ঢাবির হল যেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্প!

ঢাবির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের করিডোরের চিত্র
ঢাবির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের করিডোরের চিত্র  © টিডিসি ফটো

লম্বা করিডোর। এর দুপাশ দিয়ে একের পর এক সাজানো লোহার ট্রাঙ্ক। মাঝ দিয়ে হেটে যাওয়ার সরু রাস্তা। মাঝে মাঝে দরজা। সেটি দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যাবে আরও ভয়াবহ চিত্র। স্বাভাবিক আকৃতির একটি রুমের পুরোটাই বিছানা পাতা। পা রাখারও জায়গা নেই। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, এই গণরুমে গাদাগাদি করে থাকেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মত বসবাস করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কুতুপালং এর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের চিত্রের সাথে এর খুব বেশি পার্থক্য হয়তো খুঁজে বের করা যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে গিয়ে এ ধরণের ভয়ানক চিত্র দেখা গেছে।

শুধু এ হলেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব হলেই একই অবস্থা। এরমধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। এ হলের বারান্দায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন এমন উদাহরণও রয়েছে অনেক! আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রার্থীদের কাছে তাদের প্রত্যাশাও তাই বেশি। নির্বাচিত হয়ে তারা এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে সীমাহীন ভোগান্তিতে থাকা এসব শিক্ষার্থীরা আশা করছেন।

প্রতিবছর বুক ভরা স্বপ্ন ও জ্ঞানার্জনের অদম্য স্পৃহা নিয়ে দেশের সেরা মেধাবীরা ভর্তি হন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর দেখেন, সেই স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাস্তবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো মিল নেই। গণরুমের কষ্ট ও গেস্টরুমের নিপীড়ন সইতে না পেরে অনেকেই হল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ফলে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেশের এক একটা পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, সেখানে তাদেরকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে!

সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি গণরুমে গাদাগাদি করে থাকছেন ২৫-৩০জন শিক্ষার্থী। রুমে জায়গা না থাকার ফলে তাদের কাপড়-চোপড় ও মূল্যবান জিনিসপত্রে ভর্তি ট্রাঙ্ক বা লাগেজগুলো রাখতে হয়েছে বারান্দায়। বিশেষ করে অনেকেরই শিক্ষাজীবনের সনদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রাখেন এতে।

জানা যায়, এ হলে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্লক মিলিয়ে পাঁচটি গণরুম রয়েছে।রাফসান (ছদ্মনাম) নামের দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথম বর্ষেও গণরুমে ছিলাম, দ্বিতীয় বর্ষেও থাকতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে রুমে জায়গা না পেয়ে মসজিদে থেকেছি। বলা হয়েছিলো, পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম করলে রুম দেওয়া হবে। কিন্তু কোথায় সেই রুম?’ তার রুমে বর্তমানে একসাথে ৩০জন শিক্ষার্থী মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানান তিনি।

হলের আরেক ছাত্র লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী পল্লব রানা পারভেজ। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হলে খাবারের মান, আবাসন সংকট, ওষুধের দোকানসহ বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। আসন্ন ডাকসু হল সংসদ নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হবেন তাদের এ সমস্যাগুলোর প্রতি খেয়াল রাখার অনুরোধ জানান তিনি।

হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন ১১ মার্চের দিকে। এদিনকে তারা দেখছেন অধিকার ফিরে পাওয়ার দিন হিসেবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হারিয়ে যাওয়া গৌরবের সূর্যোদয় হিসেবে।


সর্বশেষ সংবাদ