জুলাই শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ ৪ দাবিতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৩ PM
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসন ও ন্যায্য দাবিতে বিক্ষোভ করা হচ্ছে। আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। দাবি আদায়ে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।
আন্দোলনরত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত বীর জুলাই যোদ্ধারা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিক সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়। ৩৬ দিনব্যাপী এ ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান শহীদ, আহত ও হাজারো মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে সফল হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, আহতদের সঠিক চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতির পক্ষ থেকে তাদের দাবিসমূহ সরকারকে অবিলম্বে ঘোষণাপত্রে এবং স্থায়ী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে কার্যকর করার আহবান জানিয়েছেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রথমত ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী সব বীর সন্তানদের ‘জুলাই শহীদ’ (জাতীয় বীর) হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে এবং আন্দোলনে আহত, নির্যাতিত ও সংগ্রামী নাগরিকদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ (বীর) হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা, আবাসন ও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; রাষ্ট্র তাদের প্রতি পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং সকল কল্যাণ মূলক ব্যয় সরাসরি রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে বহন করতে হবে; আহত ও শহীদ পরিবারদের জন্য সম্মানজনক আজীবন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে, যা তাদের নাগরিক অধিকার হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে; এ পরিবারগুলোর প্রতি অবহেলা, বৈষম্য বা অধিকারহরণ ঘটলে তা রাষ্ট্রদ্রোহী বা বিশেষ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সহায়তা কেন্দ্র ও কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করতে হবে।
আরও পড়ুন: সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারির দাবিতে শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
তৃতীয়ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত দমন-পীড়ন, গুলি, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডে বিচার সম্পন্ন করতে হবে; একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন (Truth & Justice Commission) গঠন করতে হবে, যেখানে প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী, শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা তাদের সাক্ষ্য ও অভিজ্ঞতা পেশ করতে পারবেন এবং কমিশনের প্রতিবেদন রাষ্ট্রীয় আর্কাইভে সংরক্ষিত থাকবে এবং জাতির ইতিহাসের অংশ হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উন্মুক্ত থাকবে।
চতুর্থত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ স্মরণে প্রতি বছর জুলাই গণতন্ত্র দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে; ঢাকা ও অন্যান্য শহরে জুলাই স্মৃতি সৌধ ও জাদুঘর নির্মাণ করতে হবে, যেখানে শহীদদের নাম, ছবি ও জীবনী সংরক্ষিত থাকবে এবং শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ ইতিহাস থেকে প্রেরণা পায়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান এই জাতির ইতিহাসের অমর অধ্যায়। শহীদদের প্রতি চিরস্থায়ী শ্রদ্ধা, আহত ও সব অংশগ্রহণকারী যোদ্ধার ন্যায্য স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা জাতির সম্মিলিত প্রাপ্য। এটি কেবল একটি দলিল নয়, এটি নতুন বাংলাদেশের ন্যায়, মানবতা ও গণতন্ত্রের চিরন্তন অঙ্গীকার। অন্তর্বর্তী সরকার অবিলম্বে এসব দাবি বাস্তবায়ন করে ইতিহাসের দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা তাদের।