আন্দোলনে যাচ্ছে সব দল, তফসিল চাইছে ছাত্রলীগ
- নুর হোসেন ইমন, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫২ AM , আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৫:২০ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলে করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্ধারণ করেছে ভোটার-প্রার্থীর বয়স ও যোগ্যতা। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় নেয়া ওই সিদ্ধান্তকে ছাত্রলীগ সাধুবাদ জানালেও ভোটের কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানিয়েছে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন। ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনেরও। যদিও ভোটের বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে অবিলম্বে তফসিল দাবি করেছে ছাত্রলীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
বুধবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ‘হলে ভোটকেন্দ্র’ স্থাপন নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চলছে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি ও স্বপ্নের ক্যাম্পাসের জন্য সম্মিলিত প্রয়াসকেই অপমান করা হচ্ছে। পোলিং বুথ হলের অভ্যন্তরে হওয়াকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষী ঐতিহ্য ও প্রথা হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।
তথ্যমতে, মঙ্গলবার প্রশাসনের নেয়া ওই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে ইতোমধ্যেই বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। আর আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কথা জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। অন্যদিকে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের পক্ষ থেকে মশাল মিছিল রয়েছে সন্ধ্যায়।
আন্দোলনের পরিকল্পনা চলছে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদেও। সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মূল ইস্যু হলে ভোটকেন্দ্র। প্রায় সকল ছাত্রসংগঠনের এই দাবি হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন তা প্রত্যাখান করেছে। তিনি বলেন, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদের দাবি একই। সে হিসেবে সম্মিলিতভাবে কোনো কর্মসূচি দেয়া যায় কিনা- বিষয়টি নিয়ে তারা ভাবছেন। শিঘ্রই সিদ্ধান্ত আসবে।
প্রায় একই কথা জানান সংগঠনটির আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে। দাবি আদায় না হলে আন্দোলনের চিন্তা রয়েছে।
এছাড়াও সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একটি ছাত্র সংগঠনের দাবি মেনে হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত সকল শিক্ষার্থীকে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদ এই সিদ্ধান্ত পুনির্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে। ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে না করা হলে ডাকসু নির্বাচন অর্থহীন ও প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসন ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অভিযোগ করে ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘দুই-একটি সংগঠন এর বিরোধিতা করলেও ক্রিয়াশীল সমস্ত সংগঠন এই দাবিকে যথাযথ মনে করে। সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করল, প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে না।’
এর আগে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, প্রশাসন হলে ভোট করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা একপাক্ষিক। ১৫টি সংগঠনের মধ্যে ১৩টি সংগঠনের যেখানে বাইরে করার দাবি জানিয়েছে; সেখানে এ ধরণের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মন তমা বলেন, এটা অগনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ হলে তাদের দখলদারিত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। একজন ছাত্রকে হলে ওঠার পর গণরুম এবং গেস্টরুমে যেভাবে ছাত্রলীগ তাদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য করে। ফলে ভোটকেন্দ্র যদি হলে হয়; সেখানে ছাত্ররা স্বাভাবিকভাবেই তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে না।
তবে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত একাডেমিক-প্রশাসনিক ও সহ-পাঠ্য কার্যক্রম হলকেন্দ্রিক, হল সংসদের কার্যক্রমও হলের আবাসিক বৈশিষ্টকে উপজীব্য করেই। তারা বলেন, প্রতিষ্ঠিত প্রথা, আইনি অনুমোদন, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির নিশ্চয়তার আলোকে বলা যায়, পোলিং বুথ নিয়ে ন্যূনতম বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, সব কিছুই হয়েছে ছাত্রলীগকে জেতানোর জন্য। আমরা অানুষ্ঠানিক কর্মসূচি জানাব।
ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। আশা করি, দ্রুত ভোটার তালিকা এবং তফসিল ঘোষণা করা হবে। সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা অতি দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের তফসিল চাই। আশা করি প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি ‘পরিবেশ পরিষদের’ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্রসংগঠনের নেতারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এ দাবিগুলোর মধ্যে হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনগুলোতে ভোট কেন্দ্র করা ও কেন্দ্রগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া বয়সের বিষয়টি নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা যায়।