শিক্ষার্থী হত্যা তদন্তে অগ্রগতি নেই, পুলিশের ভৃমিকা নিয়ে প্রশ্ন

নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় মোস্তাফিজুর রহমান
নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় মোস্তাফিজুর রহমান  © টিডিসি ফটো

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী নিখোঁজের একসপ্তাহ পর ধান ক্ষেত থেকে কয়েক দফায় বিভিন্ন জায়গা থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। এমন হত্যাকান্ডে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের ১০মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। মামলায় তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং মামলার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশের ভৃমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা মোস্তাফিজুরকে। এই হত্যাকান্ডের ১০মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। 

মামলায় তদন্তের নেই কোনো অগ্রগতি। ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামীরা। এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ‘নাইম’ নামে এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করলেও পরবর্তীতে জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর থেকে তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়াও সন্দেহভাজন কয়েকজনের নাম বললেও পুলিশ শুধু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেয়।

আরও পড়ুন: ৬০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য, যেভাবে পূরণ করবে এনটিআরসিএ

এদিকে পুলিশ বলছে ধীরগতিতে নয়, নিয়ম মেনে তদন্ত চলছে। মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলেই চূড়ান্ত চার্জশিটের দিকে এগিয়ে যাওয়া হবে।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, পত্নীতলা উপজেলার মধইল বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন মোস্তাফিজ। ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর আর ফেরেনি সে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান মেলেনি। 

নিখোঁজের একসপ্তাহ পর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ধান ক্ষেতে হাড় ও নাড়িভুঁড়ি ছড়িয়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। এরপর তারা সেখানে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ধানক্ষেতের ভেতরে একটি গর্ত দেখতে পায়। সেখানের মাটি সরিয়ে দেখে একটি অর্ধগলিত মরদেহ পড়ে আছে। 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার শার্ট ও লুঙ্গি দেখে মোস্তাফিজুরের লাশ শনাক্ত করে পরিবার। পুলিশ খবর পেয়ে কয়েক দফায় বিভিন্ন জায়গা থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে। এমন নির্মম হত্যাকান্ড এলাকাবাসীও মেনে নিতে পারেননি। দ্রুত এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবী জানান তারা।

উপজেলার মসরইল (শংকরপুর) নিহত মোস্তাফিজুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ১০ মাস পরেও মায়ের চোখের পানি থামেনি। ঘরে ঝুলানো ছেলের স্কুলের আইডি কার্ড ও স্কুল ব্যাগ। মাঝে মাঝেই ঘরে গিয়ে ছেলের বাঁধাই করা ছবি আঁকড়ে কাঁদছেন মা। প্রিয় মুখটিকে হারানোর বেদনা কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী।

মোস্তাফিজুর রহমানের মা মোসলেমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- ঘটনার দিন মাগরিবের নামাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু আমার কলিজার টুকরো সন্তানটি আর ফিরেনি। ধান ক্ষেতে টুকরো-টুকরো হাড়সহ অর্ধগলিত দেহ পাওয়া যায়। গায়ের কাপড় ও দেহেরে কিছু অংশ দেখে শনাক্ত করি আমার ছেলে মোস্তাফিজুর। 

পুলিশ ডিএনএ টেস্ট করেও নিশ্চিত হয় যে ওটা আমার সন্তান। কারা মারলো, কি কারণে মারলো এসবের উত্তর আজও অজানা। ছেলেকে হারিয়েছি, বিচারটুকু তো পাব। প্রায় ১০মাস হয়ে যাচ্ছে তবুও আমার সন্তানের হত্যার বিচারের কোন অগ্রগতি নেই।

মোস্তাফিজুরের বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পায়নি। একসপ্তাহ পর ধান ক্ষেতে ছেলের কাপড় দেখে শনাক্ত হই আমার ছেলে। পরের দিন থানায় কয়েক জনের নাম ধরে মামলা করতে গেলে কোন নাম ধরে মামলা দিতে নিষেধ করেন পুলিশ। বলে অজ্ঞাত নাম দিয়ে মামলা করলে পুলিশ তথ্য বের করবে। সেভাবেই মামলা করি। 

এরপর থেকে শুধু পুলিশ যায় আর আসে। সন্দেহমূলক থানায় কয়েকটা নাম দিলে তাদের থানায় ডেকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেয়। দেখতে দেখতে ১০মাস পার হয়ে গেলো তারপরও ছেলে হত্যার কোন বিচার পাচ্ছি না। আল্লাহ জানেই ছেলে হত্যার বিচার কবে পাবো।

মোস্তাফিজুরের বোন জিন্নাতুন বলেন, থানায় মামলা করতে গেলে আমার বাবা কিছুই বলেনি পুলিশ সদস্যদের। তাদের মত করে লেখে অভিযোগ নেয়। এখন মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কোন অভিযোগ নয়, এজন্য এতদিন বিচার পাচ্ছি না। হয়তো কোন অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। ১০ মাস হয়ে গেল আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে। এখনো কোনো মামলার তদন্তের অগ্রগতি নেই। পুলিশ কর্মকর্তারা বদলি হয়ে গেলে আরো বিচার পাওয়া যাবে না। আমরা চায় পুলিশ ভালো করে তদন্ত করলে অবশ্যই খুনি ধরা পড়বে।

স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন আবুল কালাম,  ইউপি সদস্য মনছুর আলীসহ কয়েকজন বলেন, মোস্তাফিজুর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন মসজিদে। খুবই ভালো ছেলে ছিল। এরকম নৃশংস্যভাবে কাউকে হত্যা করা যায় তারা জীবনে দেখিনি। এমন মর্মান্তিক পরিকল্পিত হত্যা মেনে নিতে পারছেন না তারা। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে কারা জড়িত পুলিশ নির্দিষ্ট কাউকে খুঁজেও বের করতে পারেনি। দ্রুত তদন্ত করে আসামিদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার দাবি তাদের।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, আজকে আসামে ধরছে, কালকে ছাড়তেছে এ নিয়ে কানাঘুষা চলছে। এ মামলাটাও যেভাবে হয়েছে ভুয়ামুর উপর চলে গেছে। সঠিক আসামি কে বা কারা সেটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা গ্রামবাসী চাই এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার।

নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, গত ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর মাঠ থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় সেটি মোস্তাফিজুর রহমানের। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হলেও তার বিরুদ্ধে প্রমাণ মেলেনি। বাদীপক্ষ আরও কয়েকজনের নাম বললেও তদন্তে এখন পর্যন্ত তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

তিনি বলেন, আমরা চাই না কোনো নিরপরাধ শাস্তি পাক। তবে দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ ধীরগতিতে নয়, নিয়ম মেনে তদন্ত চলছে। মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলেই চূড়ান্ত চার্জশিটের দিকে এগিয়ে যাওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence