গ্রামবাসীর হুঙ্কার, নানাবাড়িতে দাফন হলো নয়নের লাশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪৭ PM , আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯, ১১:১১ PM
অবশেষে বরগুনায় পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডকে দাফন করা হয়েছে। আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। তবে বাপের বাড়িতে নয়, তার শেষ ঠিকানা হয়েছে মায়ের দেশে। বরগুনা পৌর শহরের নিজ এলাকায় তার মরদেহ দাফনে প্রতিরোধের ডাক দেয় গ্রামবাসীরা। তাই নানার বাড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তার মামা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নয়নের মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হয় বলে জানা গেছে।
বরগুনা পৌর শহরের ডিকেপি রোড এলাকায় নয়নের নিজস্ব বাড়ি থাকলেও সেখানে দাফন না দিয়ে ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের বুড়িরখাল গ্রামে নানা জয়নাল মৃধার বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। নিজের এলাকায় দাফন করতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেবে শুনে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান নয়নের মামা মিজানুর রহমান।
জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে পুলিশের কাছ থেকে লাশ বুঝে নেন তার মামা মিজানুর রহমান। এরপর লাশ নানার বাড়িতে নিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দাফন করা হয়। এ সময় তার মা সাহিদা বেগম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নয়নের মামা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা এলাকা থেকে খবর পাই ওর লাশ দাফন করতে দেবে না। তাই কোনও ঝামেলায় না জড়িয়ে সরাসরি আমার বাড়িতে নিয়ে আসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ও যা করেছে সেটি নিঃসন্দেহে একটি জঘন্যতম কাজ। যেভাবেই হোক এখন মারা গেছে। আমরা ওর লাশ দাফন করেছি। এখন আল্লাহ যা বিচার করেন।’
এর আগে নয়নের নিজ এলাকা বরগুনা পৌর শহরের ডিকেপি রোডের গ্রামবাসীরা তার মরদেশে সেখানে দাফন করতে দিবে না বলে জানায়। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গ্রামের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
‘প্রানের শহর, তিলোত্তমা বরগুনার পবিত্র মাটিতে এই পাপীর লাশ দাফন করা কোন অবস্থাতেই সমীচীন নয়। সে এই পবিত্র মাটির সন্তান নয়।’ বরগুনার লোকাল ফেসবুক গ্রুপে এভাবেই হুঙ্কার ছাড়া হয়েছে নয়নের দাফন নিয়ে। বলা হয়েছে, শহরের জন্মলগ্ন থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত, সবচেয়ে বড় জঘন্য ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে এই খুনী বন্ড। তার লাশ বরগুনায় দাফন হবে না। অন্য কোথাও ব্যবস্থা করা হোক।
নয়ন বন্ড। সারাদেশে সবার কাছে এখন তার পরিচয় একটাই। কুখ্যাত খুনী। রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন আজ ভোরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। কিন্তু তার লাশ গ্রামের বাড়ি দাফন করতে কেউ রাজি হচ্ছেন না। এলাকাবাসী নয়নের লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফন না করার জন্য তার আত্মীয়-স্বজনকে জানিয়েছেন। যা নিয়ে অনেকটাই মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছেন স্বামীহারা নয়নের মা।
বরগুনা সরকারি কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিমে বরগুনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে নয়ন বন্ডের (২৫) বাসা। নয়নের বাবা মৃত ছিদ্দিকুর রহমান। দুই ভাইয়ের মধ্যে নয়ন ছোট। নয়নের বড় ভাই মিরাজ দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে শ্রমিকের কাজ করেন। মাকে নিয়েই ওই বাসায় বসবাস করছিল নয়ন।
ওই গ্রামের ফোরকান হাওলাদার ও মোশারেফ হোসেন জানান, নয়ন বন্ডের লাশ আমাদের গ্রামে দাফন করতে দেয়া হবে না। নয়ন বন্ডের চাচা লিটন মোল্লা জানান, নয়নকে আমি দেখিনি। ওর বাবা খুব ভাল মানুষ ছিলেন। বাড়ির সবাই নয়ন বন্ডের লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফন করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। নয়ন বন্ডের ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের কারণে গ্রামের বাড়ির কেউই নয়ন বন্ডকে আত্মীয় পরিচয় দিতে চাচ্ছেন না।
ওই বাড়ির জাহাঙ্গীর মোল্লা ও জাহিদ মোল্লা বলেন, নয়ন বন্ড আমাদের কেউ না, ওরা বরগুনার বাসিন্দা। ওর বাবা বহু বছর আগে বাড়ি ছেড়ে বরগুনায় বসবাস করেন। নয়ন বন্ডের সমাপ্তি হয়েছে, এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নয়ন বন্ডের ফুফাতো ভাই দশমিনার বাসিন্দা সাফায়াত হোসেন। পাশাপাশি নয়ন বন্ডকে যারা সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে বিচার করার দাবি জানান তিনি।
নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দুটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা, হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেফতার হলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি।
উল্লেখ্য, বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোররাতে বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি।