পার্ক থেকে ২৫ শিক্ষার্থী আটক করে সমালোচনার মুখে পুলিশ

২৫ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীকে আটক নিয়ে সমালোচনা
২৫ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীকে আটক নিয়ে সমালোচনা  © ফাইল ছবি

ফেনীতে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিনোদনকেন্দ্রে আড্ডা দেওয়ায় ২৫ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীকে আটক করেছে ফেনী মডেল থানা পুলিশ। রবিবার (২৯ মে) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের মহিপাল বিজয়সিংহ দিঘির পাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ।

কেননা ফেনীর বিজয়সিংহ দিঘীর পার্ক থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীরা এখনও ভীত-সন্ত্রস্ত। থানা থেকে ছেড়ে দিলেও লোকলজ্জা এবং অভিভাবকদের কাছে হেয় হওয়ায় এখনও তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আটক শিক্ষার্থীদের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় এখনও জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘ফেনীতে সিনেমা হলে যাওয়ার পরিবেশ নেই। শহরে নির্মল বিনোদনের কোনও জায়গা নেই। পার্কে বসাও যদি শিক্ষার্থীদের অপরাধ হয়, তবে তারা যাবে কোথায়? তাদের মানসিক বিকাশ হবে কীভাবে? স্কুল ফাঁকি দিয়ে বিনোদন পার্কে আড্ডা দিলে পুলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারে, অভিভাবক সমাবেশ করে বিষয়টি নজরে আনতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই আটক করে শিশুদের মানসিক নির্যাতন করার অধিকার তাদের নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশকে জবাবদিহি করতে হবে, শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত বিনোদন পার্কে বসে কী অশ্লীল কাজ করেছে যে তাদের এভাবে হেনস্তা করা হলো? শিক্ষার্থীদের অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো কেন? পুলিশ শিশু অধিকার আইনের ধারা রীতিমতো লঙ্ঘন করেছে। এতে ওই কিশোর-কিশোরীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

 
 
তিনি আরও বলেন, ‘স্কুল-কলেজ চলাকালে শিক্ষার্থীরা পার্কে বা বিনোদনে কেন্দ্র ঘুরতে আসে। অনেক সময় নোংরামিতে জড়িয়ে পড়ে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাদের মা-বাবাও সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন। কিন্তু মা-বাবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে তারা সময় কাটায় ভিন্ন স্থানে।’ শিক্ষক ও অভিভাবকদের এ বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ফেনী আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘পার্কে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থী আটক আইনসিদ্ধ নয়।’ এ ঘটনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পার্ক থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আটকে রেখে অভিভাবকদের কাছে সোপর্দ করে নৈতিক শিক্ষার জ্ঞান দেওয়ার অধিকার পুলিশকে কে দিয়েছে? উন্মুক্ত পার্ক থেকে এভাবে শিশু-কিশোরদের আটক করা পুলিশের অতিরঞ্জিত কাজ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কলেজশিক্ষক বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে শিশু-কিশোরদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানার পর অবাক হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি। এভাবে শিশু-কিশোরদের পুলিশ দিয়ে হেনস্তা করলে শিশুমনে এক ধরনের মানসিক ভীতি ও হীনম্মন্যতা তৈরি হবে। মানসিক বিকাশ ব্যাহত হবে। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে কেউ আড্ডা দিলে সেটা দেখার দায়িত্ব শিক্ষক-অভিভাবকের। পুলিশ সুপার বড়জোর কমিউনিটি পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে অভিভাবকদের সচেতন করতে পারতেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে কাউন্সেলিং এবং শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করতে পারতেন, চিঠি দিয়ে বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের অবগত করতে পারতেন।’

সূত্র জানায়,  রবিবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের মহিপাল বিজয় সিংহ দিঘীর পাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক করা হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১১ জন ছাত্রী এবং ১৪ জন ছাত্রকে। এরপর গাড়িতে তুলে তাদের সদর থানায় নেওয়া হয়। সেখানে তাদের আটকে রাখার পর অভিভাবকদের ডেকে তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়। আটক শিশু-কিশোরদের বেশির ভাগই শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রতক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের এই অভিযানের সময় শিক্ষার্থীরা পার্কে বসে ও দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। কারও আচরণই আপত্তিকর ছিল না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence