ক্লাস ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে বিরোধ, সহপাঠীকে বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা

জুবায়ের হাসান রাফিত
জুবায়ের হাসান রাফিত  © সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুর ঢাকা কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান রাফিত ও রাজিন চৌধুরী। গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা জুবায়ের ছিল তাদের ক্লাসের ক্যাপ্টেন। আর একই ক্লাসের শিক্ষার্থী রাজিন বাবা-মায়ের বেশি আদর পেয়ে বখে যাওয়া সন্তান। আইনজীবী বাবা ও শিক্ষিকা মায়ের দাপট দেখিয়ে শ্রেণিকক্ষ সবসময়ই নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সহপাঠীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জুবায়ের মাসখানেক আগে রাজিনের বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে নালিশ দিলে তার বাবা-মাকে তলব করে তাদের সামনে সতর্ক করা হয় রাজিনকে। আর সেই ক্ষোভ থেকেই জুবায়েরকে বাসায় ডেকে নিয়ে রাজিন কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন জুবায়েরের স্বজনরা।

গত শনিবার কলেজের পাশে স্টাফ কোয়ার্টারের তৃতীয় তলায় রাজিনের বাসা থেকে জুবায়েরের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানে রাজিন ও তার বাবা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।

জুবায়েরের মামা মো. নুরুজ্জামানের অভিযোগ, কলেজের সেই ঘটনার জেরে রাজিন তার ভাগনেকে শনিবার বাসায় ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। উল্লেখ্য, নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে কলেজে পড়ত জুবায়ের। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে।

গতকাল রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে জুবায়েরের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নেওয়া হয়। 

জুবায়েরের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাথায় ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি কাটা জখম রয়েছে। এছাড়া ডান চোখের পাশে কাটা, গলায় তিন ইঞ্চি পরিমাণ কাটা জখম ও বুকের ডান পাশে কাটা জখম রয়েছে।

ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। সুরতহাল প্রতিবেদনটি তৈরি করেন শাহ আলী থানার এসআই মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি প্রাথমিক তদন্ত হিসেবে উল্লেখ করেন, সহপাঠীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে জুবায়েরকে।

মামা মো. নুরুজ্জামান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী জুবায়ের  কলেজের ক্লাসে ক্যাপ্টেন ছিল। এক মাস আগে ক্লাসে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদেরই সহপাঠী রাজিনের মারামারি হয়। এ ঘটনায় রাজিনের বিরোধিতা করে জোবায়ের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিন ক্লাসের মধ্যে জুবায়েরের ওপর চড়াও হয়। তখন জুবায়ের কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ করে। প্রিন্সিপাল রাজিনের বাবা-মাকে তলব করে বাবা-মায়ের সামনে রাজিনকে সতর্ক করে দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্ষোভ থেকেই রাজিন ও তার বাবা মিলে কৌশলে জুবায়েরকে তাদের বাসায় নিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, দুই সহপাঠীর ঝগড়ার জেরে রাজিন জুবায়েরকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি বলেন, যেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাসায় রাজিন ও তার বাবা ছিলেন। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজিন ও তারা বাবা ইকবাল চৌধুরীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।

এদিকে, এই হত্যার ঘটনা কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো দায় নেই বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ মো. আবু মাসুদ। তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষে মারামারির কোনো ঘটনা তার জানা নেই। জুবায়ের হত্যার ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে কী কারণে কে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটা তিনি এখনো নিশ্চিত নন।

 

সর্বশেষ সংবাদ