এবার শীত নামবে কবে, সারাদেশে ঠান্ডার দাপট কেমন থাকবে?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৩ PM , আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫২ PM
বাংলা পঞ্জিকার পাতায় অগ্রহায়ন আসতে বাকি আরো কয়েকদিন। কার্তিকের এই শেষ লগ্নে একটু একটু করে শীতের আমেজ মিলছে প্রকৃতিতে।
সারাদেশের কোথাও কোথাও দেখা মিলছে হালকা কুয়াশা, সাত সকালে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে- এই যেন জনপদে নেমেছে শীত।
মধ্য হেমন্তের প্রকৃতিতে শেষ রাতে হালকা শীতের অনূভুতি হলেও সকাল থেকে মধ্যরাত গরমের অস্বস্তি যেন কাঁটছে না।
মাঠের কৃষক কিংবা শ্রমজীবী কিংবা কর্মজীবী মানুষের মনে প্রশ্ন- কবে আসবে শীত, কিংবা এবার প্রকৃতিতেও বা কতটা শীত নামবে।
শনিবার বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমবে, ফলে গরমের অনুভূতি কিছুটা কমতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই সময়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যও নির্ধারণ করে দেয় শীতের গতি প্রকৃতি।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এখনো শীতকাল শুরু না হলেও শেষরাত বা ভোরের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে শুরু করছে। যখন দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি বা তারও নিচে নামতে শুরু করে তখনই শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পায়। তখন সাধারণ একে আমরা শীতকাল বলে থাকি"।
তার মতে, বাংলাদেশে সাধারণত মধ্য নভেম্বর থেকেই দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক পর্যায়ে একটু একটু করে শীত নামতে শুরু করে।
সে হিসেবে, আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকৃতিতে শীতের আমেজ পাওয়া যাবে বলেও ধারণা দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
দেশের উত্তর কিংবা পশ্চিমাঞ্চলের শীতের অনুভূতি একটু একটু বাড়লেও রাজধানী ঢাকায় এখনো গরমের তীব্রতা দেখা যাচ্ছে।
এ ধরনের আবহাওয়ায় জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই থেকে মুক্তি পেতে বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
কখন শীত অনুভূত হয়?
আবহাওয়াবিদরা বলেন, সাধারণত বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী কার্তিক মাসের শেষ দিক থেকে শীতের আমেজ টের পাওয়া যেতে শুরু করে দেশের উত্তর-কিংবা পশ্চিমাঞ্চলে।
এছাড়া জলাশয় কিংবা ঘন বন জঙ্গল এলাকায় শীত অনুভূত হতে শুরু করে নভেম্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকেই।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই শীত অনুভূত হলেই তা শীতকালের শুরু নয়। তারা বলছেন, সাধারণত রাতের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রির নিচে নেমে আসলেই আমরা তাকে শীত বা শীতকাল বলে থাকি।
শীতকাল বোঝার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়া।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক উদাহরণ দিয়ে বলেন, "ধরেন দিনের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি আর রাতের তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি বা তার কম হয় তখন বোঝা যাবে শীত চলে এসেছে। অর্থাৎ দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রিরও বেশি হয় সেটি প্রকৃতিতে শীতের বার্তা দেয়"।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি।
অর্থাৎ ব্যবধান কমপক্ষে ১০ ডিগ্রি না হওয়ার কারণে ঢাকায় শীতের অনুভূতি তেমন একটা পাওয়া যায়নি।
ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে উত্তরের জেলা নীলফামারীর সৈয়দপুরে। শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৪ ডিগ্রি। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক দুই ডিগ্রি।
অর্থাৎ সৈয়দপুরের তাপমাত্রার এই পার্থক্য বার্তা দিচ্ছে যে, দিন ও রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যের এই তারতম্যের কারণে এখনই সেখানে এরই মধ্যে শীত নেমেছে।
সারাদেশে শীত নামবে কবে?
