রিশাদের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে উড়েই গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

রিশাদ হোসেন
রিশাদ হোসেন  © সংগৃহীত

মিরপুরে ব্যাট হাতে গতিই আনতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এতে ম্যাচের দুই বল বাকি থাকতে টেনেটুনে ২০৭ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকেরা। জবাবে ভালো শুরু পেলেও ধসে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনিংয়ে ৫১ রান তুললেও প্রথম পাঁচ উইকেটই তুলে নেন রিশাদ। ক্যারিবীয়দের অর্ধাংশ ফেরান এই লেগ স্পিনার। পরে অবশ্য উইকেট তুলে নেন তানভীর, অধিনায়ক মিরাজ ও মোস্তাফিজ। সবমিলিয়ে রিশাদের ফাইফার ছোঁয়া ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। 

শনিবার (১৮ অক্টোবর) মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯ দশমিক ৪ ওভারে  ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ১৩৩ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

২০৮ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে প্রথম ১০ ওভারে উইকেটশূন্য ছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার তোলেন ৪৫ রান। অবশ্য শুরুটা ছিল বেশ কৃপণ, প্রথম দুই ওভারই মেডেন। এরপরই ছন্দ হারায় স্বাগতিক বোলাররা। তাসকিনের তৃতীয় ওভারে চার–ছক্কায় ১০ রান নেন ব্র্যান্ডন। তানভীর ইসলামের পরের ওভারে অ্যাথানেজ ঝড় তুলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় নেন ১৮ রান।

মোস্তাফিজের করা ষষ্ঠ ওভারে আসে ৫ রান। সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে চাপ ফেরান অধিনায়ক মিরাজ, করেন মেডেন ওভার।

সেই জুটি ভাঙেন রিশাদ। নিজের প্রথম ওভারেই এলবিডব্লু করেন অ্যালিক অ্যাথানেজকে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার। ৩৬ বলে ২৭ রান করে ফেরেন অ্যাথানেজ।

অ্যাথানেজের বিদায়ের পর এসে ব্রেন্ডন কিংকে দুর্দান্ত সঙ্গ দিছিলেন কেসি কার্টি। দ্বিতীয় উইকেটে ২৮ রান যোগ করেছিলেন এই জুটি। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কার্টি—রিশাদের স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে ৩০ বলে ৯ রান করে স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি।

ইনিংসের ২২তম জোড়া উইকেট নেন রিশাদ। একপ্রান্ত আগলে রাখা কিংয়ের পর রাডারফোর্টকেও ফেরান। এর মধ্যে ৬০ বলে ৪৪ রান করে ফেরেন কিং আর রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন রাডারফোর্ট। 

রিশাদের ঘূর্ণিতে ১০০ রানে পৌঁছানোর আগেই পঞ্চম উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা, আর পাঁচটিই রিশাদের ঝুলিতে।

ইনিংসের ২৪তম ওভারের শেষ বলে অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাট ছুঁয়ে চুপচাপ উইকেটকিপার সোহানের গ্লাভসে যায়। আম্পায়ারের আউট সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ নেন চেজ, তবে লাভ হয়নি।

গুড়াকেশ মোতিকে এলবিডব্লু করে ষষ্ঠ উইকেট এনে দেন অধিনায়ক মিরাজ। তার জোরালো আপিলে সাড়া দিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি আম্পায়ারকে।

নিজের শেষ ওভারে এসে প্রথম সাফল্য পান তানভীর। ইনিংসের ৩৪তম ওভারের প্রথম বলেই শাই হোপকে ফেরান। ব্যাট ছুঁয়ে বল গ্লাভসে জমা পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। ১৫ রান করা হোপের বিদায়ে বিপদ বাড়ে সফরকারীদের।

৩৫তম ওভারের প্রথম বলেই রোমারিও শেফার্ডকে ফিরিয়ে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। টাইমিং ভুল করে বল আকাশে তুলে দেন শেফার্ড, সহজ ক্যাচ নেন মিরাজ।

পরের উইকেটও দ্য ফিজের ঝুলিতে। মোস্তাফিজের স্লো বলে বিভ্রান্ত হয়ে সহজ ক্যাচ তুলে বিদায় নেন গ্রিভস, ১২ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। শেষদিকে কেবল ব্যবধান কমান সিলস ও পিয়েরে। শেষ উইকেটও নেন রিশাদ। এটি ষষ্ঠ শিকার এই লেগির।

এর আগে,  ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারিসহ ৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই শুরু বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। দ্বিতীয় ওভারেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন সাইফ হাসান। ইনফর্ম এই ওপেনার ৬ বল খেলে ৩ রানের বেশি করতে পারেননি।

পরের ওভারেই ফিরেছেন সৌম্য সরকারও। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন জেইডেন সিলস। সেখানে জায়গায় দাঁড়িয়ে কভার পয়েন্টের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য। টাইমিং না হওয়ায় ব‍্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রোস্টন চেজের হাতে ধরা পড়েন। এই ওপেনারের ব্যাট থেকে এক চারে ৬ বলে ৪ রান আসে।

৮ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ৭১ রান। ৩২ রান করে শান্ত ফিরলে ভাঙে সেই জুটি।

শান্ত থিতু হয়ে ফিরলেও ব্যক্তিগত ফিফটি পেয়েছেন হৃদয়। এই মাইলফলক ছুঁতে ৮৭ বল খেলেন তিনি। কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও উইকেট বিবেচনায় হৃদয়ের এই ইনিংস কার্যকরী ছিল। ফিফটির পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সবমিলিয়ে ৯০ বলে করেন ৫১ রান।

হৃদয়ের পর দায়িত্ব নিয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেন অঙ্কন। অভিষিক্ত এই উইকেটকিপার ব্যাটার ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে আউট হন। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে রোস্টন চেইজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। তার আগে ৭৬ বলে করেন ৪৬ রান।

অঙ্কন ফেরার পর দুইশ স্পর্শ করা নিয়েও শঙ্কা জেগেছিল। তবে শেষদিকে রীতিমতো ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন। এক চার আর দুই ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রান করেন তিনি। তাতে দুই শ ছুঁয় বাংলাদেশ।


সর্বশেষ সংবাদ