লঞ্চে সংঘর্ষের জেরে ১৩ যাত্রী কারাগারে

যাত্রীবাহী লঞ্চ
যাত্রীবাহী লঞ্চ  © সংগৃহীত

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী ‘এমভি রয়েল ক্রুজ-২’ লঞ্চ ধীরগতিতে চালানোকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের সঙ্গে লঞ্চের কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে লঞ্চে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে এবং পুলিশ ১৩ যাত্রীকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

রবিবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক অভিজিৎ সরকার সুব্রত আটক যাত্রীদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) অশোক হাওলাদার। আটককৃতরা বরগুনার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

শনিবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে লঞ্চে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রবিবার সকালে পুলিশ ১৮ জন যাত্রীকে আটক করে। পরে এমভি রয়েল ক্রুজ-২ লঞ্চের সুপারভাইজার এস এম খাইরুল হাসান শাহীন বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২৫-২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর এজাহারভুক্ত ১৩ জনকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এমভি রয়েল ক্রুজ-২ লঞ্চের সুপারভাইজার শাহীন দাবি করেন, বরিশাল অতিক্রম করার পর নদীর বাঁকে বাঁকে ধীরগতিতে লঞ্চ চালানো হচ্ছিল নিরাপত্তার কারণে। তবে এতে কিছু যাত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে লঞ্চে ভাঙচুর করেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। আতঙ্কে লঞ্চের কর্মী ও আনসার সদস্যরা পালিয়ে যান। এ সময় যাত্রীরা ক্যাশ কাউন্টারে থাকা আড়াই লাখ টাকাসহ বাক্সটি নদীতে ফেলে দেন এবং লঞ্চের কর্মীদের মারধর করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তবে যাত্রীদের অভিযোগ ভিন্ন। তাদের দাবি, লঞ্চের কর্মচারীরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। নির্ধারিত ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চাওয়া হলে যাত্রীরা প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে এবং সংঘর্ষ হয়, যেখানে উভয়পক্ষের অন্তত ২০-২৫ জন আহত হন। পরে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ডেকে এনে যাত্রীদের ধরিয়ে দেয় বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

যাত্রীদের আটকের ঘটনায় স্বজনরা বেতাগী থানার সামনে বিক্ষোভ করেন এবং আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানান। পরে বরগুনা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আটক পারভেজের (২০) মা শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে লঞ্চে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গেছে। ঈদের দিন সে কারাগারে থাকবে—এটা মেনে নিতে পারছি না। মুক্তি না দিলে আমার ঈদ হবে না।’

বেতাগী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘লঞ্চ কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৮ জনকে আটক করা হয়। পরে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৫ জনকে মুচলেকা রেখে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