলে প্রতিটি দরদাম যেন একেকটি যুদ্ধ। ক্রেতাদের চোখে-মুখে সন্দেহ, হালকা ক্ষোভ, আর অনিশ্চয়তার রেখা দেখা যায়।

ক্রেতা মুয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এখানকার তরিতরকারির দাম দিন দিন বাড়ছে। সবকিছুরই দাম এখন আগের চেয়ে বেশি। মাত্র তিনদিন আগে আলু কিনেছিলাম ২০ টাকায়, এখন সেটা ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পিঁয়াজের দামও বেড়েছে।’

পলাশী বাজারের মুরগি ও মাংসের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি পণ্যের দাম আগের তুলনায় বেশ চড়া। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, সোনালী মুরগি ৩০০ টাকায় এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকায়। গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা করে। বাজার ঘুরে ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে, কারণ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে।

এদিকে আনন্দ বাজারের সবজির দোকানদার সবুজ জানান, বর্তমানে তার দোকানে রসুন কেজিপ্রতি ১২০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০, শসা ৫০, আলু ২০, টমেটো ৩০, ঢেঁড়স ৬০, কাঁচা মরিচ ৮০ এবং করলা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বাজারের লিস্ট প্রায়ই পরিবর্তন হয়, তাই আলাদা করে আর তালিকা ঠিক করি না। কাঁচাবাজারে অনেক সময় একদিনেই দাম বেড়ে যায়, আবার কমেও যায়। যেমন পেঁয়াজের কথাই ধরুন—এই বাজারে পিঁয়াজের দাম ৪০ থেকে শুরু করে ৬০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

সবুজের তরকারি দোকানের ক্রেতা কাকুলী বেগম জানান, কাঁচাবাজারের বর্তমান দাম মোটামুটি তাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। তবে কিছু কিছু সবজির দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। তার মতে, এখনও যে অবস্থায় আছে, এটি ধরে রাখা জরুরি। তিনি আরও বলেন, ‘এই বাজারে অনেক জিনিস তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম দামে পাওয়া যায়, যেটা আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির।’

আনন্দ বাজারের মুদি দোকানদার আব্দুল হক জানান, তাদের দোকানে মূল্য তালিকা থাকলেও মাঝে মাঝে তা হালনাগাদ করা হয় না। চালের দাম নিয়ে তিনি বলেন, মিনিকেট চাল ছাড়া অন্যান্য সব ধরনের চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে মিনিকেট চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে—আগে ছিল ৫৬ টাকা, এখন তা ৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ডাল ও লবণের দাম এখনো আগের মতোই রয়েছে। তবে চিনি কিছুটা কমেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তেলের প্রসঙ্গে তিনি জানান, তারা খোলা তেল বিক্রি করছেন—তবে সয়াবিন তেল বিক্রি করেন না। ওভারডেট খাদ্যপণ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়, বিক্রি করা হয় না।’

বাজারে হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং অনেক সবজি ও মুদি দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকা নিয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, অফিস সূত্র জানায়—তাদের অভিযান টিম নিয়মিতভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। যেখানে অসঙ্গতি বা অনিয়ম পাওয়া যায়, সেখানেই ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়।

অধিদপ্তর আরও জানায়, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে সারা দেশে মোট ১ হাজার ৫১৮টি বাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে ৩ হাজার,৪৯৮টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে দণ্ডিত করা হয়। এ সময় জরিমানার মাধ্যমে মোট আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৭ লাখ ২৯ হাজার ২০০ টাকা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence