নিজস্ব আয় বাড়ানোর চাপে ঢাবি, খড়গ শিক্ষার্থীদের উপর!

উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যয়িত সমুদয় অর্থ সরকারই বহন করবে— এটাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চরিত্র। তবে কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে সরকার। এজন্য প্রতি বছরই নিজস্ব উৎস থেকে আয় বাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি চাপ অব্যাহত রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব আয় বাবদ বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে ইউজিসি। নিজস্ব আয় বাড়ানোর এ চাপে রয়েছে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও।

বছর বছর বাজেট বৃদ্ধি ও ঘাটতি মেটাতে নিজস্ব আয় বাড়াতে হচ্ছে সবচয়ে প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠকে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে নিজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরে নিজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব আয় বাড়ানোর হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজস্ব আয় বাড়ানো নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে বলে জানিয়েছেন হিসাব শাখার এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আগের তুলনায় এবারের বাজেটে নিজস্ব খাত থেকে অনেক বেশি অর্থ আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ইউজিসি। সেটি পূরণ করতে গেলে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি বাড়াতে হবে, যা মোটেও সহজ নয়। একদিকে নিজস্ব খাত থেকে বেশি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেখিয়ে কম বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার, অন্যদিকে বেতন-ফি বাড়াতে গেলে আন্দোলনে নামতে পারেন শিক্ষার্থীরা এ অবস্থায় নিজস্ব আয় বাড়ানো নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি প্রতি বছরই এ হার বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ঘাটতি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।

এদিকে নিজস্ব আয় বাড়াতে গিয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে বেতন, ভর্তি ও সেশন ফি, হল বা হোস্টেল, ইনস্টিটিউট ও বিভাগ, পরিবহন খাত, ভর্তির ফরম বিক্রি ও অধিভুক্ত সাত কলেজ থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট বইয়ে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছাত্রদের কাছ থেকে বেতন, ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা চলতি অর্থবছরে বাড়িয়ে ধরা হয় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হল বা হোস্টেল থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয় ৬০ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইনস্টিটিউট ও বিভাগ থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬ লাখ টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয় ৯৫ লাখ টাকা।

এছাড়া চলতি অর্থবছর পরিবহন খাত থেকে নিজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভর্তির ফরম বিক্রি থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয় ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর বাইরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সাত কলেজ থেকে আয় বাবদ ১৫ কোটি টাকা ধরা হলেও চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের এক উপ-পরিচালক বলেন, নিজস্ব আয় বাবদ যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি অর্জন সম্ভব নয়। বাজেট-বিষয়ক সভায় আমরা ইউজিসিকে বারবার বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আয়ের প্রতিষ্ঠান নয়, নিজস্ব উৎস থেকে এত টাকা আয় অসম্ভব। এর পরও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর এত টাকা চাপিয়ে দিয়েছে। তারা বেতন-ফি বাড়ানোর কথা বলেছে। বেতন-ফি বাড়ালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তার দায়ভার কে নেবে?

একই কথা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানও। তার ভাষায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কোনো দোকান কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়; এখান থেকে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আয় করার কোনো বিষয় নেই। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও সংবিধির মাধ্যমে কয়েকটি খাত থেকে কিছু অর্থ আয় হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত আয় করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে সরকারের বিনিয়োগ আরো বাড়ানো উচিত।’


সর্বশেষ সংবাদ