চোখের সামনে মরেছে অনেকে, ভবনে পড়ে প্লেন—উত্তরা ট্র্যাজেডির প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীর বর্ণনা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৩ PM , আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:২০ AM
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি কতটা ভয়াবহ ছিল, তা প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থীর আবেগঘন বর্ণনায় উঠে এসেছে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রেরণা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান। তবে একটার দিকে আকাশে একটি বিমানের ইঞ্জিনে ধোঁয়া দেখতে পান।
তার ভাষ্যমতে, আমাদের দুপুর ১টার দিকে ছুটি হলেও সাধারণত ১০ মিনিট পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই, আমরা ক্লাসেই ছিলাম। কিন্তু দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে বের হয়ে গিয়েছিলাম আমি। তবে বের হয়ে যাওয়ার পর একটার দিকে হুট করে আকাশে দেখি একটি প্লেনের ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এরপর আমরা যে ভবনে ছিলাম, হায়দার আলী ভবনে প্লেনটি ধস করে পড়ছে। পরে জোরে একটা বিস্কোরণ; এটার মানে আমাদের চোখের সামনে অনেকগুলো লাশ যাচ্ছে। লাশ না আসলে পুরে গেছে, হাত-পা ছিঁড়ে গেছে এমন কিছু।
তিনি আরও যোগ করেন, তাদের নিয়ে যাচ্ছিল, ওইখানেই চেঁচামেচি করছিলাম আমরা। সবাই বলছে যে ঠিক আছে ঠিক আছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে এখানে সবার অবস্থা খারাপ। সবাই বলছে মাঠে পরছে, মাঠে পরছে। কিন্তু আমরা নিজের চোখে দেখছি, ভবনের ওপর পড়ছে।
অষ্টম শ্রেণীপড়ুয়া এই শিক্ষার্থী জানান, দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের পাঠানো হয়, কিন্তু জাতীয় বার্ন ইউনিট, ঢামেক ও কুর্মিটোলার মত হাসপাতালগুলো জায়গা সংকুলান করতে পারছিল না। অনেককে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।
প্রেরণার ভাষ্যমতে, ওইখানে সেনাবাহিনীরা ছিল। তারা সবাই দৌড়ে এসেছে, সবাইকে বের করেছে। অনেকে অল্প আঘাত পেয়েছে। অনেকেই বেশি রকমের ইনজুরড। আমাদের ওইখান থেকে সরিয়ে দিচ্ছে, দেখতে দেবে না কিছুই। এরপর আমাদের ঢামেক, বাংলাদেশ মেডিকেল এবং কুর্মিটোলা- এই তিনটার কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু ওই তিনটাই নাকি জায়গা নিচ্ছে না। মানুষে ভরে গেছে, এই টাইপের একটা কথা বলে সবাইকে বের করে দিচ্ছে। এরপর এই হাসপাতালে আনা হয়েছে।
প্রেরণার ভাষ্য অনুযায়ী, ভবনে যারা ছিল তাদের অধিকাংশই ছিল ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থী।
বিস্ফোরণের সময় প্রসঙ্গে এই শিক্ষার্থী বলেন, একটা ৬ মিনিটের দিকে প্লেনটা পড়েছে। আমাদের বের করবে ১টা ১০ মিনিটে বলছে। তবে নিচে থাকা বাংলা ভার্সনের অনেকেই বের হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইংরেজি ভার্সনের অনেকে ছিল। ৭০ থেকে ৮০ জনের মত সবমিলিয়ে।
ভবনটির পূর্বাবস্থা ব্যাখ্যা করে প্রেরণা যোগ করেন, এটা আগে হোস্টেল ছিল। তাই জানালা কাঁটা। ফলে, জানালা খুলে অনেকে বের হয়ে যেতে পারছে। অনেকে পারে নাই। মেয়েদের অনেকে বের হয়ে যেতে পারছে। ফায়ার ফাইটাররা অনেককে বের করতে পারছে। বিশেষ করে, সেনাবাহিনীরা। ছাত্রদের তাড়াতাড়ি বের করছে সেনাবাহিনী। নিচ থেকে ভবনের গেট ধাক্কা দিয়ে ভেঙে দিয়েছে। যেন বের হয়ে যেতে পারে, তারপরে ওইখান থেকে বের হয়ে গেছে।
সে সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করে এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি দেখেছি, অধিকাংশের হাত-পা একদম পুরে গেছে। চামড়া পুরে গেছে, স্কুল-ড্রেস ছিঁড়ে গেছে। শরীর রক্তাক্ত। চেহেরা একদম পুরে গেছে; বুঝা যাচ্ছিল না কারা যাচ্ছে, কোন শিক্ষার্থী। ওইখান থেকে অনেকেই মারা গেছে নিশ্চিত। কারণ, চেয়ারে যেভাবে বসে ছিল, আমরা দেখেছি, ওইভাবেই পরে আচ্ছে এবং হাত-পা একদম কালো। ফ্রিজ ওরা, ওইটা দেখে বুঝা গেছে, ওরা আর নেই।
তিনি আরও বলেন, অনেকে বলেছে, মরে নাই মরে নাই। কিন্তু আমরা নিজে দেখছি, মানুষ সাহায্যের জন্য যাচ্ছে। এরপরও ওরা একদম শক্ত হয়ে আছে। ফ্রিজ হয়ে গেছে। ফলে, অনেকের ধারণা মারা গেছে তারা। প্লেনটা ভবনে পড়ছে, মাঠে পড়ে নাই। মাঠে পড়ার বিষয়টি ফেইক। ওপর থেকে পড়েছে।