বুয়েটের সনি হত্যাকাণ্ডে নয়, সাবেক ছাত্রদল নেতা টগর গ্রেপ্তার অস্ত্রের কারবারে জড়িয়ে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৫ PM , আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৬ PM
২০০২ সালের ৮ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শাখা ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের তৎকালীন ছাত্রদল নেতা মুশফিক উদ্দীন টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন বুয়েটের মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি। দরপত্র (টেন্ডার) নিয়ে ওই সংঘর্ষ হয়। বুয়েটের কেমিপ্রকৌশল বিভাগের ১৯৯৯ ব্যাচের এই ছাত্রী সেদিন ক্লাস শেষে বুয়েটের হলে ফিরছিলেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে তার নিহত হওয়ার পর সারাদেশে আন্দোলন হয়।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পুরান ঢাকার আজিমপুর এলাকা থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩ টগরকে গ্রেপ্তার করা হলে ফের আলোচনায় আসে বুয়েটের সনি হত্যাকাণ্ড। এই দাগী আসামি প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বুয়েট ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি হত্যা মামলায় ১৮ বছর কারাভোগ শেষে মুক্ত হয়ে পুনরায় অস্ত্র বাণিজ্যে জড়ান টগর। ফলে সনি হত্যা মামলার সঙ্গে তার গ্রেপ্তারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মূলত তারা অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে টগরের পরিচয় পেয়েছে যে, তিনি সনি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন।
এদিকে, আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর লালবাগ থানার অস্ত্র আইনে করা মামলায় অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রদল নেতা মুশফিক উদ্দিন টগরের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই মতিয়ার রহমান বুলবুল। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফরহাদ ইশতিয়াক তার দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, ঢাকার বিচারিক আদালতে সনি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয় ২০০৩ সালের ২৯ জুন। রায়ে ছাত্রদলের নেতা টগর, মোকাম্মেল হায়াত খান ওরফে মুকিত ও নুরুল ইসলাম ওরফে সাগরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাঁচজনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। পরে ২০০৬ সালের ১০ মার্চ টগরসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন উচ্চ আদালত। টগর ১৮ বছর সাজাভোগের পর ২০২০ সালের ২০ আগস্ট কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, সনি হত্যাকাণ্ডে ১৮ বছর সাজাভোগের পর টগর বেশ কিছুদিন অপরাধমূলক কাজ থেকে অবসরে যান। কয়েক বছর পরে পুনরায় মাদক ও অস্ত্র কারবারিতে জড়ান টগর। গত বৃহস্পতিবার র্যাবের অভিযানের সময় তার কাছ থেকে ৩২ এমএম ১টি রিভলবার, ১টি ম্যাগাজিন, ১টি কাঠের পিস্তলের গ্রিপ, ১৫৫ রাউন্ড .২২ রাইফেলের গুলি, ১টি ৭.৬২ এমএম মিসফায়ার গুলি, ১টি শর্টগানের খালি কার্তুজ, মানুষের মুখায়বের দুটি মুখোশ ও ২টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
গতকাল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, সনি হত্যা মামলায় টগর ২০০২ সালের ২৪ জুন গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন সরকার বিশেষ বিবেচনায় কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেয়। এখন আসামি টগর সীমান্তবর্তী এলাকা হতে অবৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে বিভিন্ন মানুষকে সরবরাহ করতেন টগর। মূলত আমরা অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে তার পরিচয় পাই। জানতে পারি তিনি বুয়েট শিক্ষার্থী সনি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী আমাদের অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান থাকবে। তার বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অস্ত্র মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বুঝতে পারি, তার কাছে আরও অস্ত্রের সন্ধান থাকতে পারে। মাত্র গত বৃহস্পতিবার তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। আমরা কিছু নম্বর পেয়েছি, সেগুলো নিয়ে কাজ করব।
রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তার ভাষ্য, যিনি অপরাধী, তিনি অপরাধীই। তাকে কোনো দলও গ্রহণ করে না। আমরা তাকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করছি। তার কাছে যা পাচ্ছি, সেটার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করছি।
টগরের নামে বিরুদ্ধে মুগদা থানায় একটি মাদকের মামলা রয়েছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা জানান। সনি হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন সাজা খাটা শেষ করে তিনি মুক্তিপ্রাপ্ত। বর্তমানে অস্ত্র মামলায় নতুনভাবে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। টগর অস্ত্র এনে কাকে দিয়েছেন, সে তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।