উত্তরের জেলাগুলোর অনেকগুলোতে দিন ও রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চিত্র অনেকটা কাছাকাছি। যে সময়ে সৈয়দপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ডিগ্রি, ঠিক একই সময় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি।
সে সময় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি।
শনিবার আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে দেখা গেছে বিগত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সর্ব উত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া। তেতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, "সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই প্রান্তিক পর্যায়ে বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল কিংবা পঞ্চগড় তেতুলিয়া, রাজারহাট কুড়িগ্রাম কিংবা যশোর কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা সাতক্ষীরা এসব জায়গায় শীতের অনুভূতি শুরু হয়"।
ওইসব এলাকায় দিন রাতের পার্থক্যের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে শীতের আগমন স্পষ্ট হলেও ঢাকায় এখনো সেই অনুভূতি তৈরি হয়নি।
ঢাকা শহরের বেশিরভাগ বাসা বাড়িতেই রাতে ফ্যান বা এসি চালিয়ে গরমের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মধ্য নভেম্বর অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শীতের আগমন টের পাওয়া যাবে, তবে ঢাকায় সেটি আসতে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে।
তবে, যদি আগামী কয়েকদিনে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায় তখন কিছুটা ঠাণ্ডা পড়তে পারে। এছাড়াও সূর্যের কিরণকাল যদি কমে যায় অর্থাৎ দিন ছোট হতে থাকে তখনও আস্তে আস্তে শীত বাড়বে বলেও জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
তবে সর্বশেষ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় দিনের তাপমাত্রা কমবে, ফলে কমবে গরমের অনুভূতিও।
উনো বর্ষা, দুনো শীত?
বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে আষাঢ়-শ্রাবণ, অর্থাৎ মধ্য জুন থেকে মধ্য অগাস্ট পর্যন্ত বর্ষাকাল চলার কথা। যদিও বর্ষার প্রবণতা থাকে সাধারণত অক্টোবর পর্যন্ত।
সাধারণভাবে বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর সেভাবে বৃষ্টিপাত হয়নি।
কিন্তু এবছর বাংলাদেশে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। এমনকি নভেম্বরের শুরুতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর অক্টোবরেও ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টি হয়েছে মূলত বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে।
বাংলাদেশের একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে 'উনো বর্ষা, দুনো শীত'। অর্থাৎ যে বছর বর্ষায় বৃষ্টি কম হয়, সে বছর শীতকালে শীত বেশি পড়ে।
এই প্রবাদটি কতটা সত্য? আবহাওয়াবিদ মি. মল্লিকের কাছে সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল।
জবাবে মি. মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, "উনো বা কম বর্ষা হলে রাতের বেলায় তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন রাতের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়। যে বছর বেশি বর্ষা হয় সে বছর শীত কম পড়ে কারণ তখন মাটিতে আদ্রতা বেশি থাকে। মাটিতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে"।
তারমতে, এই প্রবাদটি এমনি এমনি আসেনি। গ্রামীণ বাংলায় স্থানীয় পর্যায়ের মানুষরা নানা দিক বিবেচনায় রেখে যে প্রবাদগুলো তুলেছেন তার সাথে যে বাস্তবতার মিল রয়েছে সেটিকে সত্য মানছেন আবহাওয়াবিদরাও।
এদিকে, যেহেতু একটু একটু করে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে প্রান্তিক বা ঢাকার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে, ফলে এ সময়ে ঋতুবদল সংক্রান্ত অসুস্থতা এড়াতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফরহাদুল ইসলাম বিবিসিকে বলছিলেন, বর্তমানে তার কাছে অনেক জ্বর গা ব্যথা নিয়ে অনেক রোগী আসছেন, যাদের বেশিরভাগই জ্বর, চিকনগুনিয়া কিংবা ডেঙ্গু আক্রান্ত।
এই মৌসুমে চিকনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি বলেও মনে করেন তিনি।
তবে, শীত বা ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা নভেম্বরে খুব একটা দেখা না গেলেও ডিসেম্বর জানুয়ারিতে ঠান্ডা বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত অনেকই চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালে।
ডা. ইসলাম বলছিলেন, আরেকটু ঠান্ডা বাড়লে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ে। যদিও এখনো সেই ধরনের রোগী খুব একটা আসছেন না।
তবে ঠান্ডা বাড়ার আগেই ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাকসিনসহ আগাম প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে পারেন বলেও ধারণা দিচ্ছেন এই চিকিৎসক।
সুত্র: বিবিসি বাংলা