ক্লাসে ছাত্রীর হাত চেপে ধরে ‘সফট’ বললেন শিক্ষক

শিক্ষক লোকমান হোসেন
শিক্ষক লোকমান হোসেন

নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও শারীরিক হেনস্থাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে ফেনীর আলাউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাসিম কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার প্রভাষক মো. লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ করলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এরপর গত ৯ অক্টোবর তদন্ত কমিটির তিন সদস্যের স্বাক্ষরিত দেওয়া প্রতিবেদনে লোকমান হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক হেনস্তা, কোচিং ব্যবসা, প্রাইভেট ব্যাচে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠে।

লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, তার কাছে প্রাইভেট পড়াকালে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সাময়িক পরীক্ষায় একাউন্টিং বিষয়ে (২০ মার্ক) পরীক্ষায় ২টি প্রশ্ন এসেছিল। ২টি প্রশ্নই তিনি তার কোটিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদেরকে সমাধান করান। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে করান নি। পরবর্তীতে পরীক্ষায় উক্ত দুটি প্রশ্ন অংক ও সংখ্যা একই রেখে শুধু নাম পরিবর্তন করে দেন।

একই শ্রেনির অন্য এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালে ডিসেম্বর মাসে প্রাইভেট পড়ানোর সময় শিট বিতরণকালে হাত স্পর্শ করে এবং হাত চাপ দিয়ে ধরে। সকলের উপস্থিতিতে তার হাত ‘সফট’ বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।

অন্য এক ছাত্রীর অভিযোগ, ২০২৪ সালে গুটি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে নিকাব পরিধান করে প্রাইভেট পড়তে আসলে তিনি নিকাব খুলে ফ্যানের বাতাস লাগাতে বলেন এবং উচ্চতা কত জানতে চেয়ে হাসি দেন।

এছাড়াও জোরপূর্বক তার লিখা বই কিনতে বলা, কক্সবাজার গিয়ে নারী শিক্ষার্থীকে কল দেওয়া সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, লোকমান হোসেন কলেজ থেকে গত বছরের ৮ নভেম্বর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার বিষয় উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন।

কিন্তু গত ২২ জানুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজকে এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ জারি করলে লোকমান হোসেন কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পদত্যাগ না দেখিয়ে তাকে এমপিওভুক্তীকরণের জন্য আবেদন জানান।

তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন কমিটির সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজের প্রভাষক কাজী সালমা, অভিভাবক প্রতিনিধি অমল চন্দ্র দাস, তদন্ত কমিটির আহবায়ক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহফুজুর রহমান।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, লোকমান হোসেন গত ৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে পদত্যাগ করেছেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অধিক সংখ্যক নারী শিক্ষার্থী কর্তৃক বার বার হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে তার উপস্থাপিত জবাব সন্তোষজনক হয়নি।

আরও বলা হয়, লোকমান হোসেন কোচিং বাণিজ্যের সহিত জড়িত এবং তিনি কলেজে উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে। ফলে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। কলেজের শৃঙ্খলা ও শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মো. লোকমান হোসেনকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি প্রদান করার সুপারিশ করা হল।

প্রতিবেদনে আরও সুপারিশ করা হয়, তদন্তকালে প্রভাষক আবু সায়েদ মো. ফজলুল করিমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদান ও দাবি দাওয়া উত্থাপনের প্রক্রিয়াকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ থাকায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা পর্যন্ত তাকে সকল প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা যেতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে লোকমান হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি এসবের সাথে জড়িত নই। কয়েকটি গ্রুপ এক হয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব কাজ করছে।


সর্বশেষ সংবাদ